ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাসিরনগর তান্ডবের বছরপূর্তি আজ ॥ তদন্তে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

নাসিরনগর তান্ডবের বছরপূর্তি আজ ॥ তদন্তে ধীরগতি

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আজ সোমবার। নাসিরনগরে হিন্দু বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের এক বছর। নাসিরনগরের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরীফের ছবি বিকৃতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৩০ অক্টোবর এ তান্ডব চালানো হয়। ভাংচুর হয় অন্তত ১৫টি মন্দির ও শতাধিক হিন্দু বাড়িঘর। ভাংচুর ও পরবর্তীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় ৮টি পৃথক মামলা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় হরিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ ১২২ জনকে গ্রেফতার করে। অথচ এক বছরেও সে ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। পুলিশ এখনও চার্জশীট দিতে পারেনি। পুলিশ বলছে, মামলার তদন্তের ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। নাসিরনগরে হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙ্গার পর গত বছরের ৩, ৪ এবং সর্বশেষ ১৩ নবেম্বর হিন্দু বাড়িঘরে ধারাবাহিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫টি, ভাংচুরের ঘটনায় ২টি এবং এসব ঘটনায় মোট ৮টি পৃথক মামলা হয়। নাসিরনগর ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। জেলা ও নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের চরম দ্বন্দ্বের বিষয়টিও প্রকাশ পায় এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। জেলা আওয়ামী লীগ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আবুল হাশেম, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও চাপরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলীকে বহিষ্কার করে। অন্যদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখির বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসিরনগরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। পুলিশকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে। তাই পরিকল্পিতভাবে সেদিন তা-ব চালানো হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণেই এমনটি ঘটেছে। সূত্র বলছে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে নিয়ে স্থানীয় মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধ হয়। আঁখিকে মৎস্যমন্ত্রী স্থানীয়ভাবে মনোনয়ন দেননি। জেলা নেতারা মনোনয়ন প্রদান করেন আঁখিকে। এসব নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রীর দূরত্ব বাড়ে। বিভিন্ন কারণে মৎস্যমন্ত্রীকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই ঘটে নাসিরনগর তা-ব। ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেয়া নিয়ে হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করা হয়। গত মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি ও জেলা পরিষদের সব নির্বাচিত সদস্যের সম্মিলিত নাগরিক সমাজ প্রদত্ত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে নাসিরনগরের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে। আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সদর আসনের সংসদ সদস্যের নাম ও দলের সাধারণ সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে বলেন, এক কোটি ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মদ ব্যবসায়ীকে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি দুজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদের কারণে নাসিরনগর বিশ্ব সংবাদে পরিণত হয়েছে। রসরাজের ফেসবুক থেকে পবিত্র কাবা শরীফের ব্যঙ্গচিত্রের ঘটনায় ২৯ অক্টোবরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরপর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, নিজের ঘরে বসেই ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবিটি পোস্ট করে রসরাজ দাশ। পুলিশের করা মামলায় তার ওই স্বীকারোক্তি আছে। ওই দিনই তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। বর্তমানে সে এ মামলায় জামিনে রয়েছে। নাসিরনগর থানার এসআই মোঃ কাউছার হুসাইন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। গত বছরের ঘটনা প্রসঙ্গে নাসিরনগরের সুজিত চক্রবর্তী জানান, আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ ফিরে এসেছে। ঘটনার মাসখানেকের মধ্যেই মন্দিরগুলো সংস্কার করা হয়েছে। রসরাজের বড় ভাই দয়াময় দাস বলেন, এক বছর অতিবাহিত হচ্ছে, হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে আছি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরকার, রাজনৈতিক দল, প্রশাসনসহ সবার তৎপরতায় মানুষের আতঙ্ক কেটে গেছে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবু জাফর জানান, এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। প্রয়োজনীয ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও ভিডিও ফুটেজ দেখে এর তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এর তদন্ত শেষপর্যায়ে। এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ তদন্ত শেষ হয়েছে। শীঘ্রই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
×