বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শাস্তি বাড়িয়ে ‘বালাইনাশক আইন ২০১৭’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা প্রতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া বৈঠকে ২০১৭ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে নয় দশমিক ৪৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। এছাড়াও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী শিলা ইসলামের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে গত ২০ মার্চ বালাইনাশক আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। ১৯৭১ সালের অধ্যাদেশ ধরে পেস্টিসাইড সেক্টরটা চলছিল। পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্সকে বাংলায় অনুবাদ করে একটু পরিমার্জন করে নতুন বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) আইন করে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, কীটনাশক শব্দটি সবকিছু কাভার করে না, এজন্য বালাইনাশক দিয়ে সবটা কাভার করা হয়েছে। পোকা, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, কৃমি, ভাইরাস, আগাছা বা ইঁদুরজাতীয় প্রাণী বা অন্য উদ্ভিদ বা কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, ধ্বংস প্রশমনের বিষয় বালাইনাশকের মধ্যে চলে আসে। পুরনো আইনটিকে ঠিক রেখে নতুন আইনে অপরাধের শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। রেজিস্ট্রার্ড ব্র্যান্ডের কোন বালাইনাশক বিক্রি বা বিক্রির জন্য উন্মুক্ত, মজুদ বা বিজ্ঞাপন দিলে যার ট্যাগ, লেবেল বা প্যাকেজ চিহ্নিত ব্র্যান্ডের প্রকৃতি, উপাদান বা গুণাগুণ যুক্ত না হলে এবং বিজ্ঞাপনে বালাইনাশক মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কেউ এ অপরাধ করলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ-ে দন্ডিত করা যাবে। একই অপরাধ আবার করলে জরিমানা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ও অনাদায়ে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উৎপাদনকারী বালাইনাশক আইনের বিধান অনুযায়ী উৎপাদন করা হয়েছে বলে ডিলারকে মিথ্যা নিশ্চয়তা দিলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবেন। বালাইনাশকের নিবন্ধন নম্বরের অননুমোদিত ব্যবহার, বালাইনাশকের মান কমানো, পরিদর্শককে কর্তব্য পালনে বাধা দেয়া ও নিবন্ধনের সময় মিথ্যা তথ্য দিলে ৭৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছর থেকে দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হবেন। পরিদর্শক বা উদ্ভিদ সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারী কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ছাড়া এ আইনের অধীনে আদালত কোন মামলা আমলে নেবে না। তিনি বলেন, এ আইনের আওতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের যে অংশটুকু মোবাইল কোর্ট আইনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক, সেক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বিচার করতে পারবেন।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার বেড়েছে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে ৮০টি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৯টি, ২১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে মন্ত্রিসভার আটটি বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৫৬টি, যার মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৬টি আর ২০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
শফিউল জানান, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে সাতটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। আর সংসদে পাস হয়েছে ছয়টি আইন। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছিল চারটি। ওই সময়ে সংসদে ১০টি আইন পাস হয়।
৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’
প্রতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণা এবং দিসবটি পালনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২২ মার্চ প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এজন্য ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এর আরও একটা কারণ ফেব্রুয়ারি মাসটা এলে বই নিয়ে আমাদের দেশে বেশ মাতামাতি হয়। একুশে গ্রন্থমেলা, একুশে ফেব্রুয়ারি- এগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেহেতু ৫ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর হয়, সেজন্য এটাকে ওই দিনে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী শিলা ইসলামের মৃত্যুতে শোক
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী শিলা ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিলা ইসলামের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে। গত ২৩ অক্টোবর লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান ক্যান্সারে আক্রান্ত শিলা ইসলাম। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর চলতি বছরের এপ্রিলে জার্মানির একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হলে তাকে লন্ডনের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বালাইনাশক আইনের খসড়া অনুমোদন
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার বেড়েছে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: