ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোটা চালের দাম কমেছে, তবে পেঁয়াজের দাম এখনও চড়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ নভেম্বর ২০১৭

মোটা চালের দাম কমেছে, তবে পেঁয়াজের দাম এখনও চড়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৭ টাকা। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ভোক্তাকে খরচ করতে হচ্ছে ৬৫-৮৫ টাকা পর্যন্ত। মোটা চালের দাম কমায় খেটেখাওয়া মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। চাল নিয়ে তাদের উদ্বেগ কমেছে। দু’সপ্তাহ আগেও ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি মোটা চাল। মোটা চালের দাম কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে উন্নতমানের সরু ও মাঝারিমানের চালের দাম। মিনিকেট জাতীয় চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া উন্নতমানের নাজিরশাইল জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি। জানা গেছে, চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি মিসর, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। আর সরকারীভাবে ভিয়েতনাম, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। জানা গেছে, কয়েক দফায় শুল্ক কমিয়ে তা শূন্য শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনার পর বেসরকারী খাতে আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারীভাবে বিদেশ থেকে চাল কেনার চুক্তি করার পর কিছুটা কমতে শুরু করেছে দাম। এছাড়া চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পর মজুদ চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের এসব পদক্ষেপের প্রভাব ভোগ্যপণ্যের বাজারে পড়েছে। রাাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাব অনুযায়ী চালের দাম বেশি কমেছে মোটা এবং মাঝারিমানের। এক মাসের ব্যবধানে এই ধরনের চালের দাম শতকরা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো সরু চালের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। তবে এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। কিন্তু হাওড়ে বন্যা, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে গত এক দশকের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম উৎপাদন হয়েছে চালের। এ কারণে গত এপ্রিল থেকে চালের দাম বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সরকার বিদেশ থেকে আমদানি ও শুল্ক কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। মোটা চালের দাম এক পর্যায়ে উঠে যায় ৫০ টাকার ওপর। আর চিকন চাল বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। তবে চালের দাম এখন কিছুটা কমেছে। আশা করা হচ্ছে, বোরো কাটা এবং আমদানি কার্যক্রম একইভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬, সরু চাল ৫৮-৬৫ এবং মাঝারিমানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫৫ টাকায়। এদিকে, চাল উৎপাদনে বিপর্যয়ের কারণে দেখা দেয়া সঙ্কট কাটাতে সরকার এ বছর মোট ২০ লাখ টন চাল ও গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। শীঘ্রই এসব চাল ও গম আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পেঁয়াজের দাম চড়া ॥ মসলাজাতীয় পণ্য পেঁয়াজের দাম এখনও চড়া। প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ এবং দেশী জাতের ভাল মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। কোন কোন বাজারে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত কোরবানি ঈদের আগে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হলে ওই সময় কমে আসে পেঁয়াজের দাম। এরপর ব্যবসায়ীদের কৌশলেই চলছে বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে জাত ও মানভেদে ৮০-৮৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে বা কমলে দ্রুত খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ে। জানা গেছে, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা, যা বর্তমানে ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা। এখন তা সর্বোচ্চ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×