ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার খাল পুনরুদ্ধার

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকার খাল পুনরুদ্ধার

প্রলম্বিত বর্ষা মৌসুমের সর্বশেষ নিম্নচাপজনিত কারণে একটানা তিন দিনের বৃষ্টিতে আবারও প্রায় ডুবতে বসেছিল ঢাকা। সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র জলাবদ্ধতা। জনজীবন, অফিস-আদালত হয়ে পড়েছিল প্রায় অচল, স্থবির। এ সময় সরকার, সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজউকসহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পুনরায় উঠে এসেছিল রাজধানীর ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও পয়োনিষ্কাশনের অব্যবস্থার সমস্যা-সঙ্কটসমূহ। এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রায় একবাক্যে রায় দিয়েছিলেন যে, রাজধানী ঢাকাকে বাঁচাতে গেলে সর্বাগ্রে পুনরুদ্ধার এবং সংস্কার করতে হবে হারিয়ে যাওয়া খালগুলো। একই সঙ্গে ঢাকার চারপাশে ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদী নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে পূর্বাবস্থায়। ঐতিহাসিক ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় এক সময় ৫৩টি, মতান্তরে ৪৩টি খাল ছিল নগরের জলাবদ্ধতা ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য। সেগুলোর অধিকাংশ বর্তমানে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দু’চারটে যা অবশিষ্ট আছে তাও বেদখলে এবং অবৈধ নানা স্থাপনায় পরিপূর্ণ। সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অন্তত ৪টি খালের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে সমর্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব খালের দু’পাশে অন্তত ৩২৪টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। তালিকাও প্রস্তুত। অতঃপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই উচ্ছেদ অভিযান যেন নিছক লোকদেখানো না হয়। দখল-বেদখলের লুকোচুরি খেলা যেন বন্ধ হয় চিরতরে। একদিকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে অসহনীয় যানজট ঢাকার জনজীবনকে প্রায় স্থবির করে দিয়েছে। যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বছরের পর বছর ধরে উড়াল সড়ক নির্মাণ, কাটাকাটি, নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতা, সর্বোপরি মৌসুমী বৃষ্টিপাত জনজীবনের প্রলম্বিত দুর্ভোগের জন্য প্রধানত দায়ী। বেদখল হয়ে যাওয়া ৫৩টি খালও এই জলাবদ্ধতার জন্য কম দায়ী নয়। অন্যদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীও মুমূর্ষুপ্রায়। এসব নিয়ে প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজউক, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসার চাপানউতোর খেলাসহ সভা-সেমিনারে সুপারিশ প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। প্রবল বর্ষণে তো বটেই, এমনকি সামান্য বৃষ্টিতেও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ পরিস্থিতি। হাটবাজার, সুপার মার্কেটও বাদ যায় না জলাবদ্ধতা থেকে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে পরিস্থিতি হয়েছে আরও শোচনীয়, এমনকি ভয়াবহ। দুর্ঘটনার খবরও আছে বৈকি। দীর্ঘ সময়ব্যাপী যানবাহন সঙ্কটের পাশাপাশি অসহনীয় যানজটে রীতিমতো নাকাল হতে হয় নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষকে। রাজধানী হোক কিংবা হোক না বন্দরনগরী চট্টগ্রাম- বছরের পর বছর ধরে জনজীবন এভাবে চলতে পারে না কিছুতেই। বাস্তবে মানুষের দুর্ভোগ কমে না আদৌ, বরং আরও বেড়ে যায়। অথচ বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমনটি হওয়ার কথা নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকারের আমলে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা, মিলেছে নানা প্রতিশ্রুতি। বলা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আমূল সংস্কারসহ উন্নয়নে নেয়া হবে নানা পদক্ষেপ। বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর খালগুলো এবং চট্টগ্রামের চাক্তাই ও অন্যান্য নালা পুনরুদ্ধার এবং নাব্য রাখার ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও জনজীবন একটু হলেও সান্ত¡না পেত। কিন্তু হা হতোস্মি!
×