ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কটে পাশে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কটে পাশে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান চায় ইউরোপীয় কাউন্সিল। এই সমস্যা সমধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের কঠিন সময়ে তারা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে। বুধবার ইউরোপীয় কাউন্সিলের মানবিক সহায়তা ও সঙ্কট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিশনার ক্রিস্টোস স্টাইলিয়ানিডস ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন ইউরোপীয় কাউন্সিলের কমিশনার। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস্টোস স্টাইলিয়ানিডস বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা শুরু থেকেই এই সমস্যা আমলে নিয়েছি। এই সমস্যা সমাধানে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। ফেরত নেয়ার জন্য রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, আমি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। রাখাইন থেকে এত মানুষ আসার ফলে এখানে একটি মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এ সঙ্কটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। যতদিন এ সঙ্কট না কাটবে, ততদিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাশে থাকবে। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের কমিশনার ক্রিস্টোস স্টাইলিয়ানিডস। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনার বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ যে কঠিন সময় পার করছে, এই কঠিন সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেবে সংস্থাটি। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অবহিত করেন। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। এসব নাগরিককে মিয়ানমার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিয়ে আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক সমর্থন প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দেন। তিনদিনের সফরে সোমবার ঢাকায় আসেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের কমিশনার। তিনি মঙ্গলবার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শনে কক্সবাজার যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখেন। তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেন। ইউরোপীয় কমিশনার বলেন, নিজ দেশে ফেরার মৌলিক অধিকার আছে রোহিঙ্গাদের। তাই রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রত্যাবাসন শুরু করতে ইইউ কাজ করবে । সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা ইউরোপীয় কাউন্সিল। সেকারণে ইউরোপীয় কাউন্সিলের কমিশনার ক্রিস্টোসের বাংলাদেশ সফরকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি ইউরোপীয় কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক ভূমিকা রাখেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ইউরোপ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আহ্বান জানিয়েছে তাতে মিয়ানমার সাড়া না দিলে দেশটির বিপক্ষে আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের কমিশনার তার এবারের সফর শেষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করতে পারেন। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর সেনা অভিযানের মধ্যে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম এই পর্যন্ত পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ করেছে। এই ঘটনার শুরু থেকে মিয়ানমারের ভূমিকার সমালোচনা করে আসা ইউরোপীয় কাউন্সিল রোহিঙ্গা নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সেনা অভিযান দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানায়। রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহত এই নির্যাতনের কারণে ইউরোপীয় কাউন্সিল মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কড়া অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে যেসব প্রতিরক্ষা চুক্তি ইউরোপের দেশগুলোর রয়েছে, তা পর্যালোচনার কথাও জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বড় তহবিল গঠনের চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
×