ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাকার পতন ॥ আইএসের তা-বের চিহ্ন সর্বত্র

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

রাকার পতন ॥ আইএসের তা-বের চিহ্ন সর্বত্র

রাকা পৌঁছতে বেশ দীর্ঘ সময়ই লেগেছে। সীমান্ত পাড়ি দিতে ইরাকের কুর্দী আঞ্চলিক সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়েছে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের শহর রাকায় ভ্রমণের এটাই একমাত্র উপায়। যদি সেখানে সফলভাবে আপনি পৌঁছতে পারেন, তবে টাইগ্রিস নদীর ছোট্ট একটি প্রবাহ দেখতে পাবেন, যা দেশ দুটির মধ্যে একটি প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। ছোট নীল নৌকাতে ঠেলেঠুলে উঠে নদী পার হলাম। এর পরে ভাঙ্গাচোরা সড়ক দিয়ে দুদিনের যাত্রায় পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছলাম। পরিত্যক্ত গ্রামগুলো সবুজে ভরে গেছে। যতই আপনি শহরে পাশঘেঁষে যাবেন, প্রথমে বালুময়, পরে আরও সবুজাভ অঞ্চল দেখতে পাবেন। চল্লিশ ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যেও শিশুরা ইউফ্রেটিস নদীরে তীরে সেচ নালার চারপাশে পানি ছিটিয়ে ফুর্তি করছে। দুয়েকজন ট্রাকচালক বোতলে পানি ভরতে একটু যাত্রাবিরতি নিচ্ছে। এ পানি সুপেয় কি-না তা নিয়েও চিন্তা করে না। কারণ আশপাশে এছাড়া আর কোন পানির উৎস নেই। রাকা শহরের দিগন্ত রেখার যতই কাছে চলে যাই, আইএসআইএসের পতিত রাজধানী ততই নীরব মনে হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান এত উঁচুতে ওড়ে যে, কোন আওয়াজ শোনা অসম্ভব, যদি না সংঘর্ষের কোন শব্দ কানে আসে। কখনও ধোঁয়ার মেঘ এসে পুরো আকাশটাকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়ে যায়। কেবল ধূসর পাথরকুচির ধুলা পরিত্যক্ত রাস্তায় পাক খেয়ে বেড়ায়। সিরিয়া যুদ্ধ মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ার আগে গ্রামীণ শহর রাকা এক ধরনের নীরব মায়া মাখিয়ে থাকত। কিন্তু আইএসআইসের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হওয়ার পর এটি পৃথিবীর অন্যতম নিকৃষ্ট এলাকায় পরিগণিত হয়েছে। যুদ্ধের আগে শহরটির জনসংখ্যা সাত লাখের মতো ছিল। তারা এখন গৃহযুদ্ধের প্রতিটি ধাপের করুণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে আছে। সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে প্রথমে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হয়েছিল, যে প্রতিবাদের পরাগরেণু ২০১১ সালের আরব বসন্ত থেকে বাহিত হয়েছিল। এরপর সরকারী বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ২০১৪ সালে আইএসআইএস রাকা দখল করে নেয়। তখন থেকে এখানকার অধিবাসীদের জীবন নিষ্ঠুর শাসনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। যুদ্ধের সময়ে তারা এক প্রতিবেশী অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি জিহাদীরা বিমান হামলা থেকে বাঁচতে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। গেল সপ্তাহ পর্যন্ত তারা একই অবস্থার শিকার হয়েছিলেন। যাই হোক, চার মাসের প্রচ- যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরীয় ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এসডিএফ) আরব কুর্দিশ মিলিশিয়ারা পুরো শহরে তাদের পতাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়। তিন বছর আগে রাকা জয়ের পর আইএআইএস যোদ্ধারা যেভাবে তা উদযাপন করেছিল, ঠিক সেভাবেই শহরের কেন্দ্রস্থলে নায়েম চত্বরে তাদের সবগুলো ট্যাঙ্ক এনে জড়ো করে। দখল ও তা থেকে উদ্ধারে প্রাণঘাতী যুদ্ধের তা-বের আলামত শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। Ñইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন
×