ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নানামুখী চাপে সুচি

রোহিঙ্গা ফেরতে এখনও মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাধা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ফেরতে এখনও মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাধা

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ ক্রমেই বাড়ছে মিয়ানমারের ওপর। বিশেষ করে বেশি চাপে রয়েছেন দেশটির সরকারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে আসা চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাসের বিপরীতে সে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকায় তার দিশেহারা হওয়ার মতো অবস্থা। সুচি বলছেন, তিনি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছেন। অপরদিকে সে দেশের সেনাসমর্থিত বিরোধী দল ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) পরিষ্কারভাবে সতর্ক করে দিয়েছে যে, রাখাইনের সংখ্যাগুরু অধিবাসীদের চাওয়াকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। এমন কোন সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাবে না, যা নাগরিকদের সংক্ষুব্ধ করে। এদিকে মিয়ানমার থেকে বিতর্কিত সেই আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লকের মেয়াদ না বাড়িয়ে তার স্থলে অন্তর্বর্তীকালীন একজন প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সে দেশে দায়িত্ব পালন করবেন নরওয়ের নাগরিক নাট ওস্তাবি। ইতোপূর্বে তিনি আফগানিস্তান এবং পূর্ব তিমুরে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এ ধরনের পদক্ষেপে হতাশা ব্যক্ত করেছেন আউং সান সুচি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইন পরিস্থিতির পূর্ভাবাস সম্পর্কে জ্ঞাত থেকেও তা অবহিত না করার অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লকের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এবং গার্ডিয়ানের একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার জানায়, সম্প্রতি রাখাইনে যে পরিস্থিতি চলছে তার পূর্বাভাস অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার সরকার বিশেষ করে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে এমন আশঙ্কায় ওই কর্মকর্তা প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছিলেন। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, রেনেটার মেয়াদ না বাড়ানোর সঙ্গে মিয়ানমারে তার ভূমিকার সম্পর্ক নেই। মিয়ানমারে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে দেশটির সরকারকে। স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি এক ব্যক্তিগত বৈঠকে কূটনৈতিকদের জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তিনি হতাশ। তবে পাশাপাশি এটাও জানিয়েছেন যে, আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে তার সরকার। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাসও পুনর্ব্যক্ত করেন সুচি। কিন্তু তার আশ্বাস থাকলেও তিনি যে নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছেন তা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সেনাসমর্থক বিরোধী দল এবং উগ্রবাদীদের তৎপরতাতেই স্পষ্ট। নাগরিকদের সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান ইউএসডিপির ॥ আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সুচি যখন ইতিবাচক কিছু কথা বলছেন ঠিক তখনই ভিন্ন সুর দেশটির সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধী দল ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি)। মিয়ানমারের পত্রিকা ‘ইরাবতী’ জানিয়েছে, দলটির কেন্দ্রীয় এক্সিকিউটিভ কমিটি সদস্য উ উনা মং উইন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরাকানের স্থানীয় বাসিন্দা এবং সেখানকার সংগঠনগুলোর সেন্টিমেন্টকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিদিন ৩শ’ রোহিঙ্গা নেবে মিয়ানমার ॥ মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার আশ্বাস প্রদান করলেও এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যে অত্যন্ত ধীরগতির হবে তা সে দেশের সরকারের পরিকল্পনাতেই পরিষ্কার। দেশটির শ্রম, অভিবাসন ও জনসংযোগ বিষয়ক স্থানীয় সচিব উ মিন্ত কিয়াং বলেছেন, তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে একটি চেক পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন দেড়শ’ রোহিঙ্গার প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করতে পারি। দিনে সর্বোচ্চ ৩শ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া সম্ভব। এ কাজটি হবে ১৯৯৩ সালে দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির চারটি মূলনীতির অধীনে। মিয়ানমারের এ কর্মকর্তার বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিশ্চয়তাও। ত্রাণের আশায় রাখাইন ছাড়ছে রোহিঙ্গারা ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে দমন-নিপীড়িন, জ্বালাও-পোড়াও এবং নির্যাতন না থাকলেও ত্রাণের আশায় রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। এখনও প্রতিদিনই পালিয়ে আসছে শত শত রোহিঙ্গা। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা এদিকে আসতে বাধ্য হচ্ছে এমন বক্তব্য এখন আর গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। ট্রলার-বোটে করে পালিয়ে আসার সময় সাগর ও নাফ নদীতে ডুবে মারাও যাচ্ছে অনেকে। মূলত সুখে-শান্তিতে বা কোন ধরনের ঝামেলা এবং কর্ম ছাড়াই ত্রাণ মিলছে, এমন খবরে তারা ছুটে আসছে। এর প্রমাণ মেলে তাদের বক্তব্যেও। কারণ তারাও বলছেন যে, সেখানে এখন নির্যাতন নেই। তবে খাদ্যের অভাব রয়েছে। নৌকাডুবির ঘটনায় ৬ রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বোঝাই আরও একটি নৌকাডুবির ঘটনায় ৬ রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের শামলাপুর উপকূলে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয় জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা। এখনও বাংলাদেশে আসার অপেক্ষা অনেক রোহিঙ্গা ॥ নানা আশ্বাস এবং নির্যাতন বন্ধ করেও কাজ হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না ওপারে। প্রতিদিনই আসছে দলে দলে। এখনও নাফ নদীর ওপারে বিভিন্ন পয়েন্টে অনেক রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে। তাঁবু ফেলে এ রোহিঙ্গাদের অবস্থান দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। তারা রয়েছে নৌকার অপেক্ষায়। সুবিধামতো জলযান পেলে পাড়ি দেবে এপারে। ভোটার হওয়ার চেষ্টাকালে ২ রোহিঙ্গা আটক ॥ নির্বাচন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সিল জাল করে ভোটার হওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ২ রোহিঙ্গাকে আটক ও সাজা দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে সদরের পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে আটক দুইজনের প্রত্যেককে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন।
×