ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের রায়

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

শীঘ্রই বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত ও ইতিহাসের কলঙ্কজনক বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনার হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির মৃত্যুদন্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপীলের রায় শীঘ্রই ঘোষণা করা হতে পারে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে ১৩ এপ্রিল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, কবে রায় হবে তার ইঙ্গিত পাইনি। কখন দেবে তা উনাদের বিষয়। তবে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সরোয়ার জনকণ্ঠকে জানান, শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে। শীঘ্রই এ মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, নবেম্বর ডিসেম্বরের দিকে দিতে পারে। তবে কনফার্ম করেননি। বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার। আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির জন্য ২০১৫ সালে এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। অনুমোদন (ডেথরেফারেন্স) ও আসামিদের আপীলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল। আসামিপক্ষে এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান, এএসএম আবদুল মুবিন, আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার প্রমুখ। কিছু আসামি আছে যারা খালাস পেয়েছেন তাদের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ তিনটি দরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু দরখাস্ত দেরিতে দেয়ায় আদালত সেগুলো নাকচ করে দিয়েছেন। পিলখানা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া ১৬১ জনের যাবজ্জীবন, ২৩৭ জনের দশ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও ১৯৪ জনের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে সাজা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল। রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এবং সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদ-, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত ) কারাদ- এবং ২৭৮ জনকে খালাস এবং আর ৪ জন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়। রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ আসামির সাজা চেয়ে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দ-প্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন। দ্রুত আপীল শুনানির জন্য সুপ্রীমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত ২ কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপীলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। পরদিন ৫ জানুয়ারি বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করে দেয় বিশেষ বেঞ্চ। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচার চলাকালীন বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়।
×