ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সঙ্গে পাল্লাদিয়ে নির্বাচনমুখী কর্মসূচী দেবে জাপা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

বিএনপির সঙ্গে পাল্লাদিয়ে নির্বাচনমুখী কর্মসূচী দেবে জাপা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে ৩০০ সংসদীয় আসনে পৃথক কমিটি গঠন করবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রিক বছরব্যাপী নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। উদ্দেশ্য, বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দেয়া ও রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করা। আগামী ডিসেম্বর থেকেই লাঙ্গলে ভোট চেয়ে মানুষের কাছে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনী গণসংযোগ, লঞ্চমার্চ, ট্রেনমার্চ, বিভাগীয় ও রাজধানী শহরে এরশাদের জোটের পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। এভাবে সারাদেশে কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীকে সক্রিয় করার পাশাপাশি দলের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছেন এরশাদ। একই সঙ্গে জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির পক্ষে জনমত গঠন করবেন তিনি। দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিদ্বন্দ¦ী বিএনপির কর্মসূচীর দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে জনমত আদায়ে যেসব কর্মসূচী নেয়া হবে এর সঙ্গে মিল রেখে আরও গণমুখী কর্মসূচী দেবে জাপা। তবে বিএনপি কর্মসূচী গ্রহণে বিলম্ব করলেও তারা বসে থাকবে না। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে সরকারে না আসতে পারলেও বিরোধী দলে থাকতে চায় এরশাদের দল। এজন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামছেন দলটির নেতারা। প্রয়োজনে জোটের আকার বাড়াবেন। নির্বাচনের আগে আগে বিভিন্ন দল থেকে বেশ কিছু হেভিওয়েট প্রার্থীও জাপায় যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন নেতারা। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে আসন প্রতি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতি আসনে তিনজন প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। কোন কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচার শুরুরও গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছেন এরশাদ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বিদেশ যাওয়ার আগে জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন করতে গেলে সাংগঠনিক শক্তি লাগবে। সারাদেশে দল লাগবে। এ ছাড়া নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে দেশ ও জাতির কল্যাণে কর্মসূচী দিতে হবে। এসব বিষয় মাথা রেখে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে পার্টির চেয়ারম্যান টানা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে তিন মাসের কর্মসূচী দেব। এর মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহে বড় ধরনের সমাবেশ করা হবে। খুলনায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে জাতীয় পাটির কর্মসূচী। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে মহাসমাবেশ। জাতীয় পার্টিকে মানুষ ভালবাসে। কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থাকায় সারাদেশের মানুষের কাছে যেতে পারি না। এজন্য দলকে সংগঠিত করতে হবে। মানুষের কাছে যাব। সবাইকে জানাব আমরা এখন আছি। আপনারা আমাদের ভোট দিন। শান্তি দেব। নিরাপত্তা দেব। আগের মতোই উন্নয়ন করব। যেমন এরশাদের ক্ষমতায় থাকাকালে সারাদেশে উন্নয়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা আরও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক সফর, কল্যাণমুখী ইশতেহার ঘোষণা, যোগ্য প্রার্থী বাছাই, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে জাপার শাসনামলের সোনালি দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, অঞ্চলভিত্তিক সভা-সমাবেশ, সেমিনার করা। তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় স্যার (এরশাদ) যাবেন। নৌপথে যাত্রায় আমাদের সঙ্গে জেলা, উপজেলার নেতারাও যোগ দিতে পারবেন। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু হবে। এছাড়া ট্রেনযোগে ও সড়কপথে বিভিন্ন জেলা সফর করব। দলটির অন্তত ৫ প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে জাপার ৭৬ সাংগঠনিক জেলায় জোটের পক্ষ থেকে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হবে। দেশের বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসেম্বরে রাজধানীতে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ২৯ জেলায় সম্মেলন শেষ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব জেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্মেলনের বড় বাধা হলো নেতৃত্বের সঙ্কট ও দলীয় কোন্দল। ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করবেন। এসব কাজ পরিচালনার জন্য প্রত্যেক এলাকায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয়সহ জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে।
×