স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্রিশ বছর ধরে সে ফেনসিডিল ব্যবসা করে আসছে। এর মধ্যে ধরা পড়েছে মাত্র ৫ বার। বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাস করেছে মোট ৮ মাস। বারবারই জামিনে এসে ফের শুরু একই বাণিজ্য। থানা, পুলিশ, সোর্স, মস্তান, রাজনীতিক নেতা, আদালতের পেশকার-সবাইকে ভাগ-বাটোয়ারা দিয়ে ঠিকমতো ম্যানেজ করেই তিন দশক ধরে এ পেশায়। সেজন্য তার ব্র্যান্ডিং ইমেজও রয়েছে পুরান ঢাকার ‘ফেন্সি সম্রাট’ হিসেবে। তাতেও তার আক্ষেপ নেই। জীবনে যা অর্জনের- সবটাই করেছে। গাড়ি-বাড়ি টাকা-পয়সা, জমি-জমা, ব্যাংক-ব্যালান্স কি নেই?
শনিবার রাতে তাকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিলসহ যখন আটক করা হয়, তখন অবলীলায় স্বীকার করতে কার্পণ্য করেনি ফেন্সি সম্রাট হওয়ার কাহিনী। তার আসল নাম শাহাবুদ্দিন ঘরামি। বরিশালের বাসিন্দা হলেও তিন দশক ধরেই বসবাস পুরান ঢাকার সুরিটোলা এলাকায়। শনিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের রমনা জোনের পরিদর্শক কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ১৫১ লুৎফর রহমান লেনের বাসা থেকে এক বস্তা ফেনসিডিলসহ তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী মালকেও আটক করা হয়। তাদের দুজনকেই বংশাল থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করা হয়। আজ মঙ্গলবার তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন জানাবেন কামরুল ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ধরা পড়ার পর শাহাবুদ্দিন ঘরামি ত্রিশ বছর ধরে কিভাবে সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিল এনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি হারে বিক্রি করত তার নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে এই ফেন্সি সম্রাট। সে নিজে যেমন ফেনসিডিল সেবন করে, তেমনি অন্যকেও সেবনে উদ্বুদ্ধ করে। শুধু তার মদদেই অন্তত দশ হাজার তরুণ-তরুণী ফেনসিডিলে আসক্ত হয়েছে। প্রথমে সে ফ্রি খাওয়ার অফার দেয়। মাত্র এক মাসেই একটা তরুণকে ফেনসিডিলে আসক্ত করার মতো জাদুকরি গুণ রয়েছে তার। এতে তার কোন অনুশোচনা নেই। বরং এভাবেই সে পুরান ঢাকার শীর্ষ ফেন্সি সম্রাট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে।
কামরুল ইসলাম জানান, আগে সে যশোর সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল আনত। বছর কয়েক ধরে কুমিল্লার সোয়াগাজী সীমান্ত এলাকা দিয়ে ফেনসিডিলের চালান আনে। এক সময় বিপুল পরিমাণ আনলেও এখন সেটা কমিয়ে মাসে মাত্র এক হাজার বোতলের একটি চালান আনে। প্রতিটি ফেনসিডিল কিনে সীমান্তে থেকে রাজধানীতে আনা পর্যন্ত তার খরচ হয় ৬শ’ টাকা। সেটা বিক্রি করা হয় ১২শ’ টাকা। একটি বোতলেই তার লাভ হয় ৬শ’ টাকা। এতে মাসিক চালানপ্রতি লাভ থাকে ৬ লাখ যা বছরে হয় ৭২ লাখ। এমন লাভের ব্যবসায় কোটিপতি হওয়া কতটা সহজ তা নিজেই স্বীকার করেছে শাহাবুদ্দিন। বলেছে, এত বছরে মাত্র ধরা পড়েছে ৫/৬ বার। তাতে থানা পুলিশ আদালতে খরচ গেছে বড়জোর লাখ ত্রিশেক টাকা। এজন্যই তো এ পেশাটার তার কাছে সোনার খনির মতো লাগে।
মাদক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা সীমান্তে এখন শরণার্থীদের ঢলে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী থাকায় ইয়াবার চালান অনেকটাই কমে এসেছে। কয়েকটি ইয়াবার চালানসহ শরণার্থীদের আটক করার পর এখন ঢাকাসহ দেশব্যাপী ইয়াবা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে হঠাৎ বেড়েছে ফেনসিডিলের চাহিদা। গত এক মাসেই রাজধানীতে ক’টি ফেন্সির চালান আটক করা হয়েছে। ইয়াবার ঘাটতি মেটাতে ফেনসিডিলের চাহিদা যেমন বেড়েছে চোরাই আমদানি এবং দামও তেমন বেড়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: