ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাইলট সাব্বিরসহ ৪ জন রিমান্ডে

বিমান যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২ নভেম্বর ২০১৭

বিমান যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিমানের কো-পাইলটসহ ৪ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর দারুসসালাম থানার বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার তাদের ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব পাইলট সাব্বিরকে ৭ দিন, তার মা মোসা. সুলতানা পারভীনকে ৫ দিন, অন্য দুই আসামি আসিফুর রহমান আসিফ ও মোঃ আলমের ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম এলাকা থেকে তাদের আটক করে র‌্যাব। তাদের আটকের পর পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বিমানের আগে সাব্বির রিজেন্ট এয়ারলাইন্সে পাঁচ বছর কাজ করে। সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যায়ও যে বিমানের ঢাকা-কলকাতা-ঢাকার একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। গত ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুরের দারুসসালাম থানার বর্ধনবাড়ী এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই ভবনের পঞ্চমতলায় জঙ্গী আব্দুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগী ছিল। সেই ভবনের মালিক ছিলেন বিমানের ফার্স্ট অফিসার সাব্বিরের বাবা হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। জঙ্গীদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ ও নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলামকেও আটক করে র‌্যাব। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিজস্ব গতিতে কাজ করছে। আমরা আমাদের নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেব। জানা যায়, যেকোন ফ্লায়িং একাডেমি থেকে পাইলট ট্রেনিং শেষে সিভিল এভিয়েশন থেকে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স পেলে বিমানে পাইলট হিসেবে চাকরির আবেদন করতে পারেন। লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষা শেষে নির্বাচিতদের ক্যাডেট পাইলট হিসেবে বিমানে নিয়োগ দেয়া হয়। ক্যাডেট পাইলটরা বিমান ট্রেনিং সেন্টারে গ্রাউন্ড কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন। সেই প্রশিক্ষণ শেষে কৃতকার্যরা সিমিউলেট ট্রেনিং শেষে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। বিমানে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে প্রত্যেকের পুলিশ ভেরিফিকেশনও সম্পন্ন করা হয়। ফার্স্ট অফিসাররা যেকোন ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে পাইলটকে সহায়তা করেন। কিন্তু সাব্বিরের ক্ষেত্রে এ সব বিষয় মানা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে র‌্যাব। বিমানের আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এলো প্রথম। সে ক্ষেত্রে সবকিছু তদন্তেই বের হয়ে আসবে। এই বৈমানিকের অন্য কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তদন্ত করে দেখা হবে। র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয় এবং বুধবার আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-৪ এর এসআই আমিরুল ইসলাম। শুনানি শেষে সাব্বিরকে সাত দিন, তার মা সুলতানা পারভীনকে পাঁচ দিন এবং আসিফ ও আলমকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন মহানগর হাকিম আহসান হাবিব। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার। আসামিদের পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকলেও তারা নিজেরাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। এছাড়া গত ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ থেকে র‌্যাবের হাতে আটক সম্রাট মিয়া (২১) ও শাহাদত হোসেন ওরফে আমির হামজাকেও (২২) এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন বিচারক মঞ্জুর করেন। সম্রাট ও হামজা মিরপুরে নিহত জঙ্গী আব্দুল্লাহর সহযোগী। আর আবদুল্লাহর প্রভাবে সাব্বিরের পরিবারও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে যায়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাব্বির উড়োজাহাজ চালিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের বাসভবনে আঘাত করা অথবা বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছেন। বিমান সূত্র জানায়, সাব্বির এমামের বিরদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর অংশ হিসেবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কোর্ট রিপোর্টার জানান, বিমান নিয়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগে প্রেফতার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফার্স্ট অফিসার সাব্বির এমামের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোঃ আহসান হাবিব শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া সাব্বিরের মা সুলতানা পারভীনের ৫ দিন, পারভীনের আত্মীয় আসিফুর রহমান ও মোঃ আলম এবং সাব্বিরের সহযোগী সাহাদাত হোসেন ওরফে আমির হামজা ও সম্রাট মিয়া ওরফে হুজুরে খোজের ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-৪ এর এসআই মোঃ আমিরুল ইসলাম আসামিদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানিকালে আসামি সম্রাটের পক্ষে ছাড়া অন্য কোন আসামির পক্ষে কোন আইনজীবী ছিল না। রিমান্ড শুনানিতে আসামি সাব্বির ও তার মা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। পাইলট সাব্বির ও তার মা সুলতানা পারভীনসহ ৫ জনের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় তাদের কোন বক্তব্য আছে কি না বিচারক জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সুলতানা পারভীন বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আমার বাসায় ১২ বছর ধরে ভাড়া ছিল। ভাড়াটিয়া ছাড়া তার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। আমার ছেলে সাব্বিরের সঙ্গেও আমার কোন সম্পর্ক নেই। গত ৫ বছর ধরে আমার ছেলে আমার বাড়িতে আসে না। আমি তাদের কোন বিষয় জানি না। আমাকে জোর করে অনেক কিছু বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি কখনও কোন চাঁদা দেইনি’। এরপর পাইলট সাব্বির বলেন, ‘গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আমি ফ্লাই করেছি। ফ্লাই করতে হলে সরকারের বিভন্ন সংস্থার ছাড়পত্র লাগে। কোথাও থেকে আমার বিরুদ্ধে কোন খারাপ প্রতিবেদন নেই। ২০১৫ সাল থেকে আমার মা সুলতানা পারভীনের সঙ্গে আমার কোন কথা হয় না। মা মাঝে মধ্যে আমার বাসায় এলেও আমি ২০১৫ সাল থেকে বাড়িতে যাইনি। আমার মামাতো ভাই আসিফকেও ধরে আনা হয়েছে। মিল্লাতকে আমি তাকে চিনিও না এবং কোনদিন দেখিও নাই। ২০১১ সাল থেকে আমি ফ্লাই করি। কেউ একজন আমার নাম বলল আর আমি দোষী হয়ে গেলাম? আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই সত্য নয়’। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার ও আমিন উদ্দিন মানিক এবং সহকারী পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন রিমান্ড শুনানিতে প্রত্যেক আসামির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেছিলেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সাব্বির এমামসহ প্রথম চারজনকে গ্রেফতার করে। অপর ২ আসামি টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার ১(৯)২০১৭ নম্বর মামলায় পূর্বেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
×