ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দূর্বাঘাসে শিশির বিন্দু প্রকৃতিতে শীতের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

দূর্বাঘাসে শিশির বিন্দু প্রকৃতিতে শীতের আমেজ

খোকন আহম্মেদ হীরা ------------------------ দূর্বাঘাসের মাথায় শিশির বিন্দু ও সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল হলেও আমাদের দেশে শীত শুরু হয় কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। সে অনুযায়ী প্রকৃতির নিয়মে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। বিকেল থেকে শীতল হাওয়া আর সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে ভোরের হালকা কুয়াশায় সকালের সূর্য উঠার পর দীর্ঘসময় পর্যন্ত গাছ গাছালিতে জমে থাকা শিশির বিন্দু বলে দিচ্ছে শীত এসেছে। গত ২৯ অক্টোবর সোমবার সকাল থেকে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। দেখলে মনে হয় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে পুরো শীত মৌসুম চলছে। শীত মানে অনেকের কাছে আনন্দের। আর কারও কাছে যন্ত্রণার। তবে বেশিরভাগ মানুষ শীত মৌসুমকেই পছন্দের সময় হিসেবে গণ্য করেন। শীতের সময় ভ্রমণপ্রেমীরা বিভিন্ন জেলার পর্যটন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে থাকেন। তবে শীত মানে ভাপা পিঠার মধুর গন্ধ। শীত মানে সকালে মিষ্টি খেজুর রসের সঙ্গে মিতালী। শীতের সময় যতসব রুচিশীল খাবারের আয়োজন চলে গ্রাম কিংবা শহরে। গত কয়েকদিন থেকে দক্ষিণাঞ্চলে সকালে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে গ্রাম বা শহরের রাস্তা-ঘাট। সকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে অনুভূত হচ্ছে শীত। বিশেষ করে কার্তিক মাস পড়ার পর থেকে কুয়াশা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোরে দুর্বাঘাসের মাথায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। তাই সবখানেই শীতের আমেজ বইতে শুরু করেছে। বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় বাতাসের তাপমাত্রা কমে আসায় সকালের দিকে শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর রাতের দিকে গরম কাপড় গায়ে জড়াতে হচ্ছে লোকজনকে। এতে করে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে সর্দি জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে এ জনপদের প্রকৃতিতে আগাম শীতের আগমন ঘটেছে। আগাম শীতে লেপ-তোষক বানানোর ধুম জেলার সর্বত্র আগাম শীত উপলক্ষে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লেপ-তোষক তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। রাতে ঠা-া আর সাতসকালে ঘাস, লতাপাতার ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দু জমে শীতের আগমনী বার্তায় লেপ-তোষক বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খোশমেজাজে দিন কাটাচ্ছেন কারিগর ও লেপ-তোষক ব্যবসায়ীরা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ শীত মোকাবেলায় লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে ভিড় করতে শুরু করেছেন। গত কয়েকদিন বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখা গেছে, লেপ-তোষক কারিগরদের ব্যস্ততা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে দিনরাত সমানে অর্ডার নেয়া, আর তৈরি করা লেপ-তোষক সরবরাহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। শীত মৌসুমের শুরুতে গ্রামগঞ্জে ঘুরে গৃহস্থের চাহিদা অনুযায়ী লেপ ও তোষক বানানোর কাজ করছেন মৌসুমী কারিগররা। বর্তমানে একটি লেপ বানাতে খরচ নেয়া হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড়, সুতা এবং তুলার দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ে ধোনকাররা জানান, এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। সারাবছর তাদের প্রায় অলস সময় কাটাতে হয়। শীতের সময় কয়েক মাস তাদের ব্যবসা ভাল হয়। শীতের প্রকোপ যত বেশি বৃদ্ধি পাবে তাদের কাজও তত বেশি বেড়ে যাবে। বেচাবিক্রি বেড়েছে পোশাকের দোকানে অপরদিকে শীতের আগমনী বার্তায় বেচাবিক্রি বেড়েছে শীতের পোশাকের দোকানগুলোতে। বিশেষ করে আগে থেকেই বস্ত্রবিতান ও পোশাকের দোকানগুলোতে বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের রুচিশীল শীতের পোশাক। দাম কম পাওয়ার আশায় লোকজন আগে থেকেই শীতের পোশাক কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। একইসঙ্গে ফুটপাথের দোকানগুলোতেও বিক্রি শুরু হয়েছে শীতের পোশাক। তবে এবার শুরুতেই সবধরনের পোশাকের দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া শীতের আগমনী বার্তায় বরিশালের গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সকাল থেকেই গাছিদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। একটা মোটা রশি, হাসুয়া আর লাঠি নিয়ে গাছিরা ছুটে চলেন এ গাছ থেকে সে গাছে। কাজ শুধু খেজুর গাছ থেকে রস বের করার স্থান সুন্দর করে পরিষ্কার করা। কোমরে মোটা রশি বেঁধে হাতে হাসুয়া নিয়ে গাছে উঠেন গাছিরা। রস ও গুড় পেতে বেশ আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে গাছিদের। তখন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামবাংলার কৃষকের ঘরে ঘরে খেজুর রস, গুড়, আমন ধানের পিঠাপুলি নিয়ে চলবে নানারকম উৎসব। ইতোমধ্যে জেলার সদর উপজেলা, বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দীগঞ্জ, বানারীপাড়া, আগৈলঝাড়া, হিজলা, গৌরনদী, মুলাদী, উজিরপুরসহ অন্যান্য উপজেলার সর্বত্র চলছে গাছিদের রস সংগ্রহের পূর্ব প্রস্তুতি।
×