ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাতালান মন্ত্রিসভা বরখাস্ত

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

কাতালান মন্ত্রিসভা বরখাস্ত

স্বায়ত্তশাসিত কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপটে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় সেখানে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন জারি করেছেন। শনিবার বার্সিলোনার স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদের অধীনস্ত নাগরিক হিসেবে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। কাতালোনিয়ার আইন প্রণেতারা স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর সেখানকার এবং পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। মারিয়ানো রাহয় বলেন, কাতালোনিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরাসরি হস্তক্ষেপের বিকল্প নেই। স্পেন সরকারকে খুবই দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ইতোমধ্যে কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনী মোসুজ দ্য ইসকোয়াদ্রার প্রধান জোসেফ লুইস ট্রাপেরো বরখাস্ত হয়েছেন। এর আগে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, স্পেন এ অঞ্চলকে সবচেয়ে মারাত্মক রাজনৈতিক সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সঙ্কট নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধিতে ইউরোপ নতুন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্পেন থেকে ইউরোপে ক্রমাগত বিপদ সঙ্কেত পাঠানো হয়েছে। মারিয়ানো রাহয় অবশ্য আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ২১ ডিসেম্বর কাতালোনিয়ায় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। অঞ্চলটির বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন কিনা, সবার দৃষ্টি এখন সেই দিকে। মাদ্রিদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরুদ্ধে সেখানকার স্বাধীনতা সমর্থকরাও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছেন। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার বিরুদ্ধে শনিবার মাদ্রিদের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মতে, কোন ধরনের বৈধ কারণ ছাড়াই স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা এ অঞ্চলকে গভীর সঙ্কটে ফেলতে যাচ্ছে। স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাতালোনিয়ার মানুষ গত ১ অক্টোবর যে গণভোটে অংশ নেয়, সেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে পড়ে বলে কাতালান সরকারের ভাষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বার্সিলোনায় কাতালান পার্লামেন্টের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভোটাভুটি হয় এবং বিরোধীদের বয়কটের মধ্যে ৭০-১০ ভোটে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মাদ্রিদে স্প্যানিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট কাতালোনিয়ায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে আনার প্রস্তাব পাস করে। মাদ্রিদ ও বার্সিলোনার এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান সার্বিক পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে গেছে; আর স্পেন গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় কঠিন রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। গণভোটের পর একমাস ধরে অচলাবস্থার মধ্যে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য কাতালোনিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছিল। আবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে বিলম্বের কারণে ভেতরের চাপও সামাল দিতে হচ্ছিল কাতালান সরকারকে। এ অবস্থায় কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদামন স্বাধীনতা বা আগাম নির্বাচনের ঘোষণা না দিয়ে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার ছেড়ে দেন পার্লামেন্টের ওপর। শুক্রবার বিকেলে বার্সিলোনায় যখন এই ভোটাভুটি চলছে, দুই হাজারের বেশি মানুষ তখন পার্লামেন্টের বাইরে পার্কে জড়ো হয়ে গাইছিলেন কাতালোনিয়ার জাতীয় সংগীত ‘এলস সেগাদোরস’। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রশ্নে পার্লামেন্টে আবেগময় বিতর্কের এক পর্যায়ে সোশালিস্ট পার্টি, পিপলস পার্টি ও সিউদাদানোসের সদস্যরা ভোট বয়কট করে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। ১৩৫ সদস্যের পার্লামেন্টে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেন ৭০ জন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ১০টি। আর দুইজন খালি ব্যালট জমা দেন। এর মধ্য দিয়ে স্পেনের হাত থেকে কাতালোনিয়ার প্রশাসনিক ও আইনী নিয়ন্ত্রণ স্বাধীন রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত করার রায় দেয় পার্লামেন্ট। এতে উল্লাসে ফেটে পড়ে বাইরে অপেক্ষমান জনতা। আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে এক নারী বলেন, আমরা বঞ্চিত হয়েছি, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি। শেষ পর্যন্ত আজ আমরা মুক্ত। কাতালান নেতা পুজদামন ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু এর পরপরই মাদ্রিদ থেকে কাতালোনিয়ায় কেন্দ্রের শাসন জারির খবর আসে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো স্পেনের পক্ষ নিয়ে জানায়, কাতালোনিয়ায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তারা স্বীকৃতি দেবেনা। ইউরোপের সব বড় বড় শক্তি স্পেনের অখ-তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। ব্রিটেন বলেছে, স্পেনের অখ-তা অটুট থাকুক এবং তাদের সংবিধান সমুন্নত থাকুক এটাই তাদের প্রত্যাশা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের মুখপাত্র বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করতে আয়োজিত গণভোট পুরোপুরি অবৈধ। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, কাতালোনিয়া স্পেনের অখ- অংশ। তবে বিদেশী বড় কোন শক্তির সমর্থন না পেলেও স্বাধীনতার দাবিতে অনড় রয়েছে কাতালোনিয়ার বড় একটি অংশ। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জাঁ-ক্লদ জাঙ্কার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর কোন ভাঙ্গন চায় না।
×