ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

সম্ভাবনাময় শিল্প খাত প্লাস্টিক পণ্য

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

সম্ভাবনাময় শিল্প খাত প্লাস্টিক পণ্য

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিকাশমান শিল্পখাত প্লাস্টিক পন্য। প্রযুক্তি ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ পরিবর্তন ঘটেছে দেশের প্লাস্টিক শিল্পে। ফলে এ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক পণ্যকে পেছনে ফেলে এসব খুব সহজেই দেশীয় ক্রেতাদের মন জয় করে নিচ্ছে। আগে শুধু ঘরের টুকিটাকি কাজে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হলেও এখন প্রযুক্তির উন্নয়নে নিত্যপণ্যের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। পোশাক খাতের সরঞ্জাম, খেলনা সামগ্রী, ঘরে ব্যবহারের বিভিন্ন তৈজসপত্র, অফিসে ব্যবহারের জিনিসপত্র, গৃহনির্মাণ সামগ্রী, জানালা ও দরজা, চিকিৎসার উপকরণ, কৃষি খাতের জন্য পাইপ ও বড় চৌবাচ্চা, গাড়ি ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতের বিভিন্ন পণ্য, কম্পিউটারের উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি হচ্ছে। ফলে আমদানিনির্ভর শিল্পটি এখন রফতানিমুখী শিল্পে পরিণত হয়েছে। ৫০ দশকের শুরুতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে প্লাস্টিক শিল্প। ৯০ দশক পর্যন্ত এ দেশে নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হতো। বর্তমানে এ শিল্প এতটাই এগিয়েছে যে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২তম প্লাস্টিক পণ্য রফতানিকারক দেশ। উদ্যোক্তারা বলছেন, পোশাক শিল্পের মতো আনুকূল্য পরিবেশ পেলে প্লাস্টিক পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাতে পরিণত হবে। বিদেশী প্লাস্টিক পণ্যের জন্য দেশীয় বাজার ছিল অবারিত। এখন মানে ও বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প এতটাই এগিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে দেশের তৈরি পণ্য রফতানি হচ্ছে। চীন, ভারতেও তা সমাদৃত হচ্ছে। এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ২০২১ সাল নাগাদ রফতানি বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা আয়ের আশা করছেন। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের জাতীয় শিল্পনীতিতে এ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এরই মধ্যে শিল্পনীতি ২০১৬ খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক পন্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে দেশে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক শিল্প রয়েছে। এ খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষের। পরোক্ষভাবে আরও প্রায় ১৩ লাখ মানুষ কাজ করছে। এখানে ১৮ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। যার ৬৫ শতাংশ ঢাকার মধ্যে, ২০ শতাংশ চট্টগ্রাম, ১০ শতাংশ নারায়ণগঞ্জ ও বাকি ৫ শতাংশ অন্য বিভাগে রয়েছে। প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রফতানি বাড়ার কারণেই এ খাতের আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে জিএসপি সুবিধা পেলে এ শিল্পকে আরও উন্নত করা সম্ভব। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের মোট রফতানির ৭০ শতাংশই ইইউতে ও আমেরিকায় হয় ১০ শতাংশ। আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার। সেজন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও প্রস্তুতিও নিতে হবে। জিএসপি স্থগিতের কারণে ৩ থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে রফতানি করতে হয় এ পন্য। এজন্য এ খাতের উন্নতিকল্পে সরকারী হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য। বিপিজিএমইএ জানায়, বর্তমানে ২০টি বড় প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক পণ্য রফতানি করছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, স্পেন, কানাডাসহ বিশ্বের ২৩টি দেশে সরাসরি যাচ্ছে বাংলাদেশের এই পণ্য। সার্কভুক্ত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। দেশ-বিদেশে এ শিল্পের প্রসারে বিপিজিএমইএ-এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্লাস্টিক শিল্পের উদ্যোক্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আশার আলো ফুটছে প্লাস্টিক খাতে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য থেকে মোট রফতানি আয় আসে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ডলার। ক্রমাগত বাড়ছে এই আয়। সব সময় প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থনীতিবিদরা নানা সম্ভাবনা খোঁজেন। দেশের অর্থনীতিকে কী করে আরও বেগবান করা যায়, এসব খাতে কী কী সংস্কার দরকার- এমন নানামুখী উন্নয়ন চিন্তা রাষ্ট্রীয়পর্যায় থেকে ব্যক্তিপর্যায় পর্যন্ত পর্যালোচনা করা হয়। তারপর শুরু হয় উন্নয়ন-পরিকল্পনা। এসব কারণে সরকারী খাত ও ব্যক্তি খাত দুই-ই এগিয়েছে। দেশী শিল্প বিকাশে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, আমদানিনির্ভরতা কমে, বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচে। এজন্য শুল্কহার সহনীয় মাত্রায় এনে দেশী শিল্প বিকাশে সহায়তা করা দরকার। এছাড়াও প্রয়োজন সরকারী নীতিমালা এবং সে সঙ্গে ব্যাংকঋণ।
×