ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির জটিলতা ও সরকারী দলের কর্তব্যবোধ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

বিএনপির জটিলতা ও সরকারী দলের কর্তব্যবোধ

খালেদা জিয়া সক্রিয় হচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে যাচ্ছেন এমন খবর দেখলাম। দেশে একটি স্বাভাবিক রাজনীতির আবহ গড়ে উঠুক আমরা সবাই তা চাই। কিন্তু আমাদের মনে যেসব প্রশ্ন আটকে আছে যেসব তথ্য আমরা এখনও মীমাংসিত দেখিনি সেগুলো ঝুলিয়ে রেখে কিভাবে আমরা তা আশা করব? যারা মনে করেন আমরা সত্য লিখলেই বিএনপির বিরুদ্ধে যায় তাদের বলি, সে জায়গাটা তৈরি হয়েছে তাদের আচরণের কারণেই। বাংলাদেশে বিএনপি আমলে যৌবনের শুরু, পরে খালেদা জিয়ার শাসনে কেটেছে অনেক বছর। সবসময় যে অশান্তি আর উত্তেজনা সেটা ভুলি কি করে? সেনা ছাউনি থেকে আসা দল বলছে তারাই নাকি গণতন্ত্রের মালিক। গোড়াতে বলে রাখি এই দলটির যা কিছু অর্জন বা শাসনের জৌলুস তার পেছনে ছিল এককালে মুসলিম লীগ করা নেতারা। ভাসানী ন্যাপ ও মুসলিম লীগ নেতারা আওয়ামী বিরোধী। তাদের সে দলে যাবার সুযোগ ছিল না। আদর্শিকভাবে তারা বাংলাদেশ চায়নি। যখন এ দেশ স্বাধীন হলো রাজাকাররা নেমেছিল প্রতিশোধ নিতে। আর এরা চাইলেন দেশের শাসনভার হাতে নিতে। এরা না থাকলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এতটা আসতে পারত না। আমরা মানি বা না মানি তাদের কারণে বিএনপির ভাল দিকগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছিল। আওয়ামী লীগের বিকল্প বানানোর ধান্দা আর মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকারের প্রবণতা সঙ্গে জামায়াত মিলে তাদের কফিনে পেরেক ঠুকছিল তখন থেকে। শেষে শেষ পেরেকটি মারলেন তারেক জিয়া। ঢাকার রাজপথে গ্রেনেড হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা আর বাবরের মতো অর্বাচীনকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দেয়া বিএনপি অজান্তে কবরে ঢুকছিল তখন থেকেই। তারপর আগুন সন্ত্রাস আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। একদা প্রতাপশালী খালেদা জিয়া ভেবেছিলেন তিনি মাটির ওপরে থাকা নেতা। কেউ তাঁকে সরাতে পারবে না। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতা কি বলে? তবে এর সঙ্গে এটাও বলতে হবে জামাতের যেসব নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত হয়ে সাজা পেলেন তাদের সাজার সময় ও বিএনপি চেয়েছিল যেনতেন প্রকারে সরকারের পতন ঘটাতে। শেখ হাসিনার অদম্য সাহস আর অকুতোভয় নেতৃত্বে সম্ভব হয়নি বলে আমরা খালেদা জিয়ার কণ্ঠে গ্রাম্য ঝগড়ার অডিও শুনেছি। সে ভাষা আর যাই হোক কোন নেতার হতে পারে না। সব মিলিয়ে শঙ্কিত হবার কারণ থেকে যায় বৈকি! খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের আগমন ও আলাপের কালে কি করলেন কি বললেন বা কি শুনেছিলেন? সে কথা আমরা হলফ করে বলতে পারি না। তবে তারা যে ভরসা পাননি সেটা তাদের মহাসচিবের বয়ানেই স্পষ্ট। মির্জা ফখরুল যে সব সময় সত্য বলেন তেমনটা না হলেও তাঁর কথায় মাঝে মাঝে আমরা এমন সব তথ্য পাই যাতে বোঝা যায় আসলে কি হচ্ছে! বিএনপি নেতা মীর্জা ফখরুল ইসলামের এবারের বোধোদয় আমার ভাল লেগেছে। দেখলাম তিনি বলেছেন, কেউ আমাদের এসে গদিতে বসিয়ে দেবে না। জী না। কেউ দেবে না। তবে আপনার কথাতে এটা স্পষ্ট আপনারা সেটা মনে করেছিলেন বা ভেবেছিলেন। এখন আশাভঙ্গের বেদনায় বলছেন হক কথা। এই হক কথাটা এলো ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সফরের পর। যে কোন কারণেই হোক আমাদের রাজনীতি পরনির্ভর। এখনও স্বাবলম্বী হয়নি রাজনীতি। পাশে একটা বড় দেশ থাকলেই ঘাড়ের ওপর হাত রাখবে এটা কোন যুক্তিতে টেকে না। তারপর ও চলছে সে আদি ও অকৃত্রিম খেলা। বিএনপি কে একসময় ভারতবিরোধী রাজনীতি গদিতে আনলেও এখন আর তা কাজ করছে না। করছে না বলেই তাদের মতো শক্তিশালী দল ও কি করবে ঠিক করতে পারে না। এই কয়েক বছর আগেও খালেদা জিয়া বাংলাদেশ সফররত ভারতের বাঙালী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে দেখা করেননি। এই আপোসহীনতার মনোভাব পরিহার করে শেষ পর্যন্ত সুষমার সঙ্গে যেচে দেখা করা। আর পরিণাম? এখন কত কিছু যে রটে! আমরা তা বিশ্বাস করতে চাই না। শুধু এটুকু বলি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দেশের মানুষের মনের রাজনীতি করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সেটা ভারত বা আমেরিকা এসে করে দেবে না। কে না জানে আপনাদের কারণে আজ দেশের মানুষের মনে রাজনীতি বলে কিছু নেই। ভাল করে ভেবে দেখুন। মানুষ কি আসলে খুব ভাল আছে? বাজারে আগুন নেতাদের হামবড়া ভাব অশান্তি মিলে এক অন্যরকম পরিবেশ। তারপর ও মানুষ কেন আপনাদের হয়ে মাঠে নামছে না? কারণ আপনারা এলে এই পরিবেশ কেমন হবে সেটাই তারা বুঝতে পারে না। বিগত আমলে একের পর এক কুকর্ম আর দেশে পাকি রাজনীতির আবহ রেখে রাজাকার বিএনপি সন্ধী আপনাদের বেশ কিছুকাল গদিতে রাখলেও এখন আর তা সম্ভব নয়। যাই বলেন শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় আপনাদের মাজা বা কোমর ভেঙ্গে গেছে। সেখান থেকে সোজা হতে চাইলে ভারতীয় ক্র্যাচে কাজ হবে না। জনাব ফখরুল আপনি মাঝে মাঝে বেকায়দায় পড়ে যে সব সত্য বলেন সেগুলো কাজে লাগলে আপনাদের মঙ্গল হতো। সঙ্গে দেশেরও। সে কাজ বাদ দিয়ে লন্ডনের ষড়যন্ত্র বা বদ খোয়াবে আর মনে হয় কাজ হবে না। দেখুন তো এই যে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এলেন আমাদের কত চাপ কত উত্তেজনা। আপনারা ভাবছেন আওয়ামী লীগ কি আবার সরকার পরিচালনার গ্যারান্টি পেল? ওরা ভাবছে আপনারা কি কোন নিশ্চয়তা পেলেন? আর এদিকে আমাদের সমস্যাগুলো ডুবে থাকল তিস্তার আধো পানিতে। সে কারণেই বলি- ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। আমাদের মতে এবারও আপনারা তেমন কিছু পাননি। দেশও না। তাই আপনাদের উচিত স্বাভাবিকতায় ফিরে আসা। সরকারী দলের শত নিন্দার পর ও মানতে হবে তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশ বঙ্গবন্ধু আর জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে আপোসহীন হবার শপথ করে যারা রাজনীতি করবে সামনের সময় মনে হয় তাদের। আর নয়তো কখন যে মৌলবাদ সবাইকে ফেলে রেইসে এক নাম্বার হয়ে যাবে কেউ টের পাবেন না। সরকারী দলের নেতাদের আত্মতুষ্টি বা ভাগ করে নেয়ার প্রবণতা গেল না। আর কত পেলে বা বদলালে ভাগ্য বদলায় কে জানে। তাদের মনে রাখা উচিত রোহিঙ্গা সমস্যা এখন প্রকট। গোড়াতে ধর্ম সম্প্রদায় বা অন্ধত্বে যেসব ভালবাসা ছিল এখন তা ফিকে হতে শুরু করেছে। এখন মানুষ তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছে। শুরু হয়েছে মারামারি। এর মানে সমস্যা আরও জটিল হবে। সু চির সঙ্গে বৈঠক করলেই যদি ফল মিলত এত এত রোহিঙ্গাকে তারা জোর করে পাঠাত? আছে চড়া বাজার নিয়ে ক্ষোভ। মানুষ মনে মনে রেগে থাকলেও নানা কারণে মুখ খুলছে না। এই সেদিন এম কে আনোয়ারের জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছিল। এ শ্রদ্ধা বা ভালবাসা সমর্থনের প্রকাশ বৈকি। সরকারী প্রচারের সবকিছু এ দেশের মানুষ কোনদিন ও একতরফা বিশ্বাস করেনি। তাই তাঁদের কাজ হবে মানুষের কাছে যাওয়া। সুষমা স্বরাজেরা বিএনপি আওয়ামী লীগ কাউকে গদিতে বসায় না। বসার পর ভালবাসা দেয়। এই কথাটা মনে রাখলেই সবার কাজগুলো গতি পাবে বলে মনে হয়।
×