ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলছি তো অবিরাম মুক্তির মিছিলে,লড়ছি তো...

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

চলছি তো অবিরাম মুক্তির মিছিলে,লড়ছি তো...

মোরসালিন মিজান পথ তৈরি আছে। কণ্টকমুক্ত পথ। পথটি ধরে শুধু হেঁটে যাওয়া। বয়স বাড়ানো। উদীচীর বেলায় গল্পটি; না, এমন নয়। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বিরুদ্ধ স্রেত ঠেলে এগিয়ে গেছে। লক্ষ্য ছিল সাম্যের সমাজ। সেই স্বপ্নের কতটা পূরণ হলো। এ নিয়ে আক্ষেপ থাকতেই পারে। তবে শ্রেণী চেতনার আদর্শ থেকে সরে আসেননি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। সঙ্গীতের ভাষায় নৃত্য, নাটক, কবিতা; চিত্রকলার ভাষায় শোষণ মুক্তির সংগ্রাম করছেন। অহর্নিশ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উদীচী পেয়েছে বিশিষ্টার্থক গঠন নির্মিতি। এভাবে পঞ্চাশ বছর। পঞ্চাশে পা। বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে উদীচীর ৫০ বছর ঘটনাবহুল এবং যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। বিরাট আনন্দের এই উপলক্ষ এখন দারুণভাবে উদ্যাপন করা হচ্ছে। সারা দেশের সকল কমিটি উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। রবিবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে মিলনমেলা বসেছিল ঢাকার সংগঠকদের। ‘চলছি তো অবিরাম মুক্তির মিছিলে, লড়ছি তো মুক্তির শপথে’ স্লোগানে মিলিত হন তারা। আলোচনা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় ‘জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।’ ১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরু করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ ছিলেন সত্যেন সেন। সাম্যবাদ ও বাঙালীর সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে শুরু হয় পথ চলা। দেশের প্রায় সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, মৌলবাদবিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে উদীচী। বর্তমানে সারাদেশে রয়েছে এর তিন শতাধিক শাখা। এমনকি দেশের বাইরেও আছে জোরালো অবস্থান। বিদেশের মাটিতে আছে ছয়টি শাখা। এগিয়ে যাওয়ার এই ধারাবাহিকতায় এসেছে সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর। জন্মের দিন ২৯ অক্টোবর উদযাপন করা হচ্ছে নানা আয়োজনে। জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনটি ছিল গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে। এদিন বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের আমেজ। অপেক্ষাকৃত নবীন কর্মীরা যেমন উপস্থিত হয়েছিলেন তেমনি প্রাণের টানে ছুটে এসেছিলেন প্রবীণ সংগঠকের অনেকেই। বয়সের ব্যবধান ভুলে আনন্দে মেতেছিলেন। ততক্ষণে প্রস্তুত বহিরাঙ্গনে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চ। একদল শিল্পী এসে মাইকের সামনে দাঁড়ান। শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। সবাই মিলে দেশমাতৃকার বন্দনা করেন। উত্তোলন করা হয় লাল সবুজের পতাকা। উদীচীর ভাবনা তুলে ধরে সম্মেলক কণ্ঠ। গানে গানে তারা বলে যান সত্যেন রণেশের আঁকা পদচিহ্ন/লাল খামে বাঙালির ঠিকানা অভিন্ন/কানাগলি রাজপথ মিশে সেই মোহনায়/অন্য পথের দিশা চাইনা/উদীচী এমনই এক আয়না...। মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কাজী সোহরাব হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্পী আনোয়ার হোসেন, আখতার হুসেন, মাহফুজা খানম ও অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে এক সময়ের কৃষকনেতা বলেন, আমি যুবক বয়সে উদীচীর সঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলাম। প্রগতিশীল ও মানব মুক্তির সংগ্রামে যারা নিজেদের নিবেদিত করেছিলেন সেই সমস্ত গুণী মানুষ উদীচীর প্রয়োজনীয়তা সাংঘাতিকভাবে অনুধাবন করেছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের মুক্তি। এই লক্ষ্যে এখনও কাজ করে যাচ্ছে আমাদের বৃহৎ পরিবার। আজ সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রথম দিনে আশা করি, পথচলা আরও প্রসারিত হবে। তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, যাদের জন্য এই উদীচী তাদের মাঝে কর্মকা- নিয়ে যেতে হবে। যারা মানুষের মনের কথা বলতে পারবে তারা উদীচী। তাদেরকেই যেতে হবে। ছড়িয়ে পড়তে হবে। ছোট্ট আলোচনা শেষ হলে উৎসবের আমেজটা বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়। বাংলার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে পঞ্চাশে পদার্পণের দিনটি উদযাপন করেন সবাই। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান ছিল শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে। এখানেও আলোচনা হয় বিগত দিন ও আগামীর স্বপ্ন নিয়ে। ছিল গণসঙ্গীত, নৃত্য ও প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী। সমস্ত পরিবেশনায় শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
×