ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দায়িত্বশীলতাই কাম্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ নভেম্বর ২০১৭

দায়িত্বশীলতাই কাম্য

রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল তা কোনক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা জরুরী বিভাগের গেট বন্ধ করে দিলে বহু রোগী বিপাকে পড়েন। প্রায় তিন ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের। ঢামেক হাসপাতাল এমনই একটি আরোগ্য সদন যেখানে সারা দেশ থেকেই রোগীরা সেবা নিতে আসেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সমাজ অধিক দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করে। যে কোন কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা আর হাসপাতালের মতো জরুরী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ থাকা কখনোই সমতুল্য হতে পারে না। কারণ, এখানে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন কোন হাসপাতালেই না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলকেই সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সহমর্মিতা, সহনশীলতা ও বিচক্ষণতা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মৃত্যুমুখে পতিত রোগীর স্বজনদের বেলাতেই শুধু নয়, রোগাক্রান্ত সব ব্যক্তি ও তাদের নিকটজনদের মনের অবস্থা বুঝে কৌশলী আচরণ করা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে না এমনটা সাধারণভাবে নিশ্চয়ই বলা যায়। প্রসঙ্গত, মাত্র ছয় মাস আগে ডাক্তারের কথিত ভুলের অভিযোগ তুলে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে একই ধরনের তুলকালাম কান্ড ঘটেছিল। সেবার ভুল চিকিৎসার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকগণ। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি থানা-পুলিশে গড়ায়। পরিতাপের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমাজে রোগী এবং চিকিৎসক ইদানীং উভয় শ্রেণীকে কোন কোন ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে মারমুখী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। অথচ উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক হওয়া সঙ্গত আস্থা ও বিশ্বাসের, নির্ভরতা ও সহযোগিতার। যার মৃত্যুতে এত কা- হৃদরোগে আক্রান্ত নওশাদ নামের সেই ব্যক্তি ঢামেক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর পর সংঘটিত সংঘর্ষে তিন চিকিৎসক, চার আনসার সদস্যসহ দশজন আহত হয়েছেন। জনকণ্ঠের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু রোগীর স্বজনরাই নয়, চিকিৎসকদের কেউ কেউ হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েন, যা কোনক্রমেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না। চিকিৎসকদের হামলায় রোগীর স্বজনদের মধ্যে দু’জন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করলে স্বাভাবিকভাবেই যে কারও মনে প্রশ্ন জাগবে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শত শত রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি কি বিবেচকের কাজ হয়েছে? এর জন্য আবার হামলাকারীদের দায়ী না করে উপায় থাকে না। হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় ভুল বা অবহেলার অভিযোগের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বরাবর অভিযোগ করার বিধি রয়েছে। বিএমডিসি স্বাধীন অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। আইনের পথই উত্তম পথ। চিকিৎসকদের কাছে আমরা যেমন সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব প্রত্যাশা করি, একইভাবে রোগীর স্বজনেরাও ধৈর্য ও সৌজন্যবোধের পরিচয় দেবেন সেটিও কাম্য।
×