ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রূমানা ইসলাম

গুণে ভরা এ্যালোভেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

গুণে ভরা এ্যালোভেরা

‘এ্যালোভেরা’কে প্রাচীন মিসরীয়রা ‘True miracle plant অর্থাৎ সত্যিকারের অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন গাছ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ্যালোভেরা পাতার জেলকে তারা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে মানত। স্বয়ং ক্লিওপেট্রা এবং নেফারতিতি তাদের নিত্যদিনের ত্বকের যত্ন ও সৌন্দর্য চর্চায় এ্যালোভেরা ব্যবহার করতেন। শুধু সৌন্দর্য চর্চায় নয়, মিসরীয়রা তাদের মৃতদেহ সংরক্ষণেও এ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করত বলে জানা যায়। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধকারী উপাদান এ্যালোভেরাতে উপস্থিত থাকায় মৃতদেহে সহজে পচন সৃষ্টি হতো না বিধায় তারা বিশ্বাস করতেন, এ্যালোভেরা মৃতদের অমরত্ব দান করতো। আর ঠিক এই কারণেই মিসরীয়রা এ্যালোভেরাকে ‘The plant of immortality’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। শুধু মিসরীয়রা নয়, চীনেও এ্যালোভেরা বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই। সেই মার্কো পোলোর সময়েই চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিরাট অংশজুড়ে ছিল এ্যালোভেরা। ‘দ্য স্যালভেশন বুক অফ সিন-শি’-তে এ্যালোভেরাকে আশ্চর্য নিরাময়কারী উদ্ভিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জাপানে এই উদ্ভিদকে ‘জড়ুধষ ঢ়ষধহঃ’ অর্থাৎ রাজকীয় উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয়। সর্বোত্তম স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই উদ্ভিদের রস ব্যবহার করা হতো, এমনকি সামুরাইরা তাদের ত্বকে এ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যাসাজ করত। এ্যালোভেরাতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান এ্যালোভেরাকে আমরা ঘৃতকুমারী নামেও চিনে থাকি। এই উদ্ভিদটিতে আমাদের সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার অনেক উপাদান ভরপুর রয়েছে। এটি একটি কাণ্ডবিহীন রসালো এবং শাসযুক্ত গাছ। এই গাছটি গড়ে ৬০-১০০ সে.মি লম্বা হয়। পাতা ১০-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতার দু’পাশে কাঁটা থাকে এবং পাতা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা আকৃতির। এ্যালোভেরার পাতার মধ্য যে স্বচ্ছ জেলির মতো বস্তু পাওয়া যায় তাকে আমরা জেল বলে জানি। পাতার ঠিক নিচেই থাকে হলুদ রংয়ের ল্যাটিস এবং তার নিচেই এই জেল পাওয়া যায়। এ্যালোভেরাতে রয়েছে অনেক ভিটামিন উপাদান, যেমন- এ, সি, ই, ফলিক এ্যাসিড, বি-১, বি-২, বি-৩ এবং বি-৬। এছাড়াও এই উদ্ভিদে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ যা কিনা খুব অল্প উদ্ভিতেই পাওয়া যায়। এ্যালোভেরাতে প্রায় ২০ ধরনের মিনারেলস রয়েছে, তার মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিউম, ক্রোমিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজ অন্যতম। হজমজনিত সমস্যা দূর করে এ্যালোভেরা জুসের অন্যতম একটি প্রাচীন ব্যবহার হচ্ছে হজমজনিত সমস্যা দূর করতে। পেটের অতিরিক্ত গ্যাস, অতিরিক্ত অম্লতা, পেটের ভেতরে জ্বালা পোড়া এবং অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়াজনি০ত কারণে পেটের প্রদাহ- এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে এ্যালোভেরা জুস। প্রতিদিন এক গ্লাস করে এ্যালোভেরা জুস পান করুন, আশা করা যায় এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার হজমজনিত সমস্যা কমে আসবে। শরীরের দূষিত উপাদান নষ্ট করে এ্যালোভেরার অন্যতম উপাদান পটাশিয়াম লিভার ও কিডনিকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়া এ্যালোভেরার ইউরনিক এ্যাসিড (টৎড়হরপ ধপরফ) আমাদের দেহের কোষ ডিটক্সিফাইয়ে অবদান রাখে। বুক জ্বলাপোড়া কমায় এ্যালোভেরার অন্যতম একটি উপকারী দিক হলো বুকে জ্বলাপোড়া কমাতে সাহায্য করা। এমনকি এ্যালোভেরা প্রচলিত যেকোন এ্যাসিডিটি ওষুধের চেয়ে দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ‘এ্যালোভেরা জুস পার্শ্বীয় ওষুধের চেয়ে দ্রুত এ্যাসিড রিফাক্সের উপসর্গ হ্রাস করে এবং তা যেকোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।’ লিভার ভাল রাখে আপনার লিভার সুস্থ রাখার জন্য এ্যালোভেরা একটি চমৎকার উপাদান। তাই যখন আপনার শরীর পরিপূর্ণরূপে পুষ্টি ও হাইড্রেট থাকে, তখন লিভার সবচেয়ে ভাল কাজ করে। এক্ষেত্রে এ্যালোভেরা জুস লিভারের জন্য আদর্শ, কারণ এটি হাইড্রেটিং এবং ফায়োটেন্টেটিউটে সমৃদ্ধ। ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান বেশিরভাগই বিভিন্ন গাছপালাতে পাওয়া যায় আর এ্যালোভেরা তাদের মধ্যে একটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালানো এক গবেষণা অনুযায়ী, ‘এ্যালোভেরা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে ও ক্যান্সারের কার্যকারিতা বন্ধ করতে সক্ষম।’ এ্যালোভেরা জুস ক্যান্সার টিউমারের বৃদ্ধি থামাতে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপারটি হচ্ছে, এ্যালোভেরা ক্যান্সার প্রতিরোধক হার্বগুলোর কার্যকারিতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এ্যালোভেরা জুস থেরাপি বেশ সুপরিচিত। প্রাথমিক গবেষণা থেকে জানা যায়, ‘এ্যালোভেরা জুস গ্রহণ করার ফলে রক্তে গ্লুুকোজের মাত্রা উন্নত হয়।’
×