ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মা ও শিশুমৃত্যুহার কমাতে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

মা ও শিশুমৃত্যুহার কমাতে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার রোধে বাংলাদেশ গত দুই দশকে উল্ল্যেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও এমডিজি-৫ অনুযায়ী মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৪৩ জন অর্জিত সম্ভব হয়নি। এখনও মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন কিংবা তারও অধিক অব্যাহত আছে। মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সুরক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এখনও চোখে পড়ার মতো। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আন্তরিকভাবে তৃণমূল পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দিতে পারলে মাতৃমৃত্যুর হার রোধে বাংলাদেশ হবে অনুকরণীয়। তারা বলছেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে সরকার স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ নজর দিয়েছে। এ কারণেই মাতৃমৃত্যুর হার কমছে। আবার গত কয়েক দশকে মাতৃমৃত্যুর হার কমার সঙ্গে সঙ্গে মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নেও নানা অগ্রগতি হয়েছে। রবিবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের এমসিএইচ সার্ভিসেস কর্র্তৃক আয়োজিত ‘মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে মা ও শিশুস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও কার্যক্রম’ বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষণপত্র তুলে ধরা হয়। সেইসঙ্গে উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করা হয় তৃণমূলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর বিভিন্ন কারণ ও প্রতিরোধে উপায়সমূহ। পর্যবেক্ষণপত্রের তথ্যে দেখা যায়, গত ২৫ বছরে (১৯৯০-২০১৫) বৈশ্বিকভাবে মাতৃমৃত্যুর হার ৪৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। আর বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, মাতৃমৃত্যুর পাশাপাশি কমেছে শিশুমৃত্যুর হারও। ২০১১ সালে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৩৫, গত বছরে তা ছিল ২৯। মাতৃমৃত্যুর হারও গত পাঁচ বছরে একই হারে কমে এসেছে। ২০১১ সালে প্রতি হাজারে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ২ দশমিক ৫৯, যা ২০১৫ সালে নেমে এসেছে ১ দশমিক ৮১তে। এতে আরও দেখা যায়, ২০১৬ সালে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রসব হার ছিল ১৪ শতাংশ, প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ২৮ শতাংশ, এনজিওভিত্তিক প্রসব হার ৩ শতাংশ। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো বর্তমানে দেশে এখনও ৫৫ শতাংশ প্রসব বাড়িতে অপ্রশিক্ষিত দাইয়ের হাতে হয়ে থাকে যা ২০১১ সালে ছিল ৭১ শতাংশে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকার মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু রোধ করতে নানা কর্মপরিকল্পনা পরিচালনা করছে। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেন্টারগুলোতে নারীর গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবায় অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে। আবার গ্রাম পর্যায়ে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধে ২০১৮ সালের মধ্যে ৪২১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাব-সেন্টারে প্রায় ৩ হাজার ধাত্রী নিয়োগ দেয়া হবে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের কাজও অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক (এমপি) বলেন, ‘এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরসমূহ সচেষ্ট। তিনি বলেন, শিশু জন্ম দিতে গিয়ে যেসব মা মৃত্যুবরণ করেন তাদের ৩ ভাগের এক ভাগ মারা যান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। খিঁচুনির কারণে ২০ ভাগ মা সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মারা যান। এর মূল কারণ হলো বাল্যবিয়ে এবং অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ। দেশে এখনও ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের বিয়ে হয়। যাদের বেশিরভাগই গর্ভধারণ করে এবং প্রসবকালীন মৃত্যুবরণ করে। তাই অন্তত ২০ বছরের আগে যেন কেউ সন্তান না নেন সেজন্য ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখনও ৬২ ভাগ নারী বাড়িতেই প্রসব করে থাকেন। তাদের নিরাপদ প্রসবের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভকালীন সেবার জন্য একজন প্রশিক্ষিত গাইনি ডাক্তার ও একজন এনেসথেসিয়া ডাক্তার ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে থাকেন। জাহিদ মালেক সিজারিয়ান ডেলিভারি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে ৭০ শতাংশ সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিকে। অন্যদিকে সরকারী ক্লিনিকে হচ্ছে মাত্র ৩০ শতাংশ। মোট প্রসবকালীন গর্ভবতীর ৮০ শতাংশ সিজারিয়ান ডেলিভারি করাচ্ছেন। এ বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে সিজার করা হলেই বোধ হয় মাতৃমৃত্যু রোধ হবে কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ সিজারের পর মাতৃমৃত্যুর অনেকটা ঝুঁকি থেকে যায়। মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ গর্ভবতী নারী জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। মূলত তাদেরও জন্য সিজারিয়ান ডেলিভারি জরুরী।’ মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন এলাকার পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি), মেডিক্যাল অফিসার (এমও), চেয়ারম্যান ব্যক্তিবর্গরা। এসময় তারা তাদের এলাকার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন। ময়মনসিংহ জেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের এফডব্লিউভি জেসমিন আক্তার তার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ‘সি ক্যাটাগরির’।
×