ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শীত শীত হেমন্ত

শিশির পড়িতেছিল ধীরে ধীরে খসে...

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২ নভেম্বর ২০১৭

শিশির পড়িতেছিল ধীরে ধীরে খসে...

মোরসালিন মিজান ॥ মঙ্গলবারের টিএসসি। খোলা আকাশের নিচে সন্ধ্যার আড্ডা। গরমাগরম আড্ডায় শীত ঢুকে পড়ছিল। ঠাণ্ডা শীতল হাওয়ায় জল ছোঁয়ার অনুভূতি। শরীর জুড়ে শিহরণ। পরে চারপাশে তাকিয়ে মনে হলো, আরও আগেই শীত এসেছে এ তল্লাটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আড্ডা জমানো তরুণ-তরুণীদের প্রায় সবার গায়ে মোটা কাপড়। কেউ কেউ ব্লেজার সোয়েটার পর্যন্ত পরে এসেছিলেন। তারও আগে গুটিয়ে রাখা শার্টের হাতা নিচে নেমে এসেছিল। হাতগুলোও ঢুকে পড়েছিল পকেটে। মেয়েরা হালকা চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছিলেন শীত। কিন্তু আসলেই কি শীত? না। শীত শীত ব্যাপার। এটা আসলে হেমন্তের বৈশিষ্ট্য। ষড়ঋতুর অন্যতম হেমন্ত শীতের বাহন বলেই পরিচিত। শীতকে বহন করে নিয়ে আসাই এর কাজ। গত ১ কার্তিক থেকে শুরু হয়েছে হেমন্ত। এখনও নবীন। সাধারণত এই সময়ের মধ্যে শীতের অনুভূতিটা পাওয়া হয় না। এবার একটু ব্যতিক্রম। আগেভাগেই পড়তে শুরু করেছে ঠাণ্ড। স্বরূপে ফিরেছে হেমন্ত। জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেনÑ পা-লিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি/নিস্তব্ধ ছিলাম ব’সে;/শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো...। এখন কোয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতি। শিশিরে ধুয়া সবুজ। যারা ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠেন তারা দারুণ উপভোগ করছেন। রাজধানী ঢাকার মানুষ দেরি করেই বিছানা ছাড়েন। কোয়াশা তেমন দেখা হয় না তাদের। তবে বিভিন্ন গাছের পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দু যথেষ্ট অপেক্ষা করে। স্থায়ী হয়। ছোট্ট জলকনার উপর সোনালি রোদ পড়তেই অদ্ভুত ঝিলিক। হ্যাঁ, দেখা যাচ্ছে এখন। রমনা পার্কে নিয়মিত মর্নিংওয়াক করেন হাবিবুর রহমান। প্রসঙ্গটি তুলতেই সরকারী কর্মকর্তা বললেন, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যাই যখন শিশিরের দিকে তাকাই। কী যে ভাললাগে! অপেক্ষাকৃত নিচু গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায় শিশির জমে থাকে। কংক্রিটের বেঞ্চে হাত দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করতে যাবেন? ভিজে যাবে হাত। ভোর বেলার আবহাওয়াটা শীতকালের মতোই নরম বলে জানান তিনি। শীতের পীঠ তৈরির দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে ঢাকার রাস্তায়। অলি গলি ফুটপাথে চুলা বসিয়ে শুরু হয়ে গেছে ভাঁপাপিঠা তৈরির কাজ। গরম গরম চিতই একদিকে হচ্ছে। অন্যদিকে ফু দিয়ে মুখে পুরছেন পথচারীরা। গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠাপুলি উৎসব মনে করিয়ে দেয় শীত আসন্ন। ঘরের ভেতরেও শীত। রাতে ঘুমোনোর সময় বাতির সঙ্গে ফ্যানটি বন্ধ না করলে আর চলছে না। শেষরাতে গায়ে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে হালকা কাঁথাও। এভাবে নানা ভাব ও ভাষায় হেমন্ত জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্ব। আবহাওয়া অফিসও বলছে, তাপমাত্রা কমেছে। এ কারণেই শীত শীত অনুভূতি। তবে এটা শীতের আভাস নয়। এখন যতদিন যাবে ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে তত শীত বাড়তে থাকবে। নবেম্বর পুরোটা এভাবে যাবে। ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে শীতের কাল। তার আগ পর্যন্ত হেমন্ত। উপভোগ করার সুন্দর সময়।
×