ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টি ২০ তেও হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

 টি ২০ তেও হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ পোচেফস্ট্রুম, সেনওয়েস পার্কে শুরু, শেষটাও সেখানেই। ফলটাও বদলেনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরাজয় দিয়েই ব্যর্থতার বৃত্ত পূরণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। রবিবার রাতে সফরের শেষ ম্যাচ, সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে ৮৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ব্যাট করে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে ২২৪ রান তোলে। ডেভিড মিলার ৩৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দ্রুততম টি২০ শতকের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। জবাবে ১৮.৩ ওভারে ১৪১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। টেস্ট সিরিজে ২-০, ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টি২০ সিরিজেও একই ভাগ্য (২-০) বরণ করে হোয়াইটওয়াশের হ্যাটট্রিক লজ্জার শিকার হলো বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতেও হেরে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন ফরমেটে তিন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে সফরে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে একেবারে শূন্য হাত নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। সফরের শেষ ম্যাচে একটি পরিবর্তন নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। দলে আসেন পেসার শফিউল ইসলামের পরিবর্তে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাস। আর দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ফিরিয়ে আনে পেসার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও ম্যাঙ্গালিসো মোসেহলেকে। তবে পেসার তাসকিন আহমেদকে নিয়ে বোলিং শুরু করা সাকিব আল হাসান তৃতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন মোসেহলেকে (৫)। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে সাকিব তার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন জেপি ডুমিনিকে (৪)। দু’জনকেই সরাসরি বোল্ড করে দেন তিনি। পাওয়ারপ্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৫ রান। সেনওয়েস পার্কের শুরুটা বেশ ভালই ছিল বাংলাদেশের। তবে একপ্রান্তে আমলা দারুণ খেলছিলেন। তিনি তৃতীয় উইকেটে এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে ৪১ ও চতুর্থ উইকেটে মিলারের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি গড়ে দলকে একটি বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নেন। তবে বাংলাদেশের বোলিংটা এদিন দুর্দান্ত হলেও ফিল্ডাররা বেশকিছু বাজে মিস ফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারি হজম করিয়েছেন দলকে। এরপরও ১৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩৪ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকার রান খুব বেশিদূর যাবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। বাংলাদেশ শিবিরেও ছিল স্বস্তিদায়ক অবস্থা। ব্যবধানটা বিস্তর হিসেবে গড়ে দিয়েছেন মিলার। ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে যার নাম ‘কিলার মিলার’ হিসেবে স্বীকৃত। সেই মিলার ইনিংসের ১১তম ওভারে শূন্য রানে জীবন ফিরে পেয়েছেন পেসার রুবেল হোসেনের বলে ক্যাচ দিয়েও মুশফিকুর রহীমের কাছে। ধীরে ধীরে সেই মিলারই নিজেকে উইকেটে থিতু করেন। ভয়ানক ভিলিয়ার্সকে বেশিদূরে এগোতে দেননি দারুণ মিতব্যয়িতা দেখানো তরুণ পেসার সাইফউদ্দিন। ১৫ বলে ২০ রান করার পর তিনি ফিরে গিয়েছিলেন। তবে আমলা ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রথম সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকেও ফিরিয়ে দেন সাইফউদ্দিন। ৫১ বলে ১১ চার ১ ছক্কায় ৮৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন আমলা। তখন ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট সাইফউদ্দিনের। পরের ৫ ওভারে ৯০ রান তোলে প্রোটিয়ারা। মিলার ৩৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান। এর আগে ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকারই রিচার্ড লেভি ৪৫ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেটিই ছিল বিশ্বরেকর্ড। মিলার তাকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন। ১৯তম ওভারে সাইফকে টানা ৫ ছক্কা হাঁকান তিনি। আর এই ওভারেই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় ম্যাচ। ৪ উইকেটে ২২৪ রান তোলে তারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি২০ ক্রিকেটে এটিই কোন দলের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর ঢাকায় নিউজিল্যান্ডের করা ৫ উইকেটে ২০৪ রানই ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বাধিক রান। এমন ম্যাচেও সাকিব ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে দারুন শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস। আগের ম্যাচে রানে ফেরা সৌম্য এদিনও বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। তবে বেশিক্ষণ তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছিল ইমরুলের রান আউট দিয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তিনি (৬) সাজঘরে ফেরেন। এরপর নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হন সাকিব (২), মুশফিকুর রহীম (২), সাব্বির রহমান (৫)। দলীয় ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ঘোর বিপদে পড়ে বাংলাদেশ দল। এরপর দীর্ঘক্ষণ একাই লড়াই করে গেছেন দারুণ সাবলীল সৌম্য। তিনিও ২৭ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৪ রানে সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশের সব লড়াইয়ের পথ শেষ হয়ে যায়। পরের দিকে ব্যবধানটা কমিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২০ বলে ২ চারে ২০) ও সাইফউদ্দিন (২৬ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ২৩) কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে। ৯ বল বাকি থাকতেই ১৪১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। দুই স্পিনার জেপি ডুমিনি ও এ্যারন ফাঙ্গিসো ২টি করে উইকেট নেন। শেষদিকে বোলিংয়ের ব্যর্থতা এবং ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৮৩ রানের বড় পরাজয় লেখা হয় সাকিবদের ললাটে। স্কোর ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস- ২২৪/৪; ২০ ওভার (মিলার ১০১*, আমলা ৮৫, ভিলিয়ার্স ২০; সাকিব ২/২২, সাইফউদ্দিন ২/৫৩)। বাংলাদেশ ইনিংস- ১৪১/১০; ১৮.৩ ওভার (সৌম্য ৪৪, মাহমুদউল্লাহ ২৪, সাইফউদ্দিন ২৩; ডুমিনি ২/২৩, ফাঙ্গিসো ২/৩১)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৮৩ রানে পরাজিত। ম্যাচসেরা ॥ ডেভিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা)। সিরিজ ॥ দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজসেরা ॥ ডেভিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
×