ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোন কারণে ক্ষমতার পালাবদল হলে দেশে অন্ধকার নেমে আসবে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২ নভেম্বর ২০১৭

কোন কারণে ক্ষমতার পালাবদল হলে দেশে অন্ধকার নেমে আসবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং জাতীয় চার নেতার সাহস-ত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি করার ওপর গুরুত্বারোপ করলেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী। তাদের কয়েকজন প্রায় অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বরের খুনীচক্র কিংবা তাদের দোসররা এখনও সক্রিয়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আগামী বছরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তারা বলেছেন, কোন কারণে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে দেশে আবার অন্ধকার নেমে আসবে, সকল অর্জন উবে যাবে। তাই নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। যারা খুনীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না। আলোচনা যদি করতেই হয়, আলোচনা হবে জনগণের সঙ্গে। বুধবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। শহীদ এম মনসুর আলী স্মৃতি সংসদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। শহীদ এম মনসুর আলীর পুত্র আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি জেপির সভাপতি ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, মনসুর আলীর দৌহিত্র ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, জেল হত্যার মতো জঘন্য হত্যাকা- খুব কমই হয়েছে। সাধারণত মনে করা হয়-জেলখানা সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু আমাদের এই দেশ এমনই দুর্ভাগা দেশ যে, জেলের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একটি দুষ্টচক্র এই কাজটি করেছে। আমরা সারা জাতি একটা ভুল করেছি, সেটা হলো- ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বরের হত্যাকা-ের পর সামরিক কুচক্রের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াইনি। যারা দেশের এত বিরাট ক্ষতি সাধন করল, আমাদের নেতৃত্বশূন্য করল-আমরা তাদের রোখার চেষ্টা করিনি। সোচ্চার প্রতিবাদ করতে পারিনি। তিনি বলেন, এই জেল হত্যাকা- থেকে আজ আমাদের শিক্ষা হওয়া উচিত। এখন এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করব। সংবিধানে রয়েছে, কেউ এই ধরনের ষড়যন্ত্র করলে শাস্তি মৃত্যুদ-। আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে- আর কোন ভ্রান্তি ও অপকর্ম সহ্য করব না। আর কোন সুযোগসন্ধানীকেও সহ্য করব না। যখনই কোন সুযোগসন্ধানী এই ধরনের কোন প্রচেষ্টা নেবে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করব, সংবিধান অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থাও করব। এ ব্যাপারে আমরা বদ্ধমূল বিশ্বাস লালন করলে চলমান প্রগতি কেউ রোধ করতে পারবে না বর্ষীয়ান রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ জেলখানায় নিহত চার নেতাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট আমাদের জন্য বড় সমস্যা। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া বিদেশ থেকে ফিরে সেখানে গেলেন। তিনি সেখানে বক্তৃতায় বললেন-প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ঠিকমত ত্রাণ দেয়া হচ্ছে না, ইত্যাদি। আসলে এরা ছোট মনের মানুষ, প্রশংসা করতে জানে না। যেখানে সারাবিশ্ব প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেখানে বেগম জিয়ার পছন্দ হয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ। ইউনেস্কো এই ভাষণকে আন্তর্জাতিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি হিয়েছে। এতে প্রমাণিত হলো- সত্য চাপা থাকে না। ১৮ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু গোটা জাতিকে এক মোহনায় নিয়ে এসেছিলেন, একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। তিনি বলেন, ইউনেস্কো যেদিন ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিল ঠিক সেদিন পাকিস্তান হাইকমিশন তাদের ওয়েবসাইটে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দেখাচ্ছে। এ দেশের রাজনীতিকে যদি কেউ ধ্বংস করে থাকে সে হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। আর পরবর্তীতে খুনীদের হাতে আমাদের জাতীয় পতাকা তুলে দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, চার নেতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেননি। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার রায়ের পর ড. কামাল হোসেন একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন-আমাদের সংবিধান শুরু হয়েছিল ‘আমরা’ দিয়ে। জবাবে আমি বলেছিলাম- ‘আমি’ দিয়েই বঙ্গবন্ধু এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সংবিধানের বাইরে যাবার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচন হবে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী হবে। শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্ত করতে পারবেন, কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করতে পারবেন না। খুনীদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা করব আমরা? যারা খুনীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না। আলোচনা যদি করতেই হয়, আলোচনা হবে জনগণের সঙ্গে। তাই আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কোন লাভ নেই। তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতা জীবনে-মরণে একসঙ্গে ছিলেন। নেতা ও জাতির জন্য জেনেশুনে চারনেতা অকাতরে জীবন দিয়েছেন। এটা বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত। এখনকার রাজনীতিতে লোভ আছে, আছে সাহসের অভাব। চারনেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সহচর। এই চার নেতা দুটি অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রথম পরীক্ষাটি ছিল-বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে দেশ স্বাধীন করা। এই চারজনের সঙ্গে বেইমান ও খুনী মোশতাকও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত পরিকল্পনা এই খুনী মোশতাক জানত, আসলে সে ছিল পাকিস্তানের অনুচর। তিনি বলেন, আজ অনেক খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন মহানায়ক। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের নির্বাচন সামনে, পাকিস্তান অতীতে মতো আবারও ঘোট পাকানোর ও উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা যেন সেই উস্কানিতে পা না দিই। নিজেরা যেন আত্মতুষ্টিতে না ভুগি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে কলঙ্ক মোচন করেছি-এই আত্মতুষ্টি নিয়ে বসে থাকলে হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির পর জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে আমরা নির্বিষ করতে পেরেছি কি-না, সেই প্রশ্ন করতে হবে। আমরা সেটা করতে পারিনি। এখন ফলটা দাঁড়িয়েছে, বিএনপির মাধ্যমে জামায়াত আগামী নির্বাচনে ৭০টি আসন চায়, তারা নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও যেতে চায়। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যদি ক্ষমতার ঘটি উল্টে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য চরম দুর্দিন নেমে আসবে। সব অর্জন এক নিমিষে উবে যাবে। কোনক্রমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা যেমন রাজনীতি করতেন, তখনকার মতো রাজনীতি এখন আছে কি-না, কিংবা আমরা যারা রাজনীতি করছি বা করতে চাই তারা সেই রাজনীতি করছি কি-না তা মনে রাখা দরকার। কারণ রাজনীতি আজ অনেকটাই পার্থিব হয়ে গেছে। দেশে আদর্শবান রাজনীতিক নেই, সেটা বলব না। কিন্তু রাজনীতি আজ আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, খুনীচক্র এখনও সক্রিয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক সময় বলে থাকেন- আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আপনি কখনও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না, আপনি আমাদের হৃদয়ে আছেন। কিন্তু আপনার নিরাপত্তাটা আগে। বিমানের আত্মঘাতী পাইলট ধরা হয়েছে, কী ভয়াবহ চিন্তার বিষয়! এ কারণে বলছি, আমাদের সাবধান থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘নাগিনীরা চারদিকে ছাড়িয়েছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। আমার ভয় হয়, আত্মঘাতীরা কোন অঘটন ঘটায় কি না।
×