ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রির্পোটারের ডায়রি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ নভেম্বর ২০১৭

রির্পোটারের ডায়রি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টেলিটকের সেবা রোহিঙ্গাদের জন্য টেলিটকের সেবা। এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে স্বজন খোঁজার জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে এসেছে টেলিটক। রোহিঙ্গা ১০টি ক্যাম্পে স্থাপন করা হয়েছে ১০টি টেলিটকের বুথ। প্রতিদিন এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে স্বজনদের খুঁজে বের করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে উখিয়ার কুতুপালংয়ে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত নাগরিকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। পাহাড়ের চূড়া থেকে শুরু সমতলভূমি পর্যন্ত স্তরে স্তরে স্থাপন হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। পাহাড় ঢেকে গেছে কালো পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে। কোন বৃক্ষের চিহ্ন নেই কুতুপালং পাহাড়ে। সেখানে বিপন্ন মানুষের বাসস্থান। রোদে প্রচন্ড গরম আর বৃষ্টি হলে লাল মাটির কাদা। রোদ-বৃষ্টি দুই সময়েই রোহিঙ্গাদের চরম দুর্দশা। এই দুর্দশা লাগব করতে সেনা সদস্যরা দিনরাত সেখানে ত্রাণ কাজ এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের তালিকা তৈরি করছেন। সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের মুখে শত দুঃখে হাসি ফুটেছে। কারো বাবা, ভাই, বোন, মা নেই। মিয়ানমারে সেনারা নির্বিচারে তাদের হত্যা করেছে। তারা রক্ত দেখতে দেখতে রক্তের ভয়াবহতা বর্ণনা এখন তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক। লাশের পরে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া দেখাটা ছিল তাদের কাছে খুব সাধারণ বিষয়। ঘরে বন্দী করে আগুনে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য তারা নিজ চোখে দেখেছেন। সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গে কুতুপালংয়ের তিনটি ক্যাম্প ঘুরে টেলিটকের সেবা নমুনা দেখছিলাম। টেলিটকের তিনটি বুথে সারা দিনে মাত্র ১৮ কল হয়েছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এখান থেকে কল করে স্বজন খোঁজার চেয়ে ত্রাণের পিছনেই ছুটছেন। তাছাড়া নিজদের ও স্বজনদের হাতে মোবাইল রয়েছে। রবির সিমযুক্ত হাজার হাজার মোবাইল তাদের হাতে। টেলিটকের সেবা তাদের দরকারই নেই। টেলিটকের এমডি কাজী গোলাম কুদ্দুস বললেন, টেলিটক মন্ত্রীর নির্দেশে মাত্র তিন দিনের মাথায় এখানে নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। প্রাথমিক অবস্থায় ১০টি বুথ তৈরি করা হয়েছে। এগুলো করতে সরকারের এক কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটি বুথে গড়ে ৬ জন করে টেলিটকের কর্মী কাজ করছেন। একটি বুথে টেলিটকের একজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। পাশে থেকে অন্য একজন কর্মী বলে উঠলেন, এরচেয়ে জেলখানায় থাকা অনেক ভাল। একজনও আসে না কল করতে। অথচ সারাদিন এখানে বসে থাকতে হচ্ছে। রোদ নেই বৃষ্টি নেই সবসময় বসে থাকতে হচ্ছে তীর্থের কাকের মতো। এটাকে নাকি মানবিক সেবার জন্য স্থাপন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতিজনের হাতেই মোবাইল আছে। অযথা সরকারী অর্থের অপচয় করার জন্য এমন একটি সেবা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চালু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ক্যাম্পে টেলিটকের বুথ স্থাপন করা হবে। এটা না করে বরং টেলিটকের সিম রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করলে টেলিটকই লাভবান হতো। বেচে যেত সরকারের অনেক অর্থ। -ফিরোজ মান্না বৈরী আবহাওয়া তবুও... ২০ অক্টোবর, শুক্রবার। সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি। সঙ্গে উত্তরের বাতাস। ভ্যাপসা গরম কেটে হাল্কা শীতের আমেজ। জরুরী কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ভুনা খিচুড়ির আয়োজন ছাড়াও তেল, কাঁচা-মরিচ পিঁয়াজ দিয়ে মুড়ি বানিয়ে খেয়ে ধুমছে ঘুমাচ্ছে আরাম প্রিয় মানুষ। কিন্তু সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহের কাজে অলসতার সুযোগ নেই। ঝড়-বৃষ্টি, খরতাপেও কোন বাধা মানতে নেই। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন ভবন ও কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিকেল তিনটায়। প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন। হাসপাতাল উদ্বোধন উপলক্ষে জনসভারও আয়োজন করা হয়েছে বাগবাটি কলেজ মাঠে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বলে তিন দিন আগে থেকে মাইকযোগে প্রচার করা হচ্ছে। পেশাগত কারণেই এই খবরটি কভার করা নৈতিক দায়িত্ব। তাই বৃষ্টির মধ্যেও একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম বাগবাটির উদ্দেশে। রাস্তায় হাল্কা বাতাস ও বৃষ্টি অনেকটা কাবু করে ফেলেছে। শরীরের উপরের অংশও ভিজে গেছে। রাস্তায় শুধু আমাদের গাড়ি ছাড়া যাত্রীবাহী তেমন গাড়ি নেই। ঠিক তিনটায় পৌঁছলাম বাগবাটিতে। জনসভার স্থল বাগবাটি কলেজ মাঠে বিশাল প্যান্ডেল বাতাসে ও বৃষ্টির কারণে তছনছ হয়ে গেছে। হাসপাতালে পৌঁছে জানলাম, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। তবে বাগবাটির হাসপাতাল উদ্বোধন হবে বিকেল চারটায়। ইতোমধ্যেই ধীরে ধীরে জেলার সরকারী কর্মকর্তাগণ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ মোহীসহ অন্য অতিথিবৃন্দ সরকারী গাড়িতে নিয়ে উপস্থিত হলেন উদ্বোধনী স্থলে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এলেন ঠিক সাড়ে ৪টায়। সীমিত আকারে হলেও শুরু হলো অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে নিউজ লিখে তা অফিসে পাঠানো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। হাসপাতাল ভবনের কোথাও ইন্টারনেটের লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে বৃষ্টির মধ্যেও ইন্টারনেট মাঝে মধ্যেই ড্রপ করছে। নিউজ পাঠানোর ডেড লাইন সন্ধ্যা ৬টা। ততক্ষণে সাড়ে ৬টা বাজে। মাথায় প্রচ- চাপ, ভেতরে ভেতরে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে। ছবি নিউজ রেডি করার পরও পাঠাতে পারছি না ইন্টারনেট সংযোগের কারণে। অবশেষে কাক ভেজার মতো ভিজে দৌড়ে এসে পৌঁছলাম বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের অফিসের বারান্দায়। সেখানেও বিদ্যুত নেই, মেঝেও ভেজা। কী আর করা, কাজ তো করতে হবে। ততক্ষণে বিটিভির সাংবাদিকের সানগান জ্বালিয়ে কাদা মাটি মিশ্রিত ভেজা মেঝেতে বসে চেষ্টা করছি ইন্টারনেট সংযোগের জন্য। সংযোগ পাচ্ছি না, পাচ্ছি না অবস্থায় হঠাৎ সংযোগ পেয়ে নিউজ ও ছবি দ্রুত পাঠিয়ে দিলাম অফিসে। এর পর মাথা ঠান্ডা। কিন্তু বিড়ম্বনা ছাড়ছে না। বাগবাটি থেকে বৃষ্টির মধ্যে শহরে ফেরা আরও এক চ্যালেঞ্জ। অবশেষে বাগবাটি ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং ছোনগাছা ইউপি চেয়ারম্যান সহিদুল আলমের সহযোগিতায় একটি অটোরিক্সা পেলাম। কিন্তু চালক সিরাজগঞ্জ শহরে আসতে নারাজ। তারপরও চড়ে বসলাম আমরা ৫ জন। রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। অটো রিক্সার আলোতে ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় চলছে গাড়ি। অবশেষে ছোনগাছা বাজারে এসে পৌঁছলাম। সেখানে অটোরিক্সা বদলে দ্বিগুণ ভাড়ায় আরও এক চালক ম্যানেজ করে শহরে ফেরা। তখন রাত সাড়ে ৮টা। - বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
×