ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কানপুরে ফয়সালার লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

কানপুরে ফয়সালার লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভারত-নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজ খেলছে সেই ১৯৭৫ থেকে। আর রঙিন পোশাকে নিউজিল্যান্ড প্রথম ভারত সফর করে ১৯৮৮ সালে। ২৯ বছরে পাঁচবার আতিথ্য নিয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি কিউইরা। মুম্বাইয়ের প্রথম ম্যাচ জিতে এবার কেন উইলিয়ামসনের দল কেবল চমকেই দেয়নি, সেই সঙ্গে ইতিহাস গড়ার পথ তৈরি করে। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সতীর্থদের সেটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ব্ল্যাকক্যাপস-অধিনায়ক। যদিও পুনেতে হেরে বসে অতিথিরা। ফয়সালা এবং ইতিহাসÑ আজকের শেষ ওয়ানডে তাই একইসঙ্গে দুই উপলক্ষ। উইলিয়ামসদের সামনে অনেক প্রাপ্তির হাতছানি, অন্যদিকে বিরাট কোহলিদের জন্য সিরিজ জয়। আকাশে উড়তে থাকা ভারতের পাল্লাই বেশি ভারি। মুম্বাইর ম্যাচটা বাদ দিলে সাম্প্রতি সময়ে দুর্দান্ত খেলছে কোহলি এ্যান্ড কোং। কানপুরে আজও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে ফের আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ফিরবে ভারত। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন বলেন, ‘মুম্বাইয়ে আমাদের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। বিশ্বের অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার। তাই আমাদের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কম ছিল। যদিও পুনের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় করতে পারিনি। কিন্তু এখনও সুযোগ রয়েছে। ভারত শক্তিশালী বলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মুম্বাইর মতো কানপুরের শেষ ম্যাচেও ভাল পারফর্মেন্স করতে পারলে অবশ্যই জেতা সম্ভব। এখনও আমাদের লক্ষ্য কেবলই জয়। সবাই জানে তাহলেই ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের দেখা পাব। গত ২৯ বছরেও আমরা যে কাজটা করতে পরিনি। ইতিহাস গড়ার এ সুযোগ কাজে লাগাতে সবাই শতভাগ দিতে প্রস্তুত।’ আকাশে উড়তে থাকা ভারতকে মাটিতে নামিয়ে আনার পথে মুম্বাইয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়টা ছিল আসলেই অনুপ্রেরণাদায়ী। টম লাথামের অপরাজিত সেঞ্চুরি (১০৩*) ও অভিজ্ঞ রস টেইলরের প্রায়-সেঞ্চুরির (৯৫) দারুণ দুটি ইনিংসে ভর করে ভারতের ছুড়ে দেয়া ২৮১ রানের টার্গেট কিউইরা ছুঁয়ে ফেলে ৬ উইকেট হাতে রেখেই। বিফলে যায় সুপার কোহলির ক্যারিয়ারের ৩১তম সেঞ্চুরির কীর্তি। তবে পিছিয়ে পড়ে দ্বিতীয় ওয়ানতে স্বরূপে জ্বলে ওঠে স্বাগতিকরা। কিউইদের মাত্র ২৩০/৯-এ থামিয়ে রেখে ভারতীয় বোলাররা জয়ের পথ তৈরি করে দেয়। যেখানে ৩ ও ২টি করে শিকারের পথে নেতৃত্ব দেন দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরাহ। স্পিনার যুবেন্দ্র চাহাল নেন ২ উইকেট। এরপর শিখর ধাওয়ান (৬৮) ও দীনেশ কার্তিদের (৬৪) দুর্দান্ত দুই হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৬ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। সিরিজে সমতা ফেরায় কোহলিবাহিনী। ঘরের মটিতে একসময় স্পিনাররাই ছিল ভারতের প্রধান অস্ত্র। সাম্প্রতিক সময়ে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা। ভুবনেশ্বর, বুমরাহ, হারদিক পান্ডিয়ারা চমৎকার করছেন। বুমরাহ বলেন, ‘আমরা জানি কানপুরের পিচ কিছুটা স্লো, স্পিনারদের সহায়ক। আমার লক্ষ্য উইকেট টু উইকেট বল করা, যাতে ওরা রান তুলতে না পারে। আর ভুবি চমৎকার বোলিং করছে। ফলে এখন আমরা ম্যাচের শুরুতেই উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারছি।’ পেস বোলিংয়ে স্বাগতিকদের বড় ভরসা ভুবনেশ্বর বলেন, ‘আসলে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাতে একাধিক ফাঁদ পাতা দরকার। আমি স্লোয়ার নিয়ে গত আইপিএল থেকেই কাজ করছি। পুনেতে আগের ম্যাচে কয়েকটা স্লোয়ার দিয়ে ফল পেয়েছি। পরের ম্যাচগুলোতেও এটা দেয়ার চেষ্টা করব।’ সঙ্গে কুলদীপ যাদব, যুবেন্দ্র চাহাল, অক্ষর প্যাটেলদের স্পিন-আতঙ্ক তো থাকছেই। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজার মতো অভিজ্ঞদের বিশ্রামে রেখে এই নবীনদের পারফর্মেন্সে ভর করেই একের পর এক সিরিজ জিতে চলেছে ভারত। গত জুনে শেষ হওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর তিনটি ওয়ানডে সিরিজে অংশ নেয় তারা। বিদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা এবং ঘরের মাঠে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে উড়ছিল ভারত। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-১, লঙ্কানদের ৫-০ ব্যবধানে হারায় কোহলিরা। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় ৪-১এ। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে ভয়ঙ্কর এক দল হিসেবে রূপ নিয়েছে ভারত। পুনের ম্যাচটা ছিল দু’দলের শততম ওয়ানডে, যেখানে সমান ৫০ জয়ে এগিয়ে ভারত। নিউজিল্যান্ডের জয় ৪৪ ম্যাচে। টাই ১ ও পরিত্যক্ত ৫। গত বছর অক্টোবরে শেষ ভারত সফরে ৩-২এ সিরিজ হারলেও দারুণ ফাইট করেছিল কিউরা। এবার কি পারবে ইতিহাস গড়তে?
×