ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় টিটিতে পুরনো রানী, নতুন রাজা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১ নভেম্বর ২০১৭

জাতীয় টিটিতে পুরনো রানী, নতুন রাজা

রুমেল খান ॥ টেবিল টেনিস (টিটি) বা পিং পং বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলার একটি। ব্যক্তিগত কিংবা দলগত বিষয় হিসেবে এ খেলা টেবিলের ওপরের অংশে খেলতে হয়। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে খেলাটির জন্ম। আধুনিক অলিম্পিকে এ ক্রীড়া ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশ্বের অধিকাংশ সেরা টিটি খেলোয়াড়ই চীন দেশে জন্মগ্রহণকারী। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশের মধ্যে জার্মানি অন্যতম। অত্যন্ত দ্রুতগতির এই খেলাটিতে তাহলে বাংলাদেশের স্থান কোথায়? উত্তরটা বড়ই হতাশাব্যঞ্জক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এই খেলাটি থেকে কোন স্বর্ণপদক লাভ করেছে এমন নজির স্থাপিত হয়নি এখনও। এর কারণ বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং উঁচুমানের খেলোয়াড় সৃষ্টি করতে না পারাসহ আরও অনেক কিছু। মঙ্গলবার শেষ হয়ে গেল জাতীয় সিনিয়র টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের ৩৭তম আসর। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর টেবিল টেনিস জিমনেসিয়ামে (উডেন ফ্লোর) অনুষ্ঠিত হয় আসরটি। চ্যাম্পিয়নশিপের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী খেলোয়াড়দের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে : পুরুষ দলগত বিভাগে বাংলাদেশ আনসার চ্যাম্পিয়ন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রানার্সআপ, পুরুষ দ্বৈতে জাভেদ-হৃদয় (আনসার) জুটি চ্যাম্পিয়ন, তুহিন-পলাশ (সেনাবাহিনী) জুটি রানার্সআপ, মহিলা দ্বৈতে সোমা-মৌ (আনসার) জুটি চ্যাম্পিয়ন, সালেহা-আঁখি (বিমান) জুটি রানার্সআপ, পুরুষ এককে আনসারের জাভেদ চ্যাম্পিয়ন, সেনাবাহিনীর রকি রানারআপ, মহিলা এককে আনসারের সোমা চ্যাম্পিয়ন, সেনাবাহিনীর রুমী রানারআপ, মিশ্র দ্বৈতে সেনাবাহিনীর রকি-রাহিমা জুটি চ্যাম্পিয়ন এবং আনসারের পরাগ-মৌ জুটি রানার্সআপ হন। পুরুষদের মধ্যে আনসারের মোহাম্মদ জাভেদ এবং মহিলাদের মধ্যে সোনম সুলতানা সোমা দুটি করে শিরোপা করায়ত্ত করেন। এবারের আসরে ৩৮ জেলা ও বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণে মোট ৪৫টি দল নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এবার টুর্নামেন্টে ১৮০ পুরুষ ও ৬০ মহিলা খেলোয়াড় ও ৪৫ কর্মকর্তা অংশ নেন। দেখা গেছে, ঘুরে ফিরে সেই পুরনো খেলোয়াড়রাই চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। এর ফলে একটা ব্যাপার পরিষ্কারÑ টিটি ফেডারেশন এখনও নতুন কোন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি। তবে জাভেদ ব্যতিক্রম। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের এককে এটা তার প্রথম শিরোপা। এর আগে জিতেছিলেন ফেডারেশন কাপের শিরোপাও। খেলা থেকে সরে দাঁড়ালে এবং বিরতিটা লম্বা সময়ের হলে অনেকেই আর ফিরে আসতে পারে না। আবার অনেকেই ফিরে আসতে পারলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না। যারা পারে তারা অবশ্যই বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী। সোনম সুলতানা সোমা এমনই এক টিটি খেলোয়াড়। এ বছরের শুরুতেই ‘প্রাইজমানি র‌্যাঙ্কিং টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায়’ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সোমা। সাড়ে তিন বছরের বিরতি। নানা কারণে এই সময়টায় হাতে তুলে নেননি ব্যাট। অনেকেই ভেবেছিলেন এই বুঝি হারিয়েই গেলেন জাতীয় টেবিল টেনিসের (টিটি) পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন সোমা। কিন্তু ধারণাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করেন সোমা। প্রমাণ করেন তিনি হারিয়ে যাননি। এখনও তার মধ্যে অবশিষ্ট আছে টিটি। র‌্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টের পর শিরোপা জেতেন ফেডারেশন কাপেরও। বাংলাদেশের মহিলা টিটি মানেই হয় রুমি, নয়তো সোমার একচেটিয়া সাফল্য। অন্যরা কেন উঠে আসছে না? সোমার ভাষ্য, ‘গত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তো রহিমা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া আমার কাজিন আঁখি আক্তার সিন্থি ও সালেহা পারভীন সেতু... ওরা ভাল খেলছে। এটা ইতিবাচক দিক।’ দুই ছেলের মা সোমা। বড় ছেলে ইভানের বয়স চার, ছোট ছেলে ইফাজের বয়স দুই। দুই বাচ্চা সামলে খেলায় ফেরা প্রসঙ্গে সোমার ভাষ্য, ‘আমার শাশুড়িই সবকিছু সামাল দিয়েছেন বলেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পেরেছি। যতদিন ফর্ম-ফিটনেস থাকবে ততদিনই খেলে যাব।’ দুই ছেলেকে কি টিটি খেলোয়াড় বানাবেন? ‘ওরা টিটি নয়, ক্রিকেটে বেশি আগ্রহী।’ নোয়াখালীর মেয়ে সোমার হাস্যোজ্জ¦ল উত্তর। ২০১২ সালের পরে বিদেশে (ফ্রান্সে) চলে যাওয়ায় এবং এক পূত্র সন্তানের মা হওয়াতেই মূলত টিটি থেকে সাময়িক নির্বাসনে ছিলেন সোমা। একটি বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়ে সেখানে খেলতে যান সোমা। কিন্তু চুক্তির ধীরগতির প্রক্রিয়ার জন্য দেশে ফিরে আসেন সোমা। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে স্বীয় নৈপুণ্যে সমুজ্জ্বল হয়ে সোমা আরও সাফল্য কুড়িয়ে নিতে পারেন কি না। নাকি ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে কেউ তাকে হারিয়ে ছিনিয়ে নেবেন শিরোপা।
×