ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিষাদের সফর শেষে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১ নভেম্বর ২০১৭

বিষাদের সফর শেষে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘এই ব্যর্থতা ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষণীয়।’ কথাগুলো বলেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। মঙ্গলবার সকাল আটটায় দেশের মাটিতে পা রাখেন। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নান্নু দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে কথাগুলো বলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটি এবার তিক্ততায় ভরা ছিল। দুঃস্বপ্নের একটি সফর গেছে। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০; প্রতিটি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম টি২০তে লড়াই করতে পেরেছে। কিন্তু বাকি একটি ম্যাচেও লড়াই করতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেনি। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নাকানি-চুবানি খেয়েছে, প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হার হয়েছে বাংলাদেশের। এরপর দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ২৫৪ রানে হারে। টেস্ট সিরিজ শেষে যে ফরমেটের ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশা ছিল সেই ওয়ানডে সিরিজেও একই দশা হয়েছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও একই দশা হয়। প্রথম ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৪ রানে হেরে সিরিজ হার হয়। এরপর ইস্ট লন্ডনে তৃতীয় ওয়ানডেতেও হারের ব্যবধান আরও বাড়ে, ২০০ রানে হারে বাংলাদেশ। সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথমটি২০তে লড়াই করে ২০ রানে হারে। দ্বিতীয় টি২০তে আবার সেই বাংলাদেশকেই মিলে। ৮৩ রানে হেরে স্বল্পওভারের সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেন দুঃস্বপ্নের সফর কাটিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। এ সফরের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তিন অধিনায়কের যুগে পা রাখে বাংলাদেশ। টেস্টে মুশফিকুর রহীম, ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও টি২০তে সাকিব আল হাসান অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু কোন অধিনায়কের হাতেই ভাল কিছু ধরা দেয়নি। হার, হার এবং হার বরণ করতে হয়েছে। যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ হয়ে যায় তখন সাকিব দ্বিতীয় টি২০ শেষে বলে দেন, ‘এই ম্যাচ পুরো সফরের প্রতিচ্ছবি।’ সাকিব জানান, ‘আমরা দল হিসেবে ভাল করতে পারিনি। বিচ্ছিন্ন পারফর্মেন্সে এখানে কাজ হবে না। জিততে হলে দল হিসেবে ভাল করতে হবে। পুরো সফরেই আমরা তা করতে পারিনি। এই ম্যাচ যেন সফরেরই প্রতিচ্ছবি।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। টানা হার হয়। যখন টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হার হয় তখনই দলের অবস্থা বেহাল হয়ে যায়। এরপরও আশা ছিল ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে। যদি একটি ম্যাচ জেতা যায়। কিন্তু তাও হয়নি। টি২০তে তো বাংলাদেশ আগে থেকেই খুব ভাল নয়। কিন্তু এই ফরমেটের ক্রিকেটে শক্তিমত্তার ব্যবধান কমে আসে। জয়ের সম্ভাবনা তাই সব ম্যাচেই থাকে। কিন্তু এখানেও ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা কঠিন। কিন্তু এতটা কঠিন তা যেন বাংলাদেশ দেখাল। এমন দুর্দশা হওয়ার পেছনে কারণও খুঁজে পেয়েছেন সাকিব। একের পর এক ম্যাচ হারায় দল বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। তাতেই এমন অবস্থা হয়েছে। সাকিব বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, একটা বড় কারণ ছিল আমাদের টেস্টে ভাল না করা। ওয়ানডেতে টেস্টের সেই রেশটাই হয়তো বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের মনে থেকেছে। তারপর যখন ওয়ানডেতেও ভাল হলো না, তার রেশ টি২০তে এলো।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এটা ভাইরাসের মতো। একটা থেকে আরেকটায় এসেছে। যদি আমরা টেস্টে ভাল করতাম তাহলে আমি নিশ্চিত ওয়ানডেতে আরও অনেক ভাল করতাম।’ বাংলাদেশ দল যে সাফল্যে ভাসছিল তাতে একটা জয় সবার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দল তা অর্জন করতে পারেনি। দেশের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারা সাকিবের কাছেও হতাশার মনে হয়েছে, ‘দেশের বাইরে অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আমরা পারিনি। আমার মনে হয় এটা আমাদের হতাশার দিক। গত দুই তিন বছর দেশে এত ভাল করে আসছি যে আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তত ভাল কিছু করব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘অবশ্যই হারতে পারি। খেলার মধ্যে হার-জিত থাকবে। কিন্তু লড়াইয়ের যে স্পিরিট আমাদের মধ্যে থাকে পুরো সফরেই তার অভাব ছিল। হারের কিংবা খারাপ করার প্রবণতা থেকে আমরা আর বেরই হতে পারিনি কিংবা ঘুরে দাঁড়াতেও পারিনি।’ তবে এ সফরের এমন অবস্থায় যে বাংলাদেশ ক্রিকেট পিছিয়ে গেছে তা মানতে নারাজ সাকিব, ‘এই সিরিজে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া উচিত ছিল। আমি বলব না যে আমরা হয়তো জিততে পারতাম কিংবা অন্য কিছু। কিন্তু যে ধরনের উইকেটগুলোতে আমরা খেললাম, আমাদের সবাই সামর্থ্য ছিল ভাল করার। এটা ঠিক দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট খুবই ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ছিল। বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি২০গুলোতে। টিভিতে দেখে মনে হয়েছে টেস্টেও ভাল উইকেট ছিল। অনেক জিনিসই আমাদের পক্ষে ছিল। কিন্তু তারপরও আমরা ভাল করতে পারিনি।’ দল হিসেবে শূন্য হাতে ফিরেছে বাংলাদেশ। ৪৫ দিনের সফরে সব ফাঁকা। মুশফিকুর রহীমের সেঞ্চুরিটিই তাই প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতে পারে। সাকিব জানান, ‘এই জায়গায় ইতিবাচক কিছু খুঁজে বের করা একটু কঠিন। কোন কোন জায়গায় অনেকে ভাল করেছে। কিন্তু ধারাবাহিকতার ব্যাপারটা আমাদের কারোর মধ্যে ছিল না। আমরা সেভাবে করতেও পারিনি। মুশফিক ভাই ওয়ানডেতে ভাল ব্যাটিং করেছে। রুবেল সবদিনই ভাল বোলিং করেছে। ছোট ছোট এই রকম অনেক অবদানের দরকার হয় দল জিততে হলে। আমি বলব না একটা সিরিজে হারের জন্য খুব বেশি ওলট-পালট চিন্তার দরকার আছে। কারণ বাইরে আসলে এই ধরনের ফল হবে এটা একটু স্বাভাবিক। ফলের কথা বলছি, আমরা যে হারব এটা হয়তো একটু অনুমিতই ছিল, যে ধরনের ক্রিকেট খেলে আমরা হেরেছি, সেটা আমার প্রত্যাশিত নয়।’ দেশে ফিরলেও ক্রিকেটারদের বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই। শনিবার থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসর। এই আসরে খেলতে নিজ নিজ দলের হয়ে মাঠে নেমে যেতে হবে। অনুশীলনে যোগ দিতে হবে। মঙ্গলবার দেশে ফিরে আজ থেকেই সেই অনুশীলনের পালা।
×