ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্দশার জন্য আরসাকে দায়ী করছেন রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

দুর্দশার জন্য আরসাকে দায়ী করছেন রোহিঙ্গারা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মৃত্যু উপত্যকা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা দুর্দশার জন্য আশ্রিতরা মিয়ানমারের আল ইয়াকিন তথা আরসাকে দায়ী করছে। পাশাপাশি উড়িয়ে দিচ্ছে না আরএসও’র অপতৎপরতাকে। মিয়ানমারের মেহনতী, দিনমজুর ও সাধারণ রোহিঙ্গাকে দুর্দশায় ফেলে টাকা কামানোর জন্য আরএসও নেতারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। আরসা সদস্যরা রাখাইনে স্বাধিকার আদায়ের নামে ঘটনা সৃষ্টি করায় সেনাবাহিনীর বন্দুকের নলে প্রাণ গেছে হাজারো রোহিঙ্গা যুবকের। এর আগে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের কথা ছড়িয়ে গ্রামবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেছে আরসা কর্মীরা। আর এখন লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ ত্যাগ করিয়ে দুর্দিনে তারা (আরসা) নিজেরাই গায়েব হয়ে গেছে। তারা জানান, ৭৫ বছর ধরে আরাকানে রোহিঙ্গা নেতারা স্বাধিকার আদায়ের চেষ্টা করে আসছে। ১৯৪২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তারা কোন ধরনের সাধারণ রোহিঙ্গার দাবি আদায়ে সফল হতে পারেনি। শুধু সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে এবং বাংলাদেশী ঠিকানায় বিদেশে পাড়ি দিয়ে অঢেল সম্পদ ও বেশি বেশি টাকার মালিক হতে পেরেছে। রোহিঙ্গারা তাদের কথায় বিশ্বাস রেখে অধিকার আদায়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে বর্তমানে। ইতোপূর্বেও তারা (আরাকান বিদ্রোহী) কখনও আরএসও, কখনও এআরএনও, নূপা, আরপিএফ এবং এআরইউসহ বিভিন্ন সংগঠন নাম দিয়ে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর পক্ষে আন্দোলন করে গেছে। কিন্তু ওই সময় তাদের আন্দোলনে কোন সফলতা আসেনি। হঠাৎ আর্বিভূত আরসার কর্মকা- নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে প্রথমে। পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের স্বাধিকার আদায়ে তারা শক্ত ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ে কাজ করছে এমন আশ্বস্ত করলে কিছু কিছু রোহিঙ্গা যুবক যোগ দেয় আল ইয়াকিনে। মিয়ানমারে পাহাড়ে ঘাঁটি স্থাপন করে জনশক্তি বৃদ্ধির তৎপরতা চালায়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এবং অধিকার আদায়ের জন্য আরসার প্রধান আতা উল্লাহর দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল তারা। তবে ওই দলনেতাকে তারা কখনও দেখেননি। প্রতিটি গ্রামেই ছিল তাদের ২০-২৫ সদস্যের ইউনিটি। রোহিঙ্গারা আরও জানান, আরসা সংগঠনটি আবির্ভাব হওয়ার পর রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। জানা গেছে, ২০১২ সালে মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর আবির্ভাব ঘটে আল ইয়াকিনের। সে সময় সশস্ত্র সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ছিল হাফেজ মোঃ আতা উল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা জানান, আরসার লক্ষ্য ছিল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারাও সফল হতে পারেনি। আরসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০১৬ সালে মিয়ানমার সীমান্ত চৌকিতে হামলায় ৯ সীমান্ত কর্মকর্তা এবং ৪ সৈনিক মারা যায়। ২৫ আগস্ট দলটি উত্তর মংডুর পুলিশ ফাঁড়ি এবং সেনাঘাঁটিতে সমন্বিত হামলায় ১২ নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়। পাশাপাশি সরকারী গুপ্তচর সন্দেহে আরসার সদস্যরা ১২ বেসামরিক লোককেও হত্যা করেছে। এদিকে টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশে প্রত্যেহ অপরিচিত কিছু লোক ঘোরাফেরা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, ওরা কারা? ত্রাণ দেয়ার নামে অনেক সময় ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে। চিহ্নিত কয়েক রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করে বিকেলে ফিরে যায় তারা। একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় বহন করে চলছে অচেনা ওই ব্যক্তিরা। তারা বেশিরভাগই স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। কোন সময় এনজিও কর্মী, আবার ত্রাণ সহায়তাকারী, কোন সময় রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সরেজমিনে দেখতে আসা এবং ক্যাম্পে তাদের স্বজন রয়েছে বলেও দাবি করে ছদ্মবেশে ঘোরাফেরাকারী ওসব ব্যক্তি। তারা কাক্সিক্ষত ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে নয় ইন্টারনেটে কথা বলে থাকে। আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী সদস্যদের মুখোমুখি হলে হঠাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে দেখান। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ একাধিকবার সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও সুশৃঙ্খলভাবে রোহিঙ্গাদের সব সমস্যা সমাধান দেয়ার চেষ্টা চালালেও কতিপয় মৌলবাদী নেতা এবং আরএসও ক্যাডার আশ্রিত ক্যাম্পে ঘুরে রোহিঙ্গা সমস্যাটি জিইয়ে রাখার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সীমান্ত অধিবাসীরা জানান, মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা নতুন করে বিচ্ছিন্নভাবে শত শত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে এখনও। সীমান্তে কোন ধরনের বিধিনিষেধ না থাকায় এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রিত তাদের জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ হচ্ছে। থাকছে যে যার মতো করে। স্থানীয়রা মনে করছেন, নতুন করে রোহিঙ্গা আসার পেছনে ভূমিকা রাখছে ক্যাম্পে অবস্থানকারী তাদের আত্মীয়স্বজন ও দেশের বিভিন্নস্থানে ঘাপটি মেরে থাকা আরএসও ক্যাডাররা। তবে সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপের সন্ত্রাসীরা ঢুকছে কিনা এবং তাদের কাছে অবৈধ কিছু আছে কি না সে বিষয়ে প্রশাসন তৎপর বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, এ মুহূর্তে কি কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার জন্য উৎসাহিত হচ্ছে, জানি না। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার পেছনে কিছু উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে। আমার ধারণা, বর্তমানে যারা মিয়ানমার থেকে আসছে তারা সেখানে কোন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। এ দেশে আগে থেকে আসা আত্মীয়স্বজন তাদের আসার জন্য নানাভাবে প্ররোচিত করছে।
×