ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় সৃষ্টি মীনাবাজার নাট্যোৎসব উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২ নভেম্বর ২০১৭

শিল্পকলায় সৃষ্টি মীনাবাজার নাট্যোৎসব উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজ্যটির নাম তাসের দেশ। যে রাজ্যের প্রজারা পুতুলের মতো শাসকের হাতের ক্রিড়নক। রাজা ও পরিষদদের রবীন্দ্রনাথ অনেকটা ভাঁড়ের অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। স্বৈরশাসকেরা এক ধরনের ভাঁড়ই। অত্যন্ত রসালোভাবে বিধৃত হয়েছে এ নৃত্যনাট্যটি। নাটকের মূল চরিত্র রাজপুত্র সকল অন্যায় ও শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে বরাভয় হওয়ার মন্ত্র দেন। রাজপুত্রের কিছু গানেই এই সাহসী মন্ত্র উচ্চারিত। রাজগৃহে বন্দী বেপরোয়া রাজপুত্র বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর পথে সওদাগর পুত্রের সঙ্গে। নাচে, গানে ও কথায় ভরপুর এই নাটকের অন্তর্নিহিত বক্তব্য হচ্ছে গভীর জীবনবোধের নির্যাস, যারসার কথা হলো স্বাধীনতা। সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার আয়োজিত ‘সৃষ্টি-মীনাবাজার নৃত্যনাট্যোৎসব ২০১৭’র উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী এ নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশ’। রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় চার দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন নৃত্যাঞ্চলের পরিচালক শামীম আরা নীপা ও সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের পরিচালক আনিসুল ইসলাম হিরু। উৎসব সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এর আগে ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’ গানের সঙ্গে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের নৃত্যশিল্পীরা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় ‘তাসের দেশ’। পরিচালনা করেছেন নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহাব। তার নৃত্য পরিচালনায় রবীন্দ্র-নাচের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পুরুলিয়ার ছৌনাচ, মনিপুরী এবং পাশ্চাত্যের সমসাময়িক নৃত্য আঙ্গিক। তাসের দেশের কাহিনীতে, রোমাঞ্চপ্রিয় রাজকুমারের মনে সাধ জাগে ভ্রমণের। সঙ্গী বলতে একজন, যাত্রা হয় শুরু অজানার উদ্দেশ্যে। নানা পথ পেরিয়ে রাজকুমার সঙ্গী নিয়ে হাজির হন তাসের দেশে। যেখানকার তাসের রয়েছে প্রাণ, মুখে রয়েছে ভাষা। তবে নিয়মের তারা দারুণ অনুসারী। এই নিয়মে চিরধরায় রাজকুমার। তাসের রাজ্যে ছড়িয়ে দেয় নতুন সুর। রাজা নাখোশ হলেও, নিয়ম ভাঙ্গার এ সুরে অন্য প্রজাদের সঙ্গে গা ভাসায় রাজ্যের রানী। এভাবেই ভেঙ্গে পড়ে তাসের রাজ্যের নিয়ম মানার রীতি। এই নৃত্যনাট্যের গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন রুপঙ্কর বাগচী, শায়ান চৌধুরী, আনুশেহ আনাদিল ও লোপামুদ্রা মিত্র। নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন সাব্বির আহমেদ খান বিজু, অমিত চৌধুরী, ওয়ার্দা রিহাব, শাম্মী আখতার, এম আর ওয়াসিফ, লুবনা মরিয়ম প্রমুখ। আগামী ৪ নবেম্বর পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমিতে চলবে এই আয়োজন। আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে থাকছে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম উপাখ্যান নিয়ে শেখ হাফিজুর রহমান রচিত ‘রাই কৃষ্ণ পদাবলী’। নৃত্যনাট্যটি পরিবেশন করবে নৃত্যাঞ্চল। ধানম-িতে শুরু হয়েছে ‘বিদ্যাপীঠ বইমেলা’ ॥ ধানম-ির জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠে শুরু হয়েছে ‘বিদ্যাপীঠ বইমেলা’। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পাঁচদিনব্যাপী এ বইমেলায় বিশটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের গ্রন্থপ্রেম ও জ্ঞানসাধনায় বর্তমান প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এই বইমেলার আয়োজন করেছে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। ইউপিএল, প্রথমা, বেঙ্গল, এ্যাডর্ন পাবলিকেশনসহ দেশের প্রায় বিশটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। বুধবার বিকেলে বইমেলার উদ্বোধন করেন গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত এবং জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ বলেন, বই ছাড়া হয়ত টিকে থাকা যায়, কিন্তু জ্ঞানী, মননশীল ও স্বাধীন চিন্তার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ইন্টারনেটে প্রাপ্ততথ্য অনেকটা অন্ধের হাতি দেখার মতো আংশিক এবং খ-িত। মফিদুল হক বলেন, ইন্টারনেটে কিংবা অন্য ই-মাধ্যম তথ্য দিতে পারে, প্রজ্ঞা নয়। সুতরাং বই টিকে থাকবে, তবে বইয়ের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আবুল হাসনাত বলেন, বই ও জ্ঞানচর্চার সংস্কৃতি জারি রাখতে প্রকাশকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ॥ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয় বুধবার। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ভবনের শেখ রাসেল মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় বুধবার সকালে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল বিসিটিআইয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মিত বাছাইকৃত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। কবি বিমল গুহ’র জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন আজ আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে দেশবরেণ্য কবি বিমল গুহ’র ৬৫তম জয়ন্তী। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কবি হায়াৎ মামুদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি শ্যামল কান্তি দাশ, অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী ও কবি কামাল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর তুলির আঁচড়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সূচিত হবে। এ আয়োজনে কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করবেন স্বনামধন্য বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপা চক্রবর্তী, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, রেজীনা ওয়ালী লীনা ও ঋতুরাজ ফিরোজ প্রমুখ। কবি বিমল গুহ ২৭ অক্টোবর ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের কবিতায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন কবি বিমল গুহ তাদের অন্যতম। এ পর্যন্ত তার ১১টি কবিতাগ্রন্থ, সাতটি কিশোর কবিতাগ্রন্থসহ মোট ২৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো : ‘অহংকার তোমার শব্দ,’ ‘সাঁকো পার হলে খোলাপথ’, ‘স্বপ্নে জ্বলে শর্তহীন ভোর’, ‘নষ্ট মানুষ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘প্রতিবাদী শব্দের মিছিল’, ‘বিবরের গান’, ‘প্রত্যেকেই পৃথক বিপ্লবী’, ‘নির্বাচিত কবিতা’, ‘কবিতাসংগ্রহ’ প্রভৃতি। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং যুক্তরাজ্যের নেপিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে প্রিন্টিং এ্যান্ড পাবলিশিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। পেশাসূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক ও কলেজ পরিদর্শক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং এ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্যে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পরিষদ কর্তৃক জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ কবি পুরস্কার, নির্ণয় শিল্পীগোষ্ঠী স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব সম্মাননা, বঙ্গবন্ধু স্মারক পুরস্কার, সূফী মোতাহের হোসেন সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।
×