ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক মানসিকতা!

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

সাম্প্রদায়িক মানসিকতা!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘আই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন সব বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যা অনভিপ্রেত। এর নেপথ্যে কোন দুরভিসন্ধি কাজ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। ইতোমধ্যে জনমনে এই প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনার ঝড় বইছে। এমন প্রশ্নের প্রতিবাদ ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। সব মিলিয়ে এটিকে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ অশান্ত করার অপপ্রয়াস বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বুধবার অনুষ্ঠিত ‘আই’ ইউনিটের দুই নম্বর সেট কোডের প্রশ্নপত্রের ৪১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?’ ৭৬ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি?’ এর চারটি বিকল্প উত্তর হিসেবে লেখা রয়েছে পবিত্র কোরআন শরিফ, পবিত্র বাইবেল, পবিত্র ইঞ্জিল ও গীতা। গীতার আগে ‘পবিত্র’ লেখা নেই। চারকলা অনুষদের অধিকর্তা (ডিন) সাংবাদিকদের কাছে সাফাই গাইতে গিয়ে বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একদিক দিয়ে এটাকে ভুল বলা যাবে না। কারণ, শিল্পকলার ধারণা আসলে তৈরি হয়েছিল ধর্মীয় চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে। সে কারণেই হয়ত এ ধরনের প্রশ্ন চলে এসেছে। কী সাংঘাতিক কথা! এ ধরনের প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও তিনি নাকচ করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের প্রশ্ন সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী এই প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সঙ্গত কারণেই এখানে যারা শিক্ষকতা করেন তাদের ওপর গুরুদায়িত্ব থাকে। এই শিক্ষকদের কাছে সমাজ সর্বোচ্চ বিবেচনাবোধ ও দায়িত্ববোধ প্রত্যাশা করে। কারণ, এই শিক্ষকরাই দেশের সেসব নাগরিককে শিক্ষাদান করে থাকেন যারা পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্তরে ও শাখায় দেশের নেতৃত্ব দেয়। সুতরাং এখানে কূপম-ূকতা, রক্ষণশীলতা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা এমনই যে, এখানে আবহমানকাল ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাগরিক সম্প্রীতির সঙ্গে সহাবস্থান করছে। এক সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসবে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়ে থাকে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই অসাম্প্রদায়িক বাণী সমাজে এখন প্রতিষ্ঠিত। এ দেশের মানুষের সর্বজনীন উৎসবে সকল ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক মনোভাব নিয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। এরকম একটি ধর্মীয় সহনশীল উদার দেশে কট্টর ধর্মীয় ভেদবুদ্ধিজাত উস্কানিদাতাদের দমন করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ, আস্তিক-নাস্তিক প্রশ্ন তুলে ইতোমধ্যে দেশের তরুণ শক্তির একাংশকে বিপন্নতার পথে ঠেলে দিয়েছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীরই উদ্দেশ্য পূরণের মিশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষক সুকৌশলে নিয়োজিত রয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমরা আশা করব, সাম্প্রদায়িক প্রশ্নপত্র রচনাকারী শিক্ষকদের অচিরেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক মনের ব্যক্তিবর্গের হাতে উচ্চ বিদ্যাপীঠের সম্ভাবনাময় তারুণ্যশক্তি যে জিম্মি থাকতে পারে না সে কথা বলাই বাহুল্য।
×