ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ৫৫ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর

জ্বালানি তেল খালাসে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

জ্বালানি তেল খালাসে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানি করা জ্বালানি জাহাজ থেকে তেল গভীর সমুদ্রে খালাসের বিষয়ে বড় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্রে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের বড় সিংহভাগ অর্থ দেবে চীন। এতে জাহাজ থেকে তেল খালাসের সময় ও খরচ কমে আসবে। এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রবিবার শেরে-বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও চীনের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে এই চুক্তি হবে। এ প্রসঙ্গে ইআরডির উপ-সচিব মতিউর রহমান বলেন, গত বছর অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরে ২৪ বিলিয়ন ডলারে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক এ প্রকল্প তারই একটি। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ডলার। নতুন সিঙ্গেল মুরিং হলে ৪৮ ঘণ্টায় এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত এবং ২৮ ঘণ্টায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল খালাস করা যাবে। এর বার্ষিক খালাসের ক্ষমতা হবে ৯০ লাখ মেট্রিক টন। জানা গেছে, এ চুক্তির আওতায় চীন ৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার দেবে নমনীয় সুদের ঋণ হিসেবে। বাকি ৪৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার পাওয়া যাবে সরবরাহ ঋণ (প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট) হিসেবে। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে ২.২৫ শতাংশ হারে সুদসহ ওই ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারবে বাংলাদেশ। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তেল খালাস বাবদ বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে সরকার। মতিউর রহমান বলেন, আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের কাজে শৃঙ্খলা এনে সময় ও খরচ কমাতে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বিদেশ থেকে কিনে আনা তেল জাহাজ থেকে সরাসরি ইস্টার্ন রিফাইনারির ডিপোতে খালাস করা যায় না। জানা গেছে, বন্দরের গভীরতা কম হওয়ায় তেলের ট্যাংকারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে। সেখান থেকে তেল খালাস করে ছোট জাহাজে (লাইটার) করে নেওয়া হয় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এ প্রক্রিয়ায় একটি ট্যাংকার থেকে তেল খালাস করতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যায়। আর অতিরিক্ত সময়ের জন্য সরকারকে জরিমানা গুণতে হয় জাহাজ কোম্পানিগুলোর কাছে। জানা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে একটি লোডিং বয়া নির্মাণ করা হবে। মাদার ভেসেল থেকে সেই লোডিং বয়ারের মাধ্যমে তেল খালাস করে পাইপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে শোধনাগারে। এই মুরিংয়ে দুটি পাইপ লাইন থাকবে। একটিতে পরিশোধিত তেল আসবে, আরেকটির মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত গভীর সমুদ্রে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণের এই প্রকল্প ২০১০ সালে একনেকের অনুমোদন পেলেও অর্থ সংস্থান না হওয়ায় তা ঝুলে যায়। গত বছর চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে অর্থায়নের বিষয়ে সমঝোতা হলে প্রকল্পটি আবার গতি পায়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত বছর ৮ ডিসেম্বর চায়না পেট্রোলিয়াম ব্যুরো ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) মধ্যে চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, চায়না পেট্রোলিয়াম ব্যুরো ২০১৮ সালের মধ্যে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণ করবে এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন বসাবে। কক্সাবাজারের মহেশখালী এলাকায় স্টোরেজ ট্যাংক ও পাম্প স্টেশনও স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার। এ কোম্পানি বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল শোধন করতে পারে। বর্তমানে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়।
×