ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শিবিরে সরকারের সুষ্ঠু ত্রাণ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা টিআইবির

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা শিবিরে সরকারের সুষ্ঠু ত্রাণ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা টিআইবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চলমান সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে ত্রাণকেন্দ্রিক কূটনীতি নয় সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী নয় অতি দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা প্রদানের দাবি জানান তিনি। বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। টিআইবি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাসে রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর মাঠপর্যায়ে গিয়ে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানজনিত সমস্যা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ক একটি সমীক্ষা চালায়। সংবাদ সম্মেলনে তার পর্যালোচনা ও সমাধানের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়েরসহ সংস্থাটির উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ড. ইফতেখার বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সরকার বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মানবিকতার প্রশংসা করছেন বিশ্ব নেতারা। তবে শুধু ত্রাণকেন্দ্রিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা প্রশংসনীয় ও ইতিবাচক। এজন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও দেশী বিদেশী এনজিও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি মিয়ানমারের এবং এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই কূটনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই ইস্যু নিয়ে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে যে ভূমিকা পালন করেছে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তা ছাড়া কূটনৈতিক চাপে এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সামর্থ্য রাখে। ভারত ও চীন এখনও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মিয়ানমারের কাছে জিম্মি হয়ে রোহিঙ্গাদের বিপরীতে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত কোন শক্তিশালী দেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে শক্ত কোন চাপ দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার কথা জানা সত্ত্বেও জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সম্প্রদায় দ্বিমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু দীর্ঘমেয়াদী হলে জঙ্গী ঝুঁকি বাড়াবে। এ সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগসাজশের ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা হলে ক্যাম্পগুলোতে নানাবিধ অপরাধ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে, যা ইতোমধ্যেই লক্ষণীয়। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক নানাবিধ অপরাধে রোহিঙ্গাদের জড়িত করার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে বলে জানান। টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, স্মরণকালের ভয়াবহতম অনুপ্রবেশের ঘটনায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত ৩ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা হলে ক্যাম্পগুলোতে নানা অপরাধ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে, যা ইতোমধ্যেই লক্ষণীয়। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের জড়িত করার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের সীমানা অতিক্রম, বর্তমান অবস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি চিহ্নিত করা হয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও সমাধানের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়।
×