ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ দিনেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা

ইসলামী ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন দরকার

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

ইসলামী ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন দরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু হয়েছে বহু আগে। কিন্তু এর পূর্ণাঙ্গ কোন নীতিমালা নেই। আশির দশকে চালু হওয়া ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য ২০০৯ একটি সার্কুলার জারি করা হয়। শোষণমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অন্যতম লক্ষ্য। তবে বৈশি^ক পদ্ধতিগত কারণে সাধারণ ব্যাংকের মতো ইসলামী ব্যাংকগুলোও পুঁজিবাদীদের অর্থায়ন করছে। দীর্ঘদিন নীতিমালার অনুপস্থিতিতে অনেক লুটপাট হয়ে যেতে পারত, কিন্তু সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা এবং কর্মকর্তারা নিজ থেকে সৎ হওয়ায় সে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা। এ থেকে বের হতে হলে ইসলামী ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন করতে হবে। শনিবার সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ (সিএসবিআইবি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন বক্তারা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএসবিআইবির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এম আযীযুল হক বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানতকারী হবেন সম্পদের মালিক। তবে বর্তমান বৈশি^ক ব্যবস্থায় সঞ্চয়কারীর সম্পদ নেই। আর যারা সম্পদের মালিক তাদের সঞ্চয় নেই, ঋণের টাকায় তারা সম্পদশালী। বৈশ্বিক এই পদ্ধতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলোও পুঁজিবাদীদেরই অর্থায়ন করছে। এ অবস্থার উন্নয়নে আলাদা আইন করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের যাত্রার প্রথম ২৫ বছর আলাদা কোন নীতিমালা ছিল না। ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে পরিচালিত হয়েছে। এখন আলাদা আইন করার সময় এসেছে। তিনি বলেন, বিশে^ তিন ধরনের ধারণা থেকে ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালিত হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো ধর্মীয় কারণে সুদ পরিহার করতে ইসলামী ব্যাংকিং করছে। পশ্চিমারা পদ্ধতিগত কারণে ইসলামী ব্যাংকিং করছে। আরেকটি পক্ষ ইসলামী ব্যাংকিংকে বিশেষ রাজনৈতিক দলের এজেন্ড মনে করে এটাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। তবে প্রকৃত পক্ষে সামজিক বৈষম্য দূর করা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আল্লাহ সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে কখনও কখনও ভুল ত্রুটি হয়ে যায়। তা সংশোধনের জন্যই সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং আমরা বাংলাদেশে সত্যিকার ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, সামাজিক বৈষম্য দূর করা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য। তবে কোন দেশে ততক্ষণ পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং সম্ভব না যতক্ষণ অন্য ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়াহ পালন হবে। তিনি বলেন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ধারণা থেকে ইসলামী ব্যাংকিং এসেছে। এক কোটি টাকার একটি বাড়ি দেখিয়ে ১০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ ইসলামী ব্যাংকিংয়ে নেই। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে দেশীয় উদ্যোক্তাদের শেয়ারের বেশিরভাগই মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষের লোকজনের ছিল বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাকক্ষে ‘ইসলামী ব্যাংকিং শিল্পের অগ্রগতিতে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীষক মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন সিএসবিআইবির সেক্রেটারি জেনারেল এ কিউ এম ছফিউল্লাহ আরিফ। সভা শেষে সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ডের পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল একিউএম ছফিউল্লাহ আরিফ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উপস্থিত সবাইকে কোরানের আয়াত লিখিত একটি নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি ও মিরাজ রহমান রচিত ‘হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতা’ নামক সাড়া জাগানো গ্রন্থটি উপহার প্রদান করা হয়।
×