ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার দেশীয় যান চলাচল চুক্তি

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

চার দেশীয় যান চলাচল চুক্তি

যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি উন্নয়নের পূর্বশর্ত। যোগাযোগ যত সহজ হবে পারস্পরিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্র তত সম্প্রসারিত হবে। বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের মানবের মেলবন্ধন ঘটাতে প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা দূর করা সমীচীন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, সাংস্কৃতিক ভাবধারার বিনিময় একান্ত আবশ্যক। একালে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার সুযোগ সীমিত। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল এই প্রতিবেশী চারটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার বিকল্প নেই। উপ-অঞ্চলের সহযোগিতা গড়ার পদক্ষেপ গ্রহণ তাই জরুরী। চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি সম্পন্ন করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তিনটি দেশ আগ্রহী হলেও ভুটান এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারছে না সংসদের বিরোধী দলের আপত্তির কারণে। পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে ভুটানে ক্ষমতাসীন সরকার এই ব্যবস্থার সপক্ষে। তাই তাদের আসন্ন সংসদ নির্বাচন শেষে ঝুলে থাকা বিষয়টির সমাধানের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের স্বার্থে চুক্তি করার বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে ভুটানের। আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় দু’দেশের বাণিজ্য সচিবদের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি হলে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। প্রতিবেশীদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। সার্কভুক্ত চার দেশের মধ্যে সংযুক্তি চুক্তি সম্পাদন হলে গড়ে উঠবে পরিকাঠামো। এই পরিকাঠামোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পানির উৎসের সঠিক ব্যবহার এবং বিদ্যুত, সড়কে পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। চার দেশের ভূমি বেষ্টিত দেশ নেপাল, ভুটান, ভারত বাংলাদেশের চারটি নৌবন্দর ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা পাবে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তির খসড়া তৈরি করার পর তা অনুমোদিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে চার দেশের যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন নির্দিষ্ট রুটে চলাচল এবং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির আওতায় বাধা ছাড়াই পণ্যবাহী গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত মোটরযান চলাচল করবে। এক্ষেত্রে কিছু বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। চার দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার অদ্যাবধি ট্রানজিট সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্পাদনে অতিরিক্ত সময় ও অর্থদন্ড লাগছে। তাছাড়া দেশগুলোর ভ্রমণে ও পর্যটনের বিষয়টিও গুরুত্ববহ। বন্ধুত্ব ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নয়নে চার দেশের সরকারপ্রধানরা ট্রানজিট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শুরু হয় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। এ চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ কম নয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন স্থলবন্দর নির্মাণ ছাড়াও বিদ্যমান বন্দরগুলোর উন্নয়ন ঘটানো হবে। ভুটান ছাড়া বাকি তিনটি দেশ চুক্তির জন্য এক পায়ে খাড়া। ভুটানের সংসদের নিকক্ষ চুক্তিটি অনুমোদন দিলেও উচ্চকক্ষে তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে আছে। অবশ্য ভুটানকে এড়িয়ে বাকি তিন দেশ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করার বিষয়ে এগিয়েছিল। কিন্তু এতে চুক্তির গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় ভুটানকে সঙ্গে রেখেই তা সম্পাদন করতে চাইছে। সে দেশটির নির্বাচনের পর চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসার ব্যাপারে চার দেশই আশাবাদী। ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষের আশঙ্কা চুক্তি তাদের পরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এছাড়া অন্য তিন দেশের যানবাহনকে অবাধ চলাচলের সুযোগ দেয়া হলে তা ভুটানে বেকারত্ব তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এপ্রিলে ভুটান সফরকালে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করে এর গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। ভুটানও তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। চুক্তিটি কার্যকর হলে চার দেশের মানুষই উপকৃত হবে। এ অঞ্চলে বাণিজ্যও বাড়বে। তাই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা জরুরী। আশা করা যায়, নির্বাচন পরবর্তী ভুটান বিষয়টিতে এগিয়ে এসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের ক্ষেত্র তৈরি করবে।
×