ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর দেয়ার সময় এখনই...

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

আয়কর দেয়ার সময় এখনই...

বছর ঘুরে আবার সময় হলো আয়কর রিটার্ন দাখিলের। ২০১৭-১৮ কর বছরের জন্য ৩০ নবেম্বর ’১৭ হচ্ছে রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ। এর মধ্যে যদি আপনি ব্যক্তি পর্যায়ের রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন তবে আপনাকে পরবর্তীতে জরিমানাসহ রিটার্ন দাখিল করতে হবে। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন না দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একজন ব্যক্তি করদাতা ১ জুলাই, ২০১৬ থেকে ৩০ জুন, ২০১৭ পর্যন্ত যে পরিমাণ আয় ও সম্পদ অর্জন করেছেন তার ভিত্তিতে হিসাব করে ২০১৭-১৮ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল এবং নির্ধারিত কর জমা দেবেন। আয়কর প্রদানে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে আগামী ১ নবেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা। ঢাকা ছাড়াও দেশের সব বিভাগীয় শহর, জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা শহরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানী ছাড়া সব বিভাগীয় শহরে এক সপ্তাহ, সব জেলা শহরে চার দিন, ৩২ উপজেলা শহরে দু’দিন এবং ৭১ উপজেলায় একদিন (ভ্রাম্যমাণ) এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় নতুন করে আয়করের খাতায় নিবন্ধিত হতে অনলাইনে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন নেয়া যাবে। এছাড়া করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ও প্রযোজ্য কর পরিশোধ করতে পারবেন। মেলায় আয়কর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সব ধরনের আয়কর সেবা নেয়া যাবে। রাজধানীতে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে। ২০১০ সালে প্রথম আয়কর মেলা শুরু হয়। এরপর থেকে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ফলে অনেকেই কর মেলায় রিটার্ন জমা দেয়া কিংবা টিআইএন গ্রহণ করে থাকেন। সর্বশেষ গত বছর আয়কর মেলায় এসে সেবা নিয়েছেন ৯ লাখ ২৯ হাজার জন, যা আগের বছরের চাইতে ১ লাখ ৭২ হাজার বেশি। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৯৪ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দেয়ার বিপরীতে ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা আয়কর দিয়েছেন। নতুন ই-টিআইএন নেয়ার মাধ্যমে করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৫৩ জন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর আয়কর দেয়ার শেষ দিন থাকলেও বিভিন্ন কারণে সময়সীমা বাড়ানো হতো। গত বছর থেকে ৩০ নবেম্বরকে আয়কর দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওই দিনই আয়কর দেয়ার শেষ দিন। এরপরে রিটার্ন দাখিল করতে হলে জরিমানা গুণতে হবে। করযোগ্য আয় আছে; কিন্তু রিটার্ন না দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যক্তি করদাতাকে নির্ধারিত কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। যাদের জন্য বাধ্যতামূলক বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা অতিক্রম করলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। মহিলা ও ৬৫ বছরের উর্ধ্বে নাগরিকের ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আয় ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি হলে রিটার্ন দিতে হবে। বেসরকারী চাকরিজীবীদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। আর সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় চাকরিরতদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এছাড়া কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা চাকরিজীবী, ফার্মের অংশীদার, ব্যবসা বা পেশার নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে রিটার্ন জমা দিতে হবে। মোটরগাড়ির মালিক (প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাস); ভ্যাট আইনের অধীনে নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্য হলে; সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করলে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি বা সার্ভেয়ার বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোন স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধন থাকলে; আয়কর পেশাজীবী হিসেবে এনবিআরে নিবন্ধিত থাকলে; বণিক বা শিল্পবিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়ী সংঘ বা সংস্থার সদস্যপদ থাকলে; পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কোন পদে বা সংসদ সদস্যপদে প্রার্থী হতে চাইলে; সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীয় সরকারের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে এবং কোন কোম্পানি বা গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োজিত থাকলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। যেসব কাগজপত্র লাগবে করদাতা চাকরিজীবী হলে বেতন বিবরণী, ব্যাংক সুদ থেকে আয় হলে তার বিবরণী বা সার্টিফিকেট, বিনিয়োগ থাকলে তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি (সঞ্চয়পত্রের সার্টিফিকেট, জীবন বীমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়ামের ফটোকপি, বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি) জমা দিতে হবে। গৃহসম্পত্তি খাতে বা বাড়ি ভাড়া থেকে আয় হলে ভাড়ার চুক্তিনামা বা রসিদের কপি এবং প্রাপ্ত জমাসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের বিবরণী; পৌর কর, সিটি কর্পোরেশন কর দেয়ার রসিদের কপি; ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা হলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক সার্টিফিকেট, গৃহসম্পত্তির বীমা করা থাকলে বীমার প্রিমিয়ামের রসিদের কপি রিটার্নের সঙ্গে দিতে হবে। অন্য উৎস থেকে আয় থাকলে তার স্বপক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা অথবা ওয়ার্ড কমিশনার অথবা যে কোন টিআইএনধারী করদাতার দ্বারা সত্যায়িত করা ছবি লাগবে। দাখিলের পদ্ধতি সাধারণ এবং সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম রয়েছে। সাধারণ পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিলে কর অফিসের দেয়া প্রাপ্তি স্বীকারপত্রটি কর নির্ধারণী আদেশ হিসেবে গণ্য হয় না। রিটার্ন দাখিলের পর উপ-কর কমিশনার কর নির্ধারণ করে থাকেন। পক্ষান্তরে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে করদাতা নিজেই নিজের আয় নিরূপণ করে কর পরিশোধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে করদাতাকে রিটার্ন জমার পর যে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হয় সেটিই কর নির্ধারণী আদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাই সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দেন। তবে করদাতার ১২ ডিজিটের টিআইএন না থাকলে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ নেই। তাছাড়া মোট আয়ের ওপর প্রযোজ্য সব আয়কর এবং সার চার্জ পরিশোধ করা না হলে অথবা ৩০ নবেম্বর তারিখের মধ্যে অথবা বর্ধিত সময়ের মধ্যে দাখিল করা না হলে করদাতার রিটার্ন সার্বজনীনের আওতায় পড়বে না। কর রেয়াত নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করলে করদাতারা কর ছাড় পাবেন। এক্ষেত্রে করদাতার মোট আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকে অনুমোদনযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। উদাহরণস্বরূপ কোন করদাতার আয় যদি ১০ লাখ টাকা হয় তবে তিনি ২৫ শতাংশ বা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে কর রেয়াত নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ বা সাড়ে ৩২ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবেন। তবে আয় ১০ লাখ টাকার বেশি; কিন্তু ৩০ লাখ টাকার কম হলে প্রথম আড়াই লাখের জন্য ১৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট বিনিয়োগের ওপর ১২ শতাংশ হারে রেয়াত পাবেন। আর মোট আয় ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে প্রথম আড়াই লাখের জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখের জন্য ১২ শতাংশ এবং অবশিষ্ট টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে রেয়াত পাবেন। কর পরিশোধ ট্রেজারি চালান, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট ও এ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে করদাতা নিজ কর অঞ্চলের অর্থনৈতিক কোডে টাকা জমা দিয়ে কর পরিশোধ করা যায়। ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন করদাতা। তবে এর বেশি আয়কর পরিশোধ করতে চাইলে পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, এ্যাকাউন্ট পে-চেক ব্যবহার করতে হবে।
×