ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেধড়ক পিটুনিতে কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে

যৌতুক ঝড়ে তছনছদুই সন্তানেরজননীর সংসার

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১ নভেম্বর ২০১৭

যৌতুক ঝড়ে তছনছদুই সন্তানেরজননীর সংসার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৩১ অক্টোবর ॥ দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ লাকি বেগমকে (৩০) দুই ঘণ্টা আটকে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়েছে। পাষ- স্বামী খলিল রাঢ়ী, শাশুড়ি জোহরা বেগম, দেবর শামীম রাঢ়ী, শামীমের স্ত্রী নিলুফা বেগম ও লাকির সতীন নিলুফা বেগম লাঠি, চলা (লাকড়ি) ও পাইপ দিয়ে শরীরের সর্বত্র পিটিয়ে লাকির এমন দশা করে। একপর্যাায় লাকি অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় লাকির এক আত্মীয় পুলিশে খবর দেয়। থানার এসআই সিদ্দিক অর্ধচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। লাকির শরীরের সর্বত্র কালো ছোপ ছোপ দাগ ফুটে আছে। মায়ের এমন নির্যাতনে ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া লামিয়া চিৎকার দিয়ে মাকে রক্ষার চেষ্টা করলে পাষ- বাবা খলিল লামিয়াকে ধরে আছাড় দেয়। এমনকি লামিয়াকে ধরে মারধর করার জন্য ধাওয়া করে। পড়শি কেউ এগিয়ে যাবে এজন্য লাঠি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে খলিলসহ তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। বর্তমানে লাকি বেগম কলাপাড়া হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে কাতরাচ্ছেন। এখনও উঠবস করতে পারছেন না। কোঁকিয়ে ওঠেন এপাশ থেকে ওপাশ যেতে। মায়ের এমন দুঃসহ অবস্থা এবং নিজের লেখাপড়া বন্ধসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় মায়ের শয্যাপাশে লামিয়ার দু’চোখের পানি ঝরছে। ১৭ বছরের সংসার জীবনে সিডরের মতো ঝড় বইছে লাকির, যা আদৌ থামবে কি-না তাও জানেন না তিনি। লাকি জানান, যৌতুকের জন্য বিয়ের চার বছর পর থেকেই মারধর আর নির্যাতন চলে আসছে তার ওপর। এ নিয়ে বহুবার চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ স্থানীয়রা সালিশ করেছেন। এমনকি অসহায় বাবা সংসারের যোগান দিতে জামাই খলিলকে এক লাখ কুড়ি হাজার টাকায় একটি অটোবাইক কিনে দেন। কিন্তু তা বিক্রি করে দেয়। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নীলগঞ্জ গ্রামে বাড়ি লাকির স্বামী খলিলের। এরপরও নানা ছলে ফের যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন চলে। সবশেষ তিন মাস আগে নীলগঞ্জ আবাসনের বাসিন্দা শিরিনাকে বিয়ে করে খলিল। এই তিন মাসে লাকিসহ তার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণ, খোরাকিসহ কোন ধরনের বাজার-সওদা দেয়নি খলিল। এমনকি ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে লামিয়ার লেখাপড়া পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এরপরও আরেক মেয়ে তিন বছরের মারিয়াকে নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে স্বামীর ঘরে পড়েছিলেন লাকি। কিন্তু হঠাৎ দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গত রবিবার সন্ধ্যার পর ঝড়ের মতো হানা দেয় লাকির ঘরে। লাকি আরও জানান, তার শাশুড়ি চুলের মুঠি ধরে। সতীন শিরিনা, দেবর ও জা জাপটে ধরে একত্রে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। জাপটে ধরে পরিকল্পিতভাবে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে। বাহু, রানে, পিঠে, পাছায় লাঠিপেটা চালায়। লাকির ভাষায়, ‘লাকড়ি, চলা, লাডি ও জুতার বাড়িতে শরীরডার এক ইঞ্চি জায়গাও পিডাইতে বাহি রাহে নাই।’ চিৎকার করলে মুখ চেপে ধরা হতো। বর্তমানে এ অসহায় গৃহবধূ লাকির চিকিৎসার খরচ যোগানের মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে দু’চোখের পানি মুছছেন আর নিজেরসহ দুই সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যত ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েন। তিনি এ পাষ-তার বিচার চেয়েছেন। নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করছেন। এ ঘটনায় কলাপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কলাপাড়া থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান জানান, নির্যাতিত ওই মহিলাকে তিনি খবর পেয়ে শঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
×