ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হেল্পলাইন ‘১০৯’

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

হেল্পলাইন ‘১০৯’

সমাজে নারী ও মেয়েশিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। সম্ভাব্য নির্যাতনের আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর জরুরী ভিত্তিতে নারী বা মেয়েশিশু প্রতিকার পেলে কিংবা তার ভেতরে নিরাপত্তা বোধ তৈরি করা সম্ভব হলে একটি বড় কাজ হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় ইমার্জেন্সি ফোনকল করার জন্য একটি নম্বর নির্দিষ্ট থাকে। বাংলাদেশেও নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য এমন একটি নম্বর রয়েছে। সেটি হলো ১০৯। এটি জাতীয় টোল ফ্রি হেল্পলাইন। নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের যে কোন স্থান থেকে ওই নম্বরের হেল্পলাইনের মাধ্যমে দরকারি তথ্য, পরামর্শসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেবা এবং সহায়তা সম্পর্কে জানতে পারে। দেশের পল্লী এলাকায় বাল্যবিয়ে রুখে দেয়ার ব্যাপারে এই হেল্পলাইন ইতোমধ্যে যথাযথ সাহায্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাল্যবিয়েই শুধু নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে এ হেল্পলাইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই কল সেন্টার বা হেল্পলাইন চালু হয় পাঁচ বছর আগে। তবে ব্যাপক প্রচারণার অভাবে এখনও নারীসমাজ এই সেবা সম্পর্কে অবহিত নন। যদিও দিনে দিনে এর পরিধি বাড়ছে। এখন এই হেল্পলাইনটিতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৪শ’ কল আসে। ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য সহায়তা, কাউন্সিলিং, পুলিশী সহায়তা, আইনী সহায়তা, তথ্য সরবরাহ ও অন্য সব বিষয়ে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৮ গ্রাহককে সেবা প্রদান করা হয়েছে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯-এর মাধ্যমে। এছাড়া চলতি বছরের বিগত নয় মাসে এ ধরনের সহায়তা গ্রহণ করেছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৪২ গ্রাহক, যা বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষায় বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ ও অগ্রগতি রয়েছে। কিন্তু এখনও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কন্যাশিশুরা প্রায়শ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে প্রচলিত কুসংস্কার, সামাজিক অসচেতনতা, অশিক্ষা, জ্ঞানের অভাব প্রভৃতি কারণে ছেলেশিশুদের তুলনায় কন্যা শিশুরা নানা দিক দিয়ে বৈষম্যপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। একটি কন্যাশিশু তার পরিবারের ভেতরেই প্রথম আপত্তিকর স্পর্শ, আচরণ, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে এমনটা বলে থাকেন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কথাটা যে শতভাগ অসত্য এমন নয়। কন্যাশিশুদের আরেকটি বড় বিপদ রয়েছে। সেটি হলো বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। এমনকি এখন বাল্যবিয়ের ঝুঁকির ভেতর রয়েছে এমন অল্প বয়সী মেয়ে নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে সমাজে এমন দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে। তারপরও দেশ থেকে এই সমস্যাটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০৯ নম্বরটিকে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন একজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী। এই কার্যক্রমের প্রচার বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি সরকারী-বেসরকারী-ব্যক্তি উদ্যোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, যানবাহন, যাত্রীছাউনি, হাসপাতাল, বাড়িঘর, দোকানপাটে ১০৯ নম্বরটির উপযোগিতা সংবলিত স্টিকার লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রাহকদের মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানোর পরামর্শ দেন। এখন পর্যন্ত প্রধানত এই নম্বরে কল করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও তথ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশা করতে পারি নিশ্চয়ই এমন দিন আসবে যখন নির্যাতিত নারী একটি ফোনকলের মাধ্যমেই পাবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সক্রিয় সহায়তা।
×