ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি

সংলাপ শেষে এবার সিটি নির্বাচনে মনোযোগ ইসির

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

সংলাপ শেষে এবার সিটি নির্বাচনে মনোযোগ ইসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংলাপ শেষে এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে ইসি। ডিসেম্বর থেকেই সারাদেশে নির্বাচনী উৎসব শুরু হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে নজর দিচ্ছে ইসি। ইসি সূত্রে জানা গেছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই এসব সিটিতে যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার জোর প্রস্তুতি চলছে। ইসির কর্মকর্তা জানা অন্য ৫ সিটিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া না হলেও রংপুর সিটিতে নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে এ সিটি নির্বাচনের প্রাথমিক দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী মাসে এ সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এছাড়াও ডিসেম্বরে কিছু পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নিবাচনের প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। এছাড়াও আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনের আগেই যথাসময়ে আরও ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তবে কমিশনের কর্মকর্তা জানান ইতোমধ্যে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কমিশনের আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে ফাইল উপস্থাপন করা হবে। কমিশন অনুমোদন দিলেই রংপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের রংপুর সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোিষণা করা হতে পারে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কমিশন সূত্রে জানা গেছে ২৮ ডিসেম্বর রংপুর সিটির নির্বাচনের প্রাথমিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে ছয় সিটি নির্বাচনকে বর্তমান ইসির জন্য অগ্নি পরীক্ষা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে। সংলাপে সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজসহ অন্যরাও ইসির সংলাপে অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসিকে রাজনৈতিক দলের আস্থার আনার পরামর্শ দিয়েছে। তবে ইসি মনে করছে যেখানে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়ে তাতে আগামী নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে। আর নির্বাচনে সব দল অংশ নিলে তা হবে প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ নির্বাচন। বিশেষজ্ঞরা বলছে জাতীয় নির্বাচনে আগে ছয় সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে জাতীয় নির্বাচন এই ইসির অধীনে কতটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। তারা মনে করছেন আইন অনুযায়ী এসব সিটি নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে এবং দলীয় প্রতীকে। তাই এই নির্বাচনগুলোর দিকে রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর বাড়তি নজর থাকবে। এদিকে ছয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও বসে নেই সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। এখন থেকেই মাঠে সরব তারা। নানাভাবে প্রচারও চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। নির্বাচনী যুদ্ধও হবে মূলত নৌকা আর ধানের শীষে। তাই সিটি নির্বাচন নিয়ে সব পক্ষেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিগত ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণ করা হয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসাবে আগামী বছরের ১৮ মার্চের মধ্যে রংপুরে নির্বাচন করতে হবে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে আগামী বছরই একাদশ জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে রোডম্যাপ দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই রোডম্যাপ ধরে অত্যাবশ্যকীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করতে চায় ইসি। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তারা যথা সময়ে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়ে এখন পর্যন্ত এই ইসি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছাড়া বড় কোন ধরনের নির্বাচন পরিচালনা করেনি। যদিও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কোন মহল থেকে অভিযোগ ওঠেনি। কুমিল্লার সিটি নির্বাচনের পরই ডিসেম্বরের রংপুর সিটি নির্বাচনে পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। তবে বিশেজ্ঞরা মনে করছে জাতীয় নির্বাচনে আগে সারাদেশে আরও ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রয়েছে। ওই নির্বাচনের ওপর সারাদেশের দৃষ্টি রয়েছে। বিশেষ করে এই ইসির অধীনে আগামী নির্বাচন কেমনভাবে অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ভর করবে মূলত খুলনা রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল এবং গাজীপুর নির্বাচনের ওপর। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে এই ৫টি সিটির নির্বাচন যথাসময়য়েই অনুষ্ঠিত হবে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী রংপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৭টি। ৫ বছর আগে রংপুর সিটি নির্বাচন হলেও সেই নির্বাচন ছিল মূলত নির্দলীয়। কিন্তু স্থায়ী সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার আইন পাশের পর এবারই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে এই সিটির নির্বাচন হবে। নিবন্ধত রাজনৈতিক দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তিনি মূলত দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। বাকিরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুরের ইতোমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়েছে। দলীয় প্রার্থী হতে অনেকেই গণসংযোগ শুরু করেছেন, সম্ভব্য প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। এদিকে যথাসময়ে দেশের অন্য পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি। এর মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর; মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সে অনুযায়ী ৮ মার্চের পর নির্বাচন করা যাবে। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে একসঙ্গে ভোট হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। সিলেট সিটির প্রথম সভা হয় ওই বছর ৯ সেপ্টেম্বর। এ সিটিতে মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ১৩ মার্চ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করতে হবে। খুলনা সিটির প্রথম সভা হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মেয়াদ পূর্ণ হবে। ৩০ মার্চ থেকে নির্বাচন উপযোগী হবে এ সিটি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয় ৬ অক্টোবর। মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর। ৯ এপ্রিল থেকে ওই সময়ের মধ্যে সেখানে নির্বাচন করতে হবে। বরিশাল সিটির প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর। এ সিটিতে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিলে থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এদিকে জানা গেছে ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। যেসব পৌরসভায় ডিসেম্বরে ভোট অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নাটোরের বনপাড়া, চট্টগ্রামের নাজিরহাট, জামালপুরের বকশীগঞ্জ, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী, রাজশাহীর বাঘা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের বিরল এবং নাটোরের বনপাড়া। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তিনটি ও নাঙ্গলকোট উপজেলার ৮টি, ভোলার লালমোহনে দুটি, নোয়াখালীর সদরে দুটি, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে একটি, শরীয়তপুরে জাজিরায় তিনটি এবং মৌলভীবাজারের জুড়ীতে একটি ইউনিয়ন রয়েছে।
×