ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুষ্ট চক্রের কারসাজিতে মালদ্বীপের শ্রম বাজার ধ্বংসের পথে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১ নভেম্বর ২০১৭

দুষ্ট চক্রের কারসাজিতে মালদ্বীপের শ্রম বাজার ধ্বংসের পথে

ফিরোজ মান্না ॥ দুষ্ট চক্রের কারসাজিতে ধ্বংস হতে চলেছে মালদ্বীপের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। বিএমইটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় অসাধু চক্রটি করায়ত্ত করতে চাচ্ছে মালদ্বীপের বাজারটি। চক্রটি একক ভিসার নামে মলদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সত্যায়ন ছাড়াই বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নামমাত্র বেতনে মালদ্বীপে কর্মী পাঠাচ্ছে। ফলে এসব কর্মী কিছুদিনের মধ্যে অবৈধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট সদস্যরাই মালদ্বীপের বড় জনশক্তির কারবারি বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযানে শত শত বাংলাদেশী কর্মী আটক হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সত্যায়ন ছাড়া স্বল্প বেতনে কিভাবে বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে। এ সম্পর্কে বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেছেন, যারা দেশটিতে চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন তারা ম্যানপাওয়ারের কাজের অনুমতিপত্র নিয়েই যাচ্ছেন। যেহেতু দেশটিতে পোর্ট এন্ট্রি ভিসা। কে সেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন আর কে বেড়াতে গেছেন তা বলা কঠিন। কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালদ্বীপের সঙ্গে জনশক্তি রফতানির কোন চুক্তি নেই। তাই সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো নিয়ে আমরা কোন কথা বলতে পারি না। বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে মালদ্বীপে কাজের কতটুকু ক্ষেত্র রয়েছে সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মালদ্বীপের বাজারে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা করি। সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে বর্তমানে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশী রয়েছেন। বেশিরভাগই এক শ’ থেকে দেড় শ’ মার্কিন ডলার বেতনে কাজ করছেন। মালদ্বীপে শ্রমিকরা সাধারণত হোটেলে কাজ করেন। কিছু রয়েছেন মাছ ধরার কাজ করেন। তাদের বেতন অবশ্য একটু বেশি। ভিসা জটিলতা না থাকায় এবং অন এরাইভাল ভিসায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ কাজ করতে যাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ ওয়ার্কিং ভিসায় গেলেও বেশিরভাগই ট্যুরিস্ট ভিসা। এ সুযোগে একটি চক্র কর্মীদের পাসপোর্ট আটকে রেখে মাসের পর মাস বিনা বেতনে কাজ করাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। একজনকে দিয়ে তার কাজের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে। এর ফলে দেশটিতে উন্নত জীবনের আশায় যাওয়া বাংলাদেশীরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশ থেকে শেষ সম্বল বিক্রি করে দালালকে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা দিয়ে ভাল কাজের আশায় এসে এখন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে অনেকে। দীর্ঘ সময় ধরে অনেকে দেশে টাকাও পাঠাতে পারছেন না। মালদ্বীপে বাংলাদেশীরা সবচেয়ে বেশি হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করলেও এমনও অনেকে আছেন যারা দালালদের লাখ লাখ টাকা দিয়ে মালদ্বীপে এসে এখন রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ করছেন। আবার রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে যারা কাজ করছেন তাদের নামমাত্র বেতন দেয়া হচ্ছে। অবৈধ কর্মীদের মালদ্বীপের আইডি কার্ড না থাকায় তাদের পাসপোর্ট মালিকরা আটকে রেখেছেন। এতে অসংখ্য কর্মী বেকায়দায় পড়ছেন। তারা কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও যেমন যেতে পারছেন না আবার দেশেও ফিরে আসতে পারছেন না। বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা বলেন, দেশটিতে কাজের চাহিদা ও পরিস্থিতি কেমন তা জানাতে দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। চাহিদার বিষয়টি জানতে পারলে আমরা সেই অনুযায়ী কর্মীদের ম্যানপাওয়ার দিতে পারি। অযথা লোকজনকে পাঠিয়ে বেকার বসিয়ে রাখার মানে নেই। হাইকমিশন এই হিসাবটি আজ পর্যন্ত পাঠাতে পারেনি। জনশক্তি রফতানিকারকরা আমাদের যদি ওই দেশের কোম্পানির অনুমতিপত্র দেখায় যে তাদের কর্মী প্রয়োজন তাহলে আমরা ক্লিয়ারেন্স না দিয়ে তো পারি না। আমাদের তো জানানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মী চাকরি নিয়েই যাচ্ছেন। এটা যে তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করা হবে সেই সুযোগ নেই। বেশ কয়েকটি দেশে অনলাইনে দেখা যায় কোন কোম্পানির কতজন কর্মী লাগবে। কিন্তু মালদ্বীপে তা সম্ভব না। কারণ ওদের সঙ্গে আমাদের ‘সার্ভার কানেকশন’ নেই। অনলাইনে তাদের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কোন তথ্য আদান-প্রদানই হয় না। সম্প্রতি দেশটিতে বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন, তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, অল্পদিনের মধ্যে রিপোর্টটি পাঠানো হবে। রিপোর্ট পেলে মালদ্বীপের বাজারে একটি শৃঙ্খলা ফিরবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমদের সঙ্গে কথা হলে বলেন, জনশক্তি রফতানিকারকরা কেউ ম্যানপাওয়ার ও ওয়ার্কপারমিট ছাড়া কর্মী পাঠায় না। এখন যদি অন্য কেউ জালিয়াতির মাধ্যমে ম্যানপাওয়ার ও ওয়ার্কপারমিট ছাড়া কর্মী পাঠান সে দায় বায়রার নয়।
×