ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার নেবেন জাপানের থার্লো

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার নেবেন জাপানের থার্লো

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম যখন আনবিক বোমা বর্ষণ করে তখন ১৩ বছরের কিশোরী সেতসুকো থার্লো বোমা ফেলার স্থানটি থেকে মাত্র ১ মাইল দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই বিভীষিকাপূর্ণ দিনটির ৬২ বছরের বেশি সময় পর সেতসুকো এ বছরের নোবেল লরেট আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিলোপ প্রচার সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু এবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস-আইসিএএন) সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করবেন। তিনি সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বোমা বর্ষণ পরবর্তী পরিস্থিতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মনে আছে, তখন একটা নীলাভ-সাদা আলোর ঝলকানি হয়েছিল। আমি শূন্যে নিক্ষিপ্ত হই এবং এক ধরনের ভাসমান অনুভূতিরোধ করি। থার্লো অকস্মাৎ নিজেকে কয়েক ডজন লোকের সঙ্গে একটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচে দেখতে পান। এক আগন্তুক সে ধ্বংসস্তূপ থেকে তাকে টেনে তোলেন। তিনি বলেন, আমি শহরটির যে অবস্থা দেখেছি তার বর্ণনা প্রায় অসম্ভব। হিরোশিমায় তখন সকাল সোয়া আটটা এবং সূর্য উঠেছে প্রায় দু’ঘণ্টা আগে। কিন্তু অন্ধকারে ধ্বংসাবশেষ ঢাকা পড়ে গেছে। থার্লো বলেন, মনে হয়েছে সকাল যেন রাতে পরিণত হয়েছে। বিস্ফোরণে সৃষ্ট ব্যাঙের ছাতার ধুলো, মাটি, কাদা ও কনিকায় সূর্যরশ্মি ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে এক আতঙ্কজনক অবস্থা। তীব্র যন্ত্রণায় আর্তনাদ বা দৌড়াতে পারছিল না কেউ। যারা তখনও বেঁচে তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তি ছিল না। যারা যেখানে জড়ো হতে পেরেছিল তারা সবাই মূর্ছা বা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল, কথা বলছিল ফিসফিস করে এবং পানি খেতে চাইছিল। থার্লো বলেন, তিনি আশপাশে তাকালেন। দেখলেন, হাজার হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে এবং শরীর ফুলে উঠেছে। তাদের আর মানুষের মতো মনে হচ্ছিল না। ১৩ বছর বয়সের স্কুলছাত্রী হিসেবে আমি আমার শহরের ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছি। এটি এক মৃত শহরে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট ঐ আনবিক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। এর তিনদিন পর যুক্তরাষ্ট্র আরও একটি আনবিক বোমা ফেলে নাগাসাকি শহরে এবং সে সময় নিহত হয় আরও ৮০ হাজার মানুষ। থার্লোর বয়স এখন ৮৫ বছর। বাস করছেন তিনি কানডায়। তিনি সেদিনের পরিস্থিতির কথা বলেন স্কুলে পড়ুয়া শিশুদের ও কূটনীতিবিদদের কাছে। উদ্দেশ্য, পরমাণু যুদ্ধের আতঙ্কের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে তোলা। তার প্রত্যাশা, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ করা। আইসিএএন ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর সংস্থাটিতে তিনি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বিষয়ে জাতিসংঘের আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি এবং ঐ আলোচনার পর জুলাইতে স্বাক্ষরিত হয় পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি। গ্রুপটি এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। থার্লো বলেন, এ বেদনাদায়ক স্মৃতি আমার মনে গেঁথে রেখেছি যাতে যাদের এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখার অভিজ্ঞতা নেই তাদের কাছে প্রকাশ করতে পারি। অনেকের জন্য তা উপলব্ধি করা কঠিন। কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা আমাদের সামর্থ্যটুকু কাজে লাগাব যে বিভীষিকাকে উপলব্ধি করতে এবং একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামাতে সমর্থ হবো। তিনি অনুতাপ করে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ১৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে যদিও ১৯৮০’র দশকে অস্ত্র ও গোলাবারুদে কারখানার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন আরও বিপজ্জনক স্থান হয়ে উঠেছে। তিনি যুদ্ধ হুমকি ও ব্যক্তিগতভাবে পরস্পরের উপহাসের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করেন এবং জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর না করায় কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তিরস্কৃত করেন। এএফপি
×