ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাজ থেকে তেল খালাসে চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

জাহাজ থেকে তেল খালাসে চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য চীনের সাথে নতুন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং- এসপিএম টার্মিনাল নামের এই প্রকল্পটিতে ৪৩২ কোটি টাকা ঋণ দেবে দেশটি। রবিবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিনচিং ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম। এসময় বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল খালাসের সময় ও খরচ কমিয়ে আনতে এই টার্মিনাল নির্মাণ করবে জ্বালানি বিভাগ। প্রকল্পের ঋণ সহায়তার ৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার নমনীয় সুদে দেবে চীন; বাকিটা থাকছে সরবরাহ ঋণের আওতায়। ৫ বছরের রেয়াতে যা পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র দুদিন। যা এখন লাগে ৭ দিন। এতে বছরে খরচ কমবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা। আর বছরে তেল খালাস করা যাবে ৯০ লাখ টন, যা বিদ্যমান ব্যবস্থার চেয়ে অন্তত ৩৫ লাখ টন বেশি। গত বছর অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরে ২৪ বিলিয়ন ডলারে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক এ প্রকল্প তারই একটি। নতুন সিঙ্গেল মুরিং হলে ৪৮ ঘণ্টায় এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত এবং ২৮ ঘণ্টায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল খালাস করা যাবে। এর বার্ষিক খালাসের ক্ষমতা হবে ৯০ লাখ মেট্রিক টন। জানা গেছে, এ চুক্তির আওতায় চীন ৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার দেবে নমনীয় সুদের ঋণ হিসেবে। বাকি ৪৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার পাওয়া যাবে সরবরাহ ঋণ (প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট) হিসেবে। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে ২.২৫ শতাংশ হারে সুদসহ ওই ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারবে বাংলাদেশ। আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের কাজে শৃঙ্খলা এনে সময় ও খরচ কমাতে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বিদেশ থেকে কিনে আনা তেল জাহাজ থেকে সরাসরি ইস্টার্ন রিফাইনারির ডিপোতে খালাস করা যায় না। বন্দরের গভীরতা কম হওয়ায় তেলের ট্যাংকারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে। সেখান থেকে তেল খালাস করে ছোট জাহাজে (লাইটার) করে নেয়া হয় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এ প্রক্রিয়ায় একটি ট্যাংকার থেকে তেল খালাস করতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যায়। আর অতিরিক্ত সময়ের জন্য সরকারকে জরিমানা গুণতে হয় জাহাজ কোম্পানিগুলোর কাছে। জানা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে একটি লোডিং বয়া নির্মাণ করা হবে। মাদার ভেসেল থেকে সেই লোডিং বয়ারের মাধ্যমে তেল খালাস করে পাইপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে শোধনাগারে। এই মুরিংয়ে দুটি পাইপ লাইন থাকবে। একটিতে পরিশোধিত তেল আসবে, আরেকটির মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত গভীর সমুদ্রে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণের এই প্রকল্প ২০১০ সালে একনেকের অনুমোদন পেলেও অর্থ সংস্থান না হওয়ায় তা ঝুলে যায়। গত বছর চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে অর্থায়নের বিষয়ে সমঝোতা হলে প্রকল্পটি আবার গতি পায়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত বছর ৮ ডিসেম্বর চায়না পেট্রোলিয়াম ব্যুরো ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) মধ্যে চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, চায়না পেট্রোলিয়াম ব্যুরো ২০১৮ সালের মধ্যে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণ করবে এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন বসাবে। কক্সাবাজারের মহেশখালী এলাকায় স্টোরেজ ট্যাংক ও পাম্প স্টেশনও স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার। এ কোম্পানি বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল শোধন করতে পারে। বর্তমানে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়।
×