ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আরও জোরালো মার্কিন পদক্ষেপ চাইবে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

 রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আরও জোরালো মার্কিন পদক্ষেপ চাইবে ঢাকা

তৌহিদুর রহমান ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ওয়াশিংটনের কাছে আরও জোরালো পদক্ষেপ চাইবে ঢাকা। ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে এবারের অংশীদারি সংলাপে রোহিঙ্গা সঙ্কটকেই বিশেষ প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে এই সংলাপে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও বাণিজ্য প্রসার নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আগামী পহেলা নবেম্বর থেকে ঢাকায় দুদিনের ষষ্ঠ ‘অংশীদারি সংলাপ’ শুরু হচ্ছে। সংলাপে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যানন ঢাকায় আসছেন। প্রতি বছর ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সমসাময়িক বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এখন জাতীয় সমস্যা মনে করছে বাংলাদেশ। এ কারণে এবারের অংশীদারি সংলাপে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইংকে টেলিফোন করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। রাখাইনে সঙ্কটের কারণে বাস্তুচ্যুতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যাতে নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরতে পারে, সেজন্য নতুন কোন শর্ত না দিয়ে ১৯৯২ সালের বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বর্মী সেনা প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন কোন ধরনের শর্ত ছাড়াই ১৯৯২ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে তাগিদ দিয়েছেন, যদিও পুরনো ওই চুক্তি ধরে অগ্রসর হতে আপত্তি জানিয়ে আসছে ঢাকা। বাংলাদেশ মনে করছে, যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালের চুক্তির নীতিমালা ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সুতরাং ওই চুক্তি অনুসারে এবার রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। অংশীদারি সংলাপে ১৯৯২ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনা তোলা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পহেলা নবেম্বর দুই দেশের মধ্যে সংলাপ শুরু হলেও শেষ হবে আগামী ৫ নবেম্বর। মাঝখানে তিনদিন বিরতি দিয়ে ৫ নবেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে মূল অংশীদারি সংলাপ শুরু হবে। ষষ্ঠ অংশীদারি সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। আর মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যানন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ঢাকায় ষষ্ঠ অংশীদারি সংলাপের জন্য পহেলা নবেম্বর নির্ধারণ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাণিজ্য, বিদ্যুত ও জ্বালানি, শ্রম ও জনশক্তি, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই সংলাপে অংশ নেবেন। এবারের সংলাপে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশেষ আলোচনা হবে। নিরাপত্তা সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া নিয়েও আলোচনা হবে। উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ বিশদ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয়াদি আরও বিস্তৃত পরিসরে ও গভীরভাবে আলোচনার জন্য অংশীদারিত্ব সংলাপটি সর্বোচ্চ ফোরাম। সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাত করবেন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যানন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করতে পারেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পঞ্চম অংশীদারি সংলাপ গত বছর ওয়াশিংটনে হয়। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। তার আগে ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম সংলাপ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরে অংশীদারি সংলাপের বিষয়ে এক চুক্তি সই হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর একবার ঢাকা পরের বার ওয়াশিংটনে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
×