ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজিজার অশ্লীল ভিডিও নেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় রোমান

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২ নভেম্বর ২০১৭

আজিজার অশ্লীল ভিডিও নেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় রোমান

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ নরসিংদীতে কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আজিজার কথিত প্রেমিক রোমানসহ ৩ যুবক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পুলিশ জানায়, আজিজার অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় প্রেমিক রোমান ও তার বন্ধুরা। তবে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিউটি বেগম ও তার মা সানোয়ারা বেগমের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার শিবপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম উল্লিখিত আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওয়ায়েজ আল করুনী-এর আদালতে আবেদন জানায়। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বিপিএম বুধবার সকালে তার সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিউটি বেগম ও তমুজা বেগম এবং এজাহার বহির্ভুত বিউটির মা সানোয়ারা বেগম ছাড়াও আরও ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ আজিজার প্রেমিক রোমান এবং তার বন্ধু রেজাউল ও সুজন। এরা জানিয়েছে আজিজার বিয়ে ঠিক করেছে তার পিতা আবদুছ ছাত্তার। এতে তার সম্মতি না থাকায় শুকবার সকালে সে তার ভাইয়ের পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা একটি ফোন, চাচির চুরি হওয়া মোবাইলসহ ৩টি মোবাইল ফোন একটি স্বর্ণের গহনা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে নরসিংদী শহরে তার প্রেমিক রোমানের কাছে চলে আসে। এ সময় রোমান তার বন্ধু রেজাউল ও সুজনকে নিয়ে শহরের সøুইস গেট এলাকায় নিয়ে যায় আজিজাকে। সেখানে আজিজা ৩ মাসের জন্য একটি বাসা ভাড়া রেখে বসবাস করতে চায়। এ সময় সুজন তাকে জিজ্ঞাসা করে বাসাভাড়া করতে হলে টাকা লাগবে। তখন সে জানায়, আমার কাছে ৫ হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল ফোন ও একটি গহনা আছে। এর পরেই সুজনের ফুফু পেয়ারা বেগমের একটি রুম কিছুক্ষণের জন্য এরা ২শ’ টাকায় ভাড়া ঠিক করে সবাইকে নিয়ে ওই রুমে যায়। সেখানে রোমানের অপর বন্ধু রিমাজকে ফোন করে ডেকে আনা হয়। পরিকল্পনা মতে রোমান আজিজার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিলে সুজন মোবাইল ফোনে তা ভিডিও ধারণ করে এবং আজিজার পিতাকে ফোন করে জানায় আজিজাকে একটি ছেলের সঙ্গে আটক করা হয়েছে। তাকে নিতে হলে ১ লাখ টাকা লাগবে নইলে আজিজা ও তার প্রেমিকের খোলামেলা ভিডিও নেটে ছেড়ে দেয়া হবে। এ খবর শুনে আজিজার খালা ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় তাদের ২০ হাজার টাকা দিতে সম্মতি প্রকাশ করে। এ সময় রোমানের বন্ধু সুজন জানায় কিছুক্ষণের মধ্যে আজিজাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে আজিজার কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও গহনা কেড়ে নেয় প্রেমিক রোমান তার বন্ধু সজিব ও রিমাজ। পরে রেজাউল ও সুজন রাত অনুমানিক ৮টায় আজিজাকে একটি ইজিবাইকে উঠিয়ে দেয়। যথারীতি আজিজা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে স্থানীয় কুটিবাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের দোকান থেকে ৭৫ টাকায় এক লিটার কেরোসিন ক্রয় করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। কিছুক্ষণ পরে বাড়ি সংলগ্ন রবি ফরাজির কাঁঠালবাগানে দগ্ধ অবস্থায় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন আজিজাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে সে মারা যায়। এ বিষয়ে ছোট ভাইয়ের বউ বিউটি বেগমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আজিজার পিতা আবদুছ ছাত্তার। পুলিশ এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি তমুজাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে এবং অপর আসামি বিউটি বেগম ও তার মা সানোয়ারা বেগমকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পুলিশ সুপার আরও জানায়, আজিজার প্রেমিক এজাহার বহির্ভুত আসামি রোমান, তার বন্ধু সুজন ও রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়। এরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রধান করে। তবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাবে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি। বাদীর দাবি অনুযায়ী এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকা-টি সঠিক প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে মামলার বাদী আবদুছ ছাত্তার। অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, আজিজা পালিয়ে প্রেমিকের কাছে চলে যাওয়ায় এবং ভাইয়ের পকেট থেকে টাকা ও মোবাইল এবং চাচির মোবাইল চুরির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আজিজার পিতা ছাত্তারই ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া ছাত্তার লোক হিসেবে ভাল নয়। সে ডাকাতি ও হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন সাজা খেটেছে এমন দাবি এখন এলাকার অনেকের।
×