ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লোককবিদের স্মরণে ‘হাওড়পাড়ের গল্প’

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

লোককবিদের স্মরণে ‘হাওড়পাড়ের গল্প’

নিজস্ব সংবাদদাতা সুনামগঞ্জ ॥ ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা ৭টা। হঠাৎ নিভে গেল মঞ্চের আলো। শৈল্পিকভাবে সাজানো মঞ্চ থেকে ভেসে এলো সুর, ১৮ শিল্পী একসঙ্গে গাইলেন ‘মুর্শিদ ভজরে কেমনে চিনিব তোমারে’। এ গানের মাধ্যমে শুরু হয় সুরে সুরে লোকসঙ্গীতের চার কিংবদন্তি স্মরণে হাওড়পাড়ের গল্প। চারদিনব্যাপী হাওড়পাড়ের গল্প শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কবিতার দেশ, গানের দেশ নামে রয়েছে এর সুপরিচিতি। দেশের লোকসঙ্গীতের ধারায় সুনামগঞ্জের লোকজ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হাছন রাজা, রাধারমন দত্ত, দুর্বিণ শাহ ও শাহ আব্দুল করিম। বাংলার লোকসঙ্গীতের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও হাওড়পাড়ের গল্পের মধ্য দিয়ে গানে গানে স্মরণ করা হয় বাংলার চার কিংবদন্তিকে। ফসল বিপর্যয়কে কারণ দেখিয়ে ‘লোক উৎসব’ হয় ‘হাওড়পাড়ের গল্প’ নামে তবে ভিন্নতা আনতে না পারার অভিযোগ আয়োজকদের বিরুদ্ধে। এই অনুষ্ঠানটির ‘হাওড়পাড়ের গল্প’ নামকরণ করা হলেও হাওড়ের লোকসংস্কৃতির কথা উঠে আসছে না বলে মন্তব্য করেন সঙ্গীতপ্রেমী সাধারণ শ্রোতারা। এক্ষেত্রে লোকউৎসবের নামটি শুধু পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্যান্য বছর লোকউৎসব নামে যে অনুষ্ঠানগুলো হতো এ বছর সেই উৎসবই বিদ্যমান আছে। শুধু নামকরণ করা হয়েছে হাওড়পাড়ের গল্প। এর পেছনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত টাকাগুলো কাজে লাগানোর প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ বছর একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে যখন জেলার ৯০ ভাগের বেশি মানুষ অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছে সেই সময় এ ধরনের জমকালো আয়োজনকে বিপর্যস্ত কৃষকদের নিয়ে উপহাস বলে মন্তব্য করেছেন হাওড় এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী ও সাধারণ কৃষকরা। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত কণ্ঠ শিল্পী শাহাবউদ্দিন আহমদ বলেন, এতবড় আয়োজন অথচ জেলার উল্লেখযোগ্য শিল্পী ও সাংস্কৃতি ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একটি পরিবারের পরিবারতন্ত্র কায়েমে অপচেষ্টা চলছে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। এ প্রসঙ্গে শাহ আব্দুল করিমের ছেলে নুর জালাল বলেন, হাওড়পাড়ের গল্প শিরোনামে যে অনুষ্ঠানটি হয়েছে এখানে হাওরের কোন দিক ফুটে ওঠেনি। নাচ, গান আর আবৃত্তির মধ্য দিয়েই এর সীমাবদ্ধ। ফসল হারিয়ে জেলার কৃষকরা দিশেহারা। এমতাবস্থায় এই জমকালো অনুষ্ঠানটি পালন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন জেলা প্রশাসন। এছাড়াও জেলা প্রশাসন যাদের নিয়ে এমন আয়োজন করেছেন তাদের পরিবারের কাউকে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, আমি শাহ আব্দুল করিমের ছেলে। আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার পরও আমাকে মঞ্চে কোন বসার স্থান দেয়া হয়নি। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সামছুল আবেদীন বলেন, শিল্পীরা একটু অভিমানী হয়। শাহ আব্দুল করিম পুত্র একজন গীতিকার ও শিল্পী। তার অভিমানের সঙ্গে আমিও একমত। তার অভিমানে একত্মতা পোষণ করে আগামীতে আরও ভাল অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করা হবে। জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম বলেন, চার লোককবিদের পরিবার ও তাদের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনকে নিয়ে অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। শিল্পীরা তাদের মতো করে অনুষ্ঠান করবেন। শিল্পীরা স্বাধীন। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে এই অনুষ্ঠান যাতে আরও হয়। এই চার লোককবিকে নিয়ে একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও সরকারের রয়েছে বলে জানান তিনি।
×