ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

মিয়ানমারের উন্নয়ন ও শান্তির শর্ত রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

মিয়ানমারের উন্নয়ন ও শান্তির শর্ত রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব

বাস্তবিক, একমাস আগেও আমরা, সরকার, জনগণ জানতেও পারেনি, অন্ধকার কঠিন সেনা শৃঙ্খলে বন্দী মিয়ানমার আধা গণতন্ত্রে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে চীন, ভারতের কাছে এবং রাশিয়ার কাছে গত দু’বছরে বিপুল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে! একটা বিষয় তো সত্য- ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের অবস্থান কিন্তু প্রায় একই। একই বঙ্গোপসাগরের কূলে আমাদের উভয়ের এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান। রাখাইন রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধরা মিলে মিশে দীর্ঘকাল যাবত বসবাস করেছে। আশ্চর্য হলেও সত্য, রাখাইন রাজাদের মুদ্রার একপিঠে থাকত বুদ্ধদেবের মূর্তি ও অপরপিঠে থাকত আরবী কলেমা! সপ্তদশ শতক পর্যন্ত এ রীতি প্রচলিত ছিল। এ সময় উপকূলজুড়ে পর্তুগীজ জলদস্যুদের অত্যাচারও চলছিল। রাখাইনের রাজধানীকে কবি আলাওল রোসাং হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে শব্দ থেকে সম্ভবত রোহিঙ্গা শব্দের উৎপত্তি। ১৭৮৪ সালে সম্পদশালী রাখাইন রাজ্য বামার রাজা দখল করে নেয় এবং রাখাইনের মুসলিম-বৌদ্ধ নির্বিশেষে জনগণের ওপর অপ্রত্যাশিত হত্যা, নির্যাতন চালায় যে দেশটি ছিল তাদের শত শত বছরের পূর্ব পুরুষদের স্থায়ী আবাস। এ সময় হাজার হাজার রোহিঙ্গা ও রাখাইন নাফ নদী পেরিয়ে চট্টগ্রামে আসে, পরে এদের অনেকে পিতৃভিটায় ফিরে যায়, অনেকে চট্টগ্রামের কক্সবাজার এলাকায় থেকে যায়। এদেরই উত্তরপুরুষ এখনও বৌদ্ধ রাখাইন গোষ্ঠী হিসেবে কক্সবাজারে বাস করছে, যাদের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের মানবাধিকার রক্ষা করে চলেছে। আউং সান সুচির পিতা আউং সানের আমল পর্যন্ত বৌদ্ধ- রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি নিহত হলে, ক্রমশই বার্মার বামার সেনাবাহিনী এবং বর্মী বৌদ্ধ সম্প্রদায় মুসলিম রোহিঙ্গাবিদ্বেষী হয়ে ওঠে এবং ১৯৮২ সালের সেনা শাসক নতুন প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে বার্মার ১৩৫ উপজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং রোহিঙ্গাদের বাদ দেয়। এ নীলনক্সা বাস্তবায়ন শুরু হয় সুচির পিতা আউং সান ও তার মুসলিম পরামর্শক আবদুর রশীদকে হত্যা করে সামরিক শাসন শুরুর পর পর। এরপর থেকে বার বারই রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনা নির্যাতন নেমে এসেছে যার ফলে তারা বার বার নাফ নদী পার হয়ে চট্টগ্রামে প্রাণ রক্ষায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি ২০১৭-এর মধ্য আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাপল্লীতে সেনা কর্তৃক যে অমানুষিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছে, হচ্ছে তা দেখে এটি স্পষ্ট হয় যে- এটি পরিকল্পিত গণহত্যা এবং একমাত্র রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করণের লক্ষ্যেই পরিচালিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এবার এমন হলো এবং কেন ভারত, চীন, রাশিয়া, বাংলাদেশের পরম মিত্রদেশগুলো এ গণহত্যার বিরোধিতা করা থেকে বিস্ময়করভাবে বিরত থাকল? তা ছাড়া, বাংলাদেশে ভারত ও চীনের যে বিপুল বিনিয়োগ করার কথা ছিল, কেন তার খুব সামান্যই এসেছে? এর একটি বড় কারণ সম্ভবত আমাদের ধীর গতির আমলাতন্ত্রের প্রকল্প প্রস্তুত করতে ও বাস্তবায়নে যে সময় ব্যয় হয়, তার চেয়ে তিন-চারগুণ দ্রুত হারে বার্মার নতুন শাসক-প্রশাসক তাদের ভৌগোলিক সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারত ও চীনকে গ্যাস- তেল পাইপলাইন স্থাপন করতে দিয়েছে, চীন থেকে বার্মার নতুন স্থলপথের যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছে, ভারতকে ইপিজেড তৈরি করতে, বর্তমানে স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠিত করতে দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাস্তব সহায়তা প্রদান করছে। অবশ্যই মিয়ানমারে এসব ঘটেছে বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের চাইতে অনেক দ্রুত গতিতে- এটি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে রাখা উচিত ছিল। বর্তমান পৃথিবীতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ এবং তেল-গ্যাস এতটাই প্রয়োজন যে, যতদিন সেনাশাসিত বার্মা চীন-ভারতের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না, ততদিন বাংলাদেশ তাদের কাছে উন্নয়নের অনেক শর্ত পূরণে সক্ষম একমাত্র দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে আদরণীয় ছিল। বলাবাহুল্য, ২০১৫’ এর পর সুচির উত্থানকে আধা গণতন্ত্র গণ্য করে বার্মার সেনাবাহিনী তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিদেশী বিনিয়োগ লাভের একটি খুঁটি হিসেবে গ্রহণের সুযোগ পেল। অন্যদিকে ভারত ও চীন দেখল বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ধীর গতি তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না, বরং ভারতের দ্বারা উলফা, গোর্খা, মনিপুর ইত্যাদি স্থানের বিদ্রোহীদের বার্মা সেনা ও সরকারের সাহায্যে দমন করা সহজতর হবে। চীন সিট্যুয়ে (আকিয়াব) বন্দরকে আধুনিক মানে উন্নীত করেছে, গ্যাস-তেল পাইপ লাইন বসানো হয়ে গেছে, যোগাযোগের রাস্তা তৈরি হচ্ছে, ভারত ইপিজেড তৈরি করছে এবং স্থলবন্দর তৈরি করতে চাইছে। এসব যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে, ভারতের উত্তরের রাজ্যগুলো বার্মার বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। চীন-তো গভীর সমুদ্রবন্দর যেটি আমাদের দেশে করবার কথা ছিল, সেটি বার্মার সিট্যু এ বন্দরকে কেন্দ্র করে তৈরি করছে। আর রাশিয়া তো বার্মায় অস্ত্র বিক্রি করছে, নতুবা রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক যে বাণিজ্য অবরোধে পড়েছে, ফলে তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঠিক রাখতে বার্মাকে অস্ত্র ছাড়া আর কিই বা বিক্রি করবে? তবুও, এটি আশ্চর্য যে, রাশিয়া ও চীন নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণের বিরুদ্ধে ভেটো দিতে চেয়েছে! তবে কি ভেটো গণহত্যাকারীকে রক্ষা করায় ব্যবহৃত হতে পারে? জাতিসংঘে যদি গণহত্যারকারী এমন সুরক্ষা পায়, তাহলে মানব সভ্যতা রক্ষা হবে কিভাবে? যাহোক, কতগুলো তথ্য আমাদের স্মরণ রাখা দরকার, বার্মার সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশ ২০০০ কিলোমিটার বর্ডার দ্বারা যুক্ত এবং এই প্রদেশেই ইয়াংসি ও পার্ল নদীর বদ্বীপ শুরু হয়েছে যেটি চীনকে বার্মার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকেও যুক্ত করেছে। সেজন্য পণ্য রফতানির নতুন একটি রুট চীন-মিয়ানমারকে যুক্ত করতে ‘ইউনান আন্তর্জাতিক প্যাসেজ’ নামের প্রকল্পে চীন ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ লক্ষ্যে চীন মিয়ানমার পর্যন্ত রাস্তা, হাইওয়ে উন্নত করেছে। এখন রুটগুলো হচ্ছে কুনমিং-রুইলি-ইয়াংগন, অপরটি, কুনমিং-টেংচং-মিয়ানমার-ভারত, তবে এর মধ্যে কুনমিং-রুইলি-মিউজ-মান্দালয়-ইয়াংগণ চীন ও বার্মার মধ্যেকার প্রধান বাণিজ্য রুট হয়ে উঠেছে। এই স্থলপথ ছাড়াও চীনের মিয়ানমারের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে যেটি রাখাইন রাজ্যের কিউকফুকে যুক্ত করবে। তাছাড়া রাখাইনে চীন ২.৪৫ বিলিয়ন ব্যয়ে যে গ্যাস-তেল পাইপলাইন তৈরি করেছে সেটি রাখাইনের কিউকফু থেকে পশ্চিম চীন পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যের তেল মালাক্কা প্রণালী হয়ে চীনে আসার বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে তৈরি হয়েছে, তা নয়, বরং ভবিষ্যতে বার্মার নিজস্ব তেল-গ্যাস উৎপাদনে চীন প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও আমদানি করবে না, তা হতে পারে না। এর বাইরে, চীন ৭.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে রাখাইনের ‘কিউকফু স্পেশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং ‘গভীর সমুদ্রবন্দর’ গড়ে তুলতে কাজ করছে। তার ওপরে, চীনা ও বামার জাতি একই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত, এদের ভাষাও একই ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত এবং তাদের ধর্মও বৌদ্ধ ধর্ম। এ হিসেবে তারা আত্মীয়তার সম্পর্কের বন্ধনকে গ্রাহ্য করবে- এটাই স্বাভাবিক। রাখাইনে চীনের স্বার্থ অনেক বিশাল, এটা পরিষ্কার যে চীন বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়নে, এমনকি ব্রিক্স-এর প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দিয়ে গত দু’বছরে মিয়ানমারে যে বিপুল কর্মযজ্ঞ, বিনিয়োগ করেছে, তা চীনের স্বার্থকে, বিশেষত বঙ্গোপসাগরে চীনের যুক্ত হবার অবস্থানকে দৃঢ় করতে যা যা প্রয়োজন তার সবই মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী দিতে পেরেছে এবং দ্রুতই দিয়েছে। এটি প্রমাণ করে, এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশে^ ধীরতার, শ্লথ গতির কাজের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। নেই প্রতিবেশী দেশে কারা কী তৎপরতা চালাচ্ছে, সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবার সুযোগও। এসবের পাশে, বাংলাদেশের লালফিতায় প্রকল্প আটকে থাকা, ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা চীনকে আগ্রহ হারাতে ইন্ধন জুগিয়েছে- এ আমাদের না বোঝার কথা নয়। আমলারা যে এখনো ডিজিটাল হয়নি, তার জন্য মনে হচ্ছে আরও বহু খেসারত দিতে হবে। তবু, আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর আমরা আগ্রহী অন্য কোন উন্নত রাষ্ট্রের সহায়তায় দ্রুত শুরু করলে এর একটা সুফল পাওয়া যাবে। বার্মায় সমুদ্রবন্দর থাকলেও আমাদেরটাও হোক, আমাদের সেবার মান উন্নত করে আমরা বিভিন্ন আগ্রহী দেশকে সেবা দিতে সক্ষম হব। এর পাশে, আমাদের জাতিসংঘের সহায়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অটল থাকতে হবে। আমরা আমাদের দেশপ্রেমিক জনগণকে নিয়ে তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও রক্ষা করব, কোনক্রমে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত হতে দেব না, এখন সরকার, সুশীল সমাজ, তরুণ প্রজন্ম ও জনগণকে এই শপথ নিয়ে কাজ করতে হবে। আরও উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি অবশ্যই ভারতের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়েছে, যদিও বর্ডারে স্বাধীনতাকামী জাতি গোষ্ঠী দমনে মিয়ানমারের সেনা অভিযান ভারতের প্রয়োজন। এর আগে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ভারতের জঙ্গী গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে ভারতকে সাহায্য করেছে। ভারতও রাখাইনে বন্দর, নদী ড্রেজিং এবং স্থলপথে যোগাযোগের জন্য মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যার একটি ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যা- হাইওয়ে যেটিতে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত নয় কেন, এর হেতুটা অস্পষ্ট। এটা ঠিক, মুসলিমরা জঙ্গী- এ ধারণা আল কায়েদা, তালেবান, আইএস, আলশাবাব, বোকোহারাম এবং স্থানীয় বিভিন্ন নামে উগ্র মুসলিম জঙ্গী গোষ্ঠীর উত্থান ও সহিংস হত্যাযজ্ঞ ধর্ম নিরপেক্ষ ফকির লালনসাঁই, শাহ আবদুল করিম, হাসন রাজা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশকে পুরোপুরি নির্ভরশীল, নিরাপদ গণ্য করতে সম্ভবত দ্বিধান্বিত অনেক দেশ। জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। এসবের মধ্যে আমাদেরও ভারত, চীনের আগ্রহের কেন্দ্রে আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে হবে। সম্প্রতি, একটি জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক বর্মী পুলিশ-সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু বর্মী পুলিশ ও সেনা সদস্য নিহত হলে বর্মী সেনারা রোহিঙ্গা গ্রামে হামলা, হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ-শিশুকে বাধ্য করেছে বাস্তুত্যাগ করতে। প্রাণ রক্ষার্থে দেশত্যাগ করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আগে আসা ৫ লাখ রোহিঙ্গার পর-এবার এখনও পর্যন্ত ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক তৈরি ক্যাম্পে অবস্থান করছে অথচ, মাত্র ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, এদেশের পক্ষে এত বাস্তুচ্যুত মানুষের ভার গ্রহণ এক কথায় অসম্ভব। এদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য শুধু বার্মা-বাংলাদেশ চুক্তি করলে সেটি বার্মার সেনা ও সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে মনে হয় না। সেজন্য ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার দ্বারা একদিকে গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, অপরদিকে আন্তর্জাতিক চাপে, চীন, রাশিয়া, ভারতের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি, আমাদের সরকারসহ সব জাতি রাষ্ট্রকে, মানবাধিকার সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি দাবি উত্থাপন করতে হবে- জাতিসংঘ, এর নিরাপত্তা পরিষদসহ সব অঙ্গ সংগঠন গঠিত হয়েছে মানব কল্যাণে, জনমানুষকে অন্যায় নির্যাতন, হত্যা ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তা দেবার জন্য। এই পটভূমিতে, নিরাপত্তা পরিষদের ‘ভেটো’ ক্ষমতাটি ব্যবহার করা যাবে একমাত্র ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষে এবং কখনই গণহত্যাকারী অপরাধীর পক্ষে এই ‘ভেটো’ ব্যবহার নিষিদ্ধ ও অকার্যকর থাকবে। নতুবা, গণহত্যাকারীদের কাছে পরাজিত হবে পুরো মানবজাতি, মানবকল্যাণ ও মানব সভ্যতা। এই দাবিটি জাতিসংঘ পুনর্গঠন ও জাতিসংঘকে আরও যুক্তিপূর্ণভাবে জনকল্যাণকর করে তুলতে সাহায্য করবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। তথ্য সাহায্য : ইফতেখার ইকবাল, লোকেটিং রোহিঙ্গা ইন টাইম অ্যান্ড স্পেস, দি ডেইলি স্টার ম্যাগাজিন, ইন দ্য শ্যাডো অব ভালোলেন্স, অক্টোবর, ২০১৭। লেখক : শিক্ষাবিদ
×