ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়ের জরুরী বৈঠকে বাজার তদারকির সিদ্ধান্ত

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারতের বিকল্প সোর্স কান্ট্রি থেকে আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারতের বিকল্প সোর্স কান্ট্রি থেকে আনা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দাম নিয়ন্ত্রণে ভারতের পাশাপাশি বিকল্প সোর্স থেকে পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানিকারকদের মিসর, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকে জরুরীভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য নির্দেশ দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে মজুদ পেঁয়াজ বাজারে আনতে মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর নিয়মিত বাজার মনিটরিং করবে। সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পেঁয়াজের বর্তমান দাম, মজুদ, চাহিদা ও আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত সচিব শামীমা ইয়াসমিনের (এনডিসি) সভাপতিত্বে সভায় মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, সম্প্রতি কয়েকটি পণ্যের দাম বেপরোয়া গতিতে বাড়ছে। এর মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামীমা ইয়াসমিন (এনডিসি) জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন দাম যাতে কমে আসে সেই পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের প্রধান সোর্স কান্ট্রি ভারত। সম্প্রতি বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায় বন্যা ও অতি বৃষ্টি অন্য সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম চড়া। তিনি বলেন, দাম বাড়ার কারণে মজুদ পেঁয়াজ আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় মজুদ করে ফেলা হচ্ছে। এটা একটি সমস্যা। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বিকল্প সোর্স থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হবে। আশা করছি, সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না। এদিকে, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত মুনাফায় পকেট ভারি হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্টরা লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে পেঁয়াজের বাজার। গত বছর অক্টোবর মাসের এই সময়ে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০-৩৬ টাকায়। সেই একই পেঁয়াজ কিনতে এই শহরের এক ভোক্তাকে এখন গুনতে হচ্ছে ৬৫-৮৫ টাকা পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ এক বছরে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩ গুণ এবং দেশী পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণেরও বেশি। অথচ দেশী উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে মসলা জাতীয় এই পণ্যটির দাম বাড়ার কথা নয়। অত্যাবশ্যকীয় নিত্য পণ্য হিসেবে শূন্য শতাংশ শুল্কে আমদানি করা হলেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা। জানা গেছে, আর দেড়মাস পরে নতুন পেঁয়াজ উঠবে বাজারে। নতুন পেঁয়াজ আসার আগ মুহূর্তে এই পণ্যটির দাম বাড়ার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। সাধারণত মৌসুম সামনে রেখে এই সময়টাতে মজুদ দেশী পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হয়ে থাকে। এবারও বাজারে ভালমানের দেশী পেঁয়াজের কোন ঘাটতি নেই। সরবরাহ ভাল থাকার পরও দাম বাড়ছে হু হু করে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে পণ্যটির মজুদকারী, আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত বলে জানা গেছে। গত কোরবানি ঈদের আগে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হলে ওই সময় কমে আসে পেঁয়াজের দাম। এরপর ব্যবসায়ীদের কৌশলেই চলছে বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬২ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে জাত ও মানভেদে ৭৫-৮৫ টাকায়। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে বা কমলে দ্রুত খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ে। এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা, যা বর্তমানে ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা। এখন তা সর্বোচ্চ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। তবে, পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানান, বাজারে দেশী, ভারতীয়, চীনা, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ সরবরাহ রয়েছে। যদিও খুচরা বাজারে আমদানি করা ভারতীয় এবং দেশী পেঁয়াজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাবদ ব্যবসায়ীদর খরচ পড়েছে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ টাকা। অথচ রাজধানীর বাজারে এই পণ্যটি দ্বিগুণ ও আড়াইগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।
×