ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুলিবিদ্ধ উজবেক জঙ্গী পাকড়াও;###;তিউনিসিয়ায় পার্লামেন্টের সামনে ছুরিকাঘাতে আহত ২ পুলিশ

এবার ট্রাক হামলায় রক্তাক্ত নিউইয়র্ক ॥ নিহত ৮

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ নভেম্বর ২০১৭

এবার ট্রাক হামলায় রক্তাক্ত নিউইয়র্ক ॥ নিহত ৮

নাজিম মাহমুদ ॥ দুনিয়া কাঁপানো নাইন-ইলেভেনের হামলার পর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হলো নিউইয়র্ক। মঙ্গলবার শহরটির ম্যানহাটনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার মেমোরিয়ালের কাছে ব্যস্ত সাইকেল চালানোর রুটে দ্রুতগামী পিকআপ তুলে দিয়ে ৮ জনকে পিষে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয় কমপক্ষে ১২ জন। ঘটনাস্থলেই ট্রাকচালক, ২৯ বছর বয়সী সাইফুল্লাহ সাইফকে গুলি চালিয়ে আহত অবস্থায় আটক করে পুলিশ। সাইফুল্লাহ উজবেকিস্তানের নাগরিক। বর্তমানে ফ্লোরিডায় বাস করতেন তিনি। ২০১০ সালে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন সাইফুল্লাহ। গত বছর মিসোরি অঙ্গরাজ্যে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে একবার আটক হন তিনি। নিহত সাত জন মার্কিন আর অপরজন বেলজিয়ামের নাগরিক বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আর্জেন্টিনা ও বেলজিয়ামের নাগরিক রয়েছে। এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে মার্কিন প্রশাসন। রাশিয়া ও পোপ ফ্রান্সিস এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। এদিকে বুধবার সকালে তিউনিশিয়ার পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে একজন ইসলামী জঙ্গীর ছুরিকাঘাতে দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, সালাফিপন্থী এক জঙ্গী বুধবার সকালের দিকে একজনের মাথা ও অপরজনের কাঁধে ছুরি মারে। আহত এই দুই পুলিশ সদস্যকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার পর ওই হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। তবে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখছে। হামলাকারীর বয়স ২০ বছরের কাছাকাছি বলে পুলিশ ধারণা করছে। নিউইয়র্কের হামলাকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইটার বার্তায় এ হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি। ট্রাম্প বলেন, সৃষ্টিকর্তা ও পুরো যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কোনভাবেই কোন আইএস জঙ্গীকে আমাদের দেশে ফিরতে ও প্রবেশ করতে দেব না। হামলাকারীকে অত্যন্ত দুর্বল ও মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে আখ্যা দেন ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, আমরা আইএসকে মধ্যপ্রাচ্যে হটিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তাদের ঢুকতে দিতে পারি না। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কমিশনার জেমস ও’নিল বলেন, রিটেইলার হোম ডিপো থেকে সাদা রঙের একটি ট্রাক যাত্রা শুরু করে স্থানীয় মঙ্গলবার দুপুর তিনটার দিকে। হামলাকারী এরপর সাইকেল চালানোর রাস্তায় পথচারীদের ওপর সেই ট্রাক তুলে দেয় এবং বেশ কিছুদূর অতিক্রম করে। পরে একটি স্কুল বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ট্রাকটি থেমে যায়। এরপর পালিয়ে যাবার সময় পুলিশ সাইফুল্লাহর পেটে গুলি করে তাকে পাকড়াও করে। জেমস ও’নিল আরও বলেন, আটক সাইফুল্লাহর হাতে দুটি বন্দুক ছিল। হামলায় পর ওই ট্রাকটিতে আইএস সমর্থকদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চিরকুট পাওয়া পায়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি খেলনা বন্দুক উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা অনেকেই এ সময় গুলির শব্দ শুনতে পান। এ বিষয়ে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও একে কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে অভিমত দেন। তিনি বলেন, এটি একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আরও পরিষ্কার করে বললে, খুবই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী কাজ। আমরা জানি এটি আমাদের শক্তিকে নষ্ট করার চেষ্টার অংশ। কিন্তু নিউইয়র্র্কবাসীরা খুবই শক্তিশালী, ধৈর্যশীল এবং আমাদের অগ্রযাত্রা কখনই এরকম সন্ত্রাসের কাছে থেমে যাবে না। ঘটনার পর সাইকেলের রুটে বেশ কয়েকটি সাইকেল চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। শহরের মানুষ যখন হ্যালোউইন উৎসব উদযাপনে ব্যস্ত ঠিক তখনই এ হামলার ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় শোক জানিয়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, নিউইয়র্কে মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হামলায় আমি গভীরভাবে সমবেদনা জানাচ্ছি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আমরা এই অমানবিক হামলার গভীর নিন্দা জানাই। ইউগেন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সাদা রঙের পিকআপটি স্টুয়েভেসান্ট হাই স্কুলের কাছে ওয়েস্ট সাইড হাইওয়ে সংশ্লিষ্ট সাইকেলের রুটে উঠে গিয়ে দ্রুত গতিতে অসংখ্য মানুষকে আঘাত করতে থাকে। পরে নয়-দশটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ফ্রাঙ্ক নামে অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি এক লোককে রাস্তার মোড়ে দৌড়াতে দেখেছেন। তিনিও ৫-৬টি গুলির শব্দ শুনতে পান বলে জানান। তিনি বলেন, তার হাতে কিছু একটা ছিল, অমি দেখেছি। যদিও আমি বলতে পারছি না, সেটা কি। পরে জেনেছি সেটা ছিল বন্দুক। যখন পুলিশ তাকে গুলি করে, সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল, মাথা-খারাপ পরিস্থিতি তখন, আমি আবার ওই লোকের হাতে কি তা দেখার চেষ্টা করলাম, ততক্ষণে সে পড়ে গেছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সারেল ১৪ জুলাই ফ্রান্সে একই ধাঁচে ট্রাক হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় ৮৭ জন লোক প্রাণ হারায়।
×