ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘কিলার’ মিলারের বিশ্বরেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

‘কিলার’ মিলারের বিশ্বরেকর্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মুশফিকুর রহীম ক্যাচটা ছাড়লেন। আর সেই ক্যাচটা যদি হয় এমন কোন ব্যাটসম্যানের যার বিধ্বংসী মেজাজের জন্য নামই হয়ে গেছে ‘কিলার মিলার।’ ফলাফল কতখানি ভয়াবহ হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ডেভিড মিলার টি২০ ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়ে। মাত্র ৩৫ বলেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৭ চার ও ৯ ছক্কায় ১০১ রানে। এর আগে ৪৫ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড ছিল দক্ষিণ আফ্রিকারই আরেক ওপেনার রিচার্ড লেভির দখলে। তার এমন বিভীষিকাময় ব্যাটিংয়ে অসহায় বাংলাদেশের বোলাররা সবমিলিয়ে ২০ ওভারে রান দিয়েছেন ২২৪। রবিবার পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচের ঘটনা এটি। মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে এ বিশাল সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি২০ ক্রিকেটে এটিই কোন দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। বাংলাদেশের বোলাররা কতটা অগোছালো বোলিং করেছেন সেটা বোঝার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের শেষ ৫ ওভার। এই ৫ ওভারে ৯০ রান তুলে নেন মিলার একাই। তিনি ১৯তম ওভারে একেবারে সাধারণ মানের বোলারে পরিণত করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে। সে কারণেই এই বিশাল সংগ্রহ পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য দিনের শুরুটা বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। অধিনায়ক হিসেবে আবার শুরুর পরই টস হেরেছিলেন সাকিব আল হাসান। প্রথম টি২০ ম্যাচে দলকেও বহুল আকাক্সিক্ষত জয়টা এনে দিতে পারেননি। সেনওয়েস পার্কে টস জিতলেন তিনি ব্যাটিংয়ে পাঠালেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। পেসার তাসকিন আহমেদকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে নিজেই বোলিং আক্রমণটা শুরু করেন সাকিব। হাশিম আমলার সঙ্গে এবার সঙ্গী ম্যাঙ্গালিসো মোসেহলে। তবে তাদের জুটিটা দ্রুতই ভেঙ্গে ফেলে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন ১৪ রান দিলেও পরের ওভারে এসেই মোসেহলেকে (৫) সরাসরি বোল্ড করে দেন তিনি। আমলা দেখেশুনে বেশ ক্ল্যাসিকাল শটে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলের রানকে। পঞ্চম ওভারে সাকিব ফিরে এবার জেপি ডুমিনিকেও (৪) বোল্ড করে বাংলাদেশ শিবিরে বেশ স্বস্তি আনেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪৫ রানে ২ উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার। মনে হচ্ছিল বেশ ভাল অবস্থানেই আছে দল। এরপর আমলার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে ৪১ রান যোগ করেন এবি ডি ভিলিয়ার্স পরবর্তী ৫ ওভারে। বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি দারুণ আক্রমণাত্মক এ ব্যাটসম্যান। ১৫ বলে ২০ রান করার পর তাকে ফেরান সাইফউদ্দিন। পরের ৫ ওভারেও বাংলাদেশের বোলাররা বেশ ভাল লাইনেই বল করেছেন। বিশেষ করে তরুণ সাইফউদ্দিন। তিনি এই স্পেলে টানা ৩ ওভার বোলিং করে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। তবে তাসকিন আবার বোলিংয়ে ফিরে আমলা আর মিলারের তোপে পড়ে সব ভজঘট করে দেন। তিনি নিয়ন্ত্রণহীন আলগা বোলিং করে ৩ ওভারে দেন ৪১ রান। সাকিব ছিলেন দারুণ মিতব্যয়ী, ৪ ওভারে মাত্র ২২ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। তবে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের ছিল বেহাল অবস্থা। বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের মিস ফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারি হজম করতে হয়েছে। এরপরও ১৫ ওভারে যখন প্রোটিয়াদের রান ৩ উইকেটে ১৩৪ মনে হচ্ছিল খুব বেশিদূর এগোতে পারবে না তারা। কিন্তু ইনিংসের ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রুবেল হোসেনের পেসে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিলার। তখন সবেমাত্র উইকেটে এসে দ্বিতীয় বল খেলেছেন, শূন্য রানে ছিলেন তিনি। জিরো থেকেই হিরো শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলেন মিলার। শূন্য রানে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নাম লেখালেন ইতিহাসের পাতায়। চতুর্থ উইকেটে আমলার সঙ্গে ৭৯ রান যোগ করেন। আমলা ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধশতক হাঁকিয়ে এগিয়ে চলেছিলেন প্রথমবার সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু তাকে থামান সাইফউদ্দিন। ৫১ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৮৫ রান করার পর সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তবে শেষ ৫ ওভারে শুরু হয় কিলার মিলারের নির্বিচার ব্যাটিং। সেই নির্মমতার শিকার সবচেয়ে ভয়াবহভাবে হন সাইফউদ্দিন। ১৯তম ওভারে টানা ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে এক ওভারে ছয় ছক্কার রেকর্ড স্পর্শ করার দিকে এগিয়ে যান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা না হলেও ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান মিলার। সেটা পূর্ণ করেন মাত্র ৩৫ বলে। বিশ্বরেকর্ড গড়েন। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ২২৪ রান করে প্রোটিয়ারা। টি২০ ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বাধিক সংগ্রহ কোন দলের। তবে চতুর্থবারের মতো প্রতিপক্ষরা দুই শতাধিক রান তুলেছে। এর আগে ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর ঢাকায় নিউজিল্যান্ডের করা ৫ উইকেটে ২০৪ রানই ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বাধিক রান।
×