ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে ড. মির্জ্জা আজিজুল

দেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন এখনও বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১ নভেম্বর ২০১৭

দেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন এখনও বড় চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় উন্নয়নে উচ্চশিক্ষার অবদান আরও ফলপ্রসূ ও দৃশ্যমান করতে হলে সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষার পরিবেশ এবং গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে নিম্নবিত্তের মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সম্ভাবনা, দুর্বলতা এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে নীতি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। মঙ্গলবার সকালে দি ডেইলি স্টারের সেমিনার হলে ‘জাতীয় উন্নয়নে উচ্চশিক্ষার অবদান’ শীর্ষক এক সেমিনারে ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের আয়োজনে সেমিনারে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নিয়ামত ইলাহী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন ও সঞ্চালনা করেন মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, মাথাপিছু আয় এবং শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির তুলনায় বাংলাদেশ এখনও অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে। জ্ঞান এবং দক্ষতার ঘাটতি এর অন্যতম কারণ যা উচ্চশিক্ষা হতে সম্ভব। জাতীয় উন্নয়নে কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, কন্সট্রাকশন, ট্রান্সপোর্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতসমূহের অবদান দৃশ্যমান হলেও উচ্চশিক্ষার আরও অনেক অবদানের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তবে শিক্ষার মানোন্নয়ন এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি শিক্ষায় সমতাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিও এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে এবং মনিটরিংয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নিম্নবিত্তের মেধাবীরা যাতে লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের কি ধরনের দক্ষতা দরকার সে বিষয়ে খেয়াল রেখে কোরিয়া, চায়নার মতো শিক্ষা ব্যবস্থা সাজানো উচিত। সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, প্রতিবছর সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে দুই লক্ষাধিক গ্র্যাজুয়েট বের হলেও সবার কর্মসংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ দেশে বিভিন্ন পেশায় ৫ লাখ বিদেশী কর্মরত রয়েছে। সেকারণে প্রশ্ন উঠছে উচ্চশিক্ষা খাতে বিনিয়োগ এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান যথাযথ হচ্ছে কিনা। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনীতিকরণ, দলীয়করণের কারণে লেখাপড়ার মান ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে চরম বাণিজ্যিকীকরণ এবং ভৌত কাঠামোর অভাবে বেশিরভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। এমতাবস্থায় উচ্চশিক্ষা সমাবর্তন আর সনদ বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে যা জাতীয় উন্নয়নে কোন অবদানই রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও এর মানোন্নয়ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে এখনই ভাবতে হবে। উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটলেও শিক্ষার মান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন কিরণ। সেমিনারে পর্যবেক্ষণপত্রে উঠে আসে, উচ্চশিক্ষা নেয়ার পরও কেন তরুণরা বেকার? চাকরি বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা তাই ক্রমবৃদ্ধিমান। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছে কেবল আফগানিস্তানে ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষ কর্মে যুক্ত। ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের আয়োজনে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতে শেখায়, পাশাপাশি এর সমস্যার সমাধান করতে শেখায়। অনুষ্ঠানে বিতর্ক শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির ড. নিয়ামত ইলাহীকে ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের পক্ষ থেকে লাইফটাইম এচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির মহাসচিব জাহিদ রহমান, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমানসহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের বিতার্কিক, শিক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×