ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কিছুদিন আগেও সঞ্চয়কারীরা সঞ্চয়পত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। অস্বাভাবিকভাবে বিক্রি হচ্ছিল সঞ্চয়পত্র। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সরকারও এ খাত থেকে ঋণ নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে তিন হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে এ খাত থেকে এটিই সরকারের সবচেয়ে কম ঋণ গ্রহণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। আর প্রথম মাস জুলাইয়ে ঋণ নিয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এই হিসাবে, সরকার জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমিয়েছে এক হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘এখন যে গতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক গতি।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘সাধারণ মানুষজন এখনও সঞ্চয়পত্রকেই নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করেন। তবে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। এ কারণে এটি বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।’ তিনি মনে করেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমা সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে। এতে সরকারের ওপর থেকে উচ্চ সুদের বোঝা কিছুটা কমে আসবে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে গত মে মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। সুদের হার কমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই অর্থবছরের শেষদিকে এসে সঞ্চয়পত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এমনকি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল তিন হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। তার আগের দুই মাস আগস্ট ও ?জুলাইয়ে ঋণ ছিল যথাক্রমে চার হাজার ২৯৭ কোটি ও তিন হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এরমধ্যে শেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেয় পাঁচ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১২ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। তিন মাসের একত্রিত হিসাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ৯ শতাংশ। অবশ্য চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৩ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে। এই অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার কথা ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের দিকে মানুষের আগ্রহের বড় কারণ ব্যাংক আমানতের নিম্ন সুদ হার। ব্যাংকে বর্তমানে আমানতে সুদের হার এখন চার থেকে ছয় শতাংশের মধ্যে। তবে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের কাছাকাছি। পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ। পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
×