ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপদেখো’- স্বপ্নপূরণের গল্প

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

স্বপদেখো’- স্বপ্নপূরণের গল্প

ডিপ্রজন্ম- জাহির ইকবাল নান্নু সম্পর্কে জানতে চাই জাহির ইকবাল- ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল আর মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে বড় হওয়া। অনার্সে এসে বিতর্ক ও কলেজভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উচ্চারণ’-এর সভাপতি হিসেবে সম্পৃক্ততা, যশোর সদরের সাংস্কৃতিক লীলাভূমি, ঐতিহ্যবাহী গ্রাম হাশিমপুরের ছেলে আমি। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা । ডিপ্রজন্ম- ‘স্বপ্নদেখো’ প্ল্যাটফর্মটির কাজ কি? জাহির ইকবাল-আমরা মূলত আমাদের কাজগুলোকে এগারো সেক্টরে ভাগ করে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে কাজ করছি। এগারোটি সেক্টরে ভাগ করার কারণ, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশটি এগারো সেক্টরে ভাগ হয়েছিল। তাই আমরাও এগারোটি সেক্টরে কাজ করছি। এগুলো হচ্ছে ১. স্বপ্নদেখো প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ও সেবা কেন্দ্র ২. কম্পিউটার প্রজন্ম ৩. স্বপ্নবুনি হস্তশিল্প ৪. এ্যাবাকাস আইটি ৫. কৃষি উন্নয়ন বিভাগ ৬. প্রকৃতি ও পরিবেশ উন্নয়ন ৭. জোনাকির মেলা পাঠশালা ৮. মাইকেল মধুসূদন ডিবেট ফেডারেশন ৯. মুক্তিযুদ্ধ জানার যুদ্ধ ১০. স্বপ্নদেখো গণ পাঠাগার ১১. শিক্ষা উন্নয়ন বিভাগ। ডিপ্রজন্ম- প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার শুরুটা কবে, কিভাবে? জাহির ইকবাল-২০১৩ সাল থেকেই আমরা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। তখন আমরা পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে কাজ শুরু করি, বর্তমানে আমরা ২১ জন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে কাজ করছি। ১১ জন প্রতিবন্ধী শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। ডিপ্রজন্ম-ইয়াং বাংলায় আবেদন করলেন যেভাবে, পুরো ধাপগুলো- জাহির ইকবাল-আমরা ২০১৫ সালে টেলিভিশনে ইয়াংবাংলার বিজ্ঞাপন দেখে একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা এ বছর নয় আগামীতে আবেদন করব। ২০১৭ সাল আসার পূর্বেই আমরা ইয়াংবাংলার প্রথমবার এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী কুড়িগ্রামের কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করি তার মাধ্যমে খুলনার ফাহিমা ও প্রিন্সের সঙ্গে পরিচয়। ফলে ইয়াংবাংলার বিভাগীয় মিট থেকে শুরু করে জেলা মিট প্রত্যেকটিতে আমরা অংশগ্রহণ করি। সেখান থেকে ফর্ম নিয়ে সরাসরি ও অনলাইন থেকেও আবেদন করেছিলাম। আবেদনের সঙ্গে আমাদের কার্যক্রমের একটি ছোট্ট প্রোফাইলও পাঠিয়েছিলাম। আবেদনের একদিন পর মেইল পেলাম যে, তারা আমাদের আবেদনটি পেয়েছেন। তারপর অনেকদিন পর মেসেজ পেলাম যে আমরা প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট হয়েছি! তারপর মেসেজ পেলাম প্রথম পঞ্চাশে স্বপ্নদেখো আছে! ঢাকায় ডাক পেলাম, চলে গেলাম। ডিপ্রজন্ম-যখন ঘোষণা করা হলো চ্যাম্পিয়ন আপনারা, অনুভূতি? জাহির ইকবাল-শ্রেষ্ঠ পঞ্চাশে ডাক পেয়ে ঢাকায় গেছিলাম, তখন থেকেই প্রথম সারিতে যাবার স্বপ্ন মনে উঁকি দিয়েছিল বার বার। ১৯ তারিখে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা গিয়ে ২০ তারিখে জানতে পারলাম আমরা শ্রেষ্ঠ ত্রিশে, সনদ নিলাম মাননীয় প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ স্যার ও জুনাইদ আহম্মেদ পলক স্যারের কাছ থেকে, চরম উত্তেজনা! কিন্তু মন পড়েছিল ২১ তারিখের দিকে শ্রেষ্ঠ দশে থাকব তো? মনে বিশ্বাস ছিল, হয় প্রথমে ডাক পাব নয়ত দ্বিতীয়তে। যখন প্রথমে স্বপ্নদেখোর নাম শুনলাম! আমি কেমন যেন অদৃশ্য এক স্বর্গীয় শান্তি অনুভব করলাম, চিৎকার দিয়ে মঞ্চের দিকে যাচ্ছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কোন এক রাজ্যজয়ের স্বীকৃতি নিতে রাজার কাছে যাচ্ছি আমি! মঞ্চে সালাম করে মাথা উঁচু করার আগেই খেয়াল করলাম চোখ ভিজে গেছে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখলাম বাংলাদেশের কোটি তরুণের আইডল আমার দিকে মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সে যে কি ভাল লাগা আমি বলে বোঝাতে পারব না! ডিপ্রজন্ম-মঞ্চে সজীব ওয়াজেদ জয় কি বললেন? জাহির ইকবাল-উনি প্রথমেই মাথা নেড়ে আমার সালামের উত্তর নিলেন এবং শুনলেন কি কাজ করেন আপনারা। আমি বললাম, উনার হাত থেকে ২০১৭ এর প্রথম এ্যাওয়ার্ড নিলাম। তারপর আমার বক্তব্য শুনে বললেন, ভাল বলেছেন আপনি, আমি বললাম থ্যাঙ্কইউ স্যার থ্যাঙ্কুইউ স্যার, দোয়া করবেন। ডিপ্রজন্ম-ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? জাহির ইকবাল-ভ্যবিষতে আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্কুল করতে চাই। গরিব-দুঃখীদের জন্য একটি ফ্রি স্কুল করতে চাই। হাইটেক পার্কে একটি জায়গার জন্য আবেদন করেছি, আইটি নিয়ে যশোরে বড় পরিসরে কাজ করতে চাই। নারীদের ক্ষমাতয়নের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছে দিতে চাই। বিতর্কে নিয়ে দেশব্যাপী ও দেশের বাইরে কাজ করতে চাই। ডিপ্রজন্ম-যশোর ছাড়া আর কোথাও কাজ করবেন কি? জাহির ইকবাল-যশোরের বাইরে তিনটি জেলাতে কাজ করেছি। অবশ্যই পরিকল্পা আছে কাজের পরিধি বাড়ানোর তবে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে চাই। স্বপ্ন তো আছেই দেশের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার। ডিপ্রজন্ম-তরুণদের উদ্দেশে পরামর্শ দিন জাহির ইকবাল-তরুণদের উদ্দেশে পরামর্শ হবে নিজের জন্য ও দেশের জন্য স্বপ্ন দেখুন। মাদক হতে কোটি হাত দূরে থাকুন। কারো জীবনই অত সহজ নয় যত সহজ আমরা দেখি। প্রত্যেকের নিজেস্ব গল্প আছে, আছে শত বাধা, সমস্যা, ভয় কিন্তু ওই ভয়কে জয় করতে হবে। এ-প্লাসই জীবনের সব নয়, জীবনের শেষ স্টেশনের দিকে তাকিয়ে দেখুন আপনি জীবন যুদ্ধে সফল হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন কি না? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ তাহলে এগিয়ে যান। উত্তর ‘না’ হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন, নতুন পরিকল্পনা করুন তারপর আবার এগিয়ে যান। আপনার আমার জীবন সময় ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে গড়া তাই সময় থাকতে পরিশ্রম করুন, সফলতা আসবেই।
×